Saturday, April 20
Shadow

করোনা দুর্যোগে টাকা বাঁচাবেন কিভাবে

টাকা বাঁচাবেন কিভাবেঅনেকেই এখন ভাবছেন, আহা! ওই দিন যদি ফ্রায়েড চিকেনটা না খেতাম, তো ঘরে আজ এক কেজি চাল থাকত, সঙ্গে আড়াইশ গ্রাম ডালও। আবার সেদিন যদি বড় আপার সঙ্গে ফোনে এক ঘণ্টা কথা না বলে মেসেঞ্জার ব্যবহার করতাম, ফোনের ৭০টা টাকা বেঁচে যেত। ৭০ টাকায় তো এখন একদিনের বাজার হয়! হিসাব করতে গেলে দেখা যাবে এমন হাজারটা আইটেম বের হবে যেটা আপনার না করলেও চলত, না খেলেও চলত না কিনলেও চলত।

সময় চলে গেছে। সামনে যে দিন পড়ে আছে, প্রস্তুতি নিন সেই দিনের। আপনি টাকা জমাতে শুরু করলে শুধু যে আপনি সমস্যামুক্ত থাকবেন তা নয়, আপনার প্রয়োজনীয় খরচের কারণে টিকে থাকবে প্রয়োজনীয় লোকগুলোও। তো সময় আর নষ্ট না হোক। সরাসরি চলে যাই টাকা বাঁচাবেন কিভাবে সে আলোচনায়।

ফোনে কথা কমান

কথায় চিড়ে ভিজে না। আর কথা কম বলতে পারলে উল্টো চিড়ে কিনতে পারবেন। একটা কিছু হলেই একশ জনকে মেসেজ আর ফোন করাটা আমাদের শুধু টাকাই নষ্ট করে না, সময়ও করে। সময়ের দাম আছে। সময়কে চাইলে অর্থে কনভার্ট করা যায়। আর একান্তই কথা বলতে হলে বুদ্ধি করে ইন্টারনেট কানেকশন নিয়ে রাউটার বা হটস্পট ব্যবহার করে সবাই মিলে মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করুন। এই দুর্যোগ আপনার খরচ আপনাকেই সামলাতে হবে, কোনো মোবাইল কোম্পানির পকেট ভারীওয়ালা লোক এসে আপনার বাজার করে দেবে না। অহেতুক কথা তাই একদমই নয়। দরকার হলে মিসকল দিয়ে বুঝিয়ে দিন, আমি ভালো আছি। এক টাকা দুই টাকাও এখন বাঁচানোর সময়।

আর যেকোনো উপলক্ষে মোবাইলে মেসেজ না দিয়ে ফ্রি ফেসবুক ব্যবহার করে বার্তা লিখে দিন। বার্তার সঙ্গে সস্তা গ্রাফিক ডিজাইন, মেমে বা এনিমেশন আজকাল আর স্মার্টনেসের পরিচয় দেয় না।

কেনার আগে দুইশ বার ভাবুন

আগে যারা একশ বার ভাবতেন এবার দুইশবার ভাবুন। জিনিসটা সত্যিই লাগবে? জিনিসটা না হলে আমার কোনো অসুখ হবে? গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট খাওয়া আদৌ জরুরি। খাওয়ার এক ঘণ্টা পর বেশি করে হালকা গরম পানি খেলেও তো গ্যাস্ট্রিক হয় না। আবার রাতের খাওয়ার পর একটুখানি হাঁটাহাঁটি করলেও তো চলে। কী দরকার ওই সব সেকলো, লোসেকটিল, ওমেপ কিংবা সার্জেলের পেছনে কাড়ি কাড়ি টাকা ঢালার? আপনার ইউরোপ আমেরিকা প্রবাসী বন্ধুবান্ধব থাকলে একটু জিজ্ঞেস করুন তো, বন্ধু তোরা কি মুড়ির মতো গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট খাস?

মুড়ির প্রসঙ্গ এসেই গেল। মুড়ির কথা বলি। এক কেজি লবণ আর কম দামি চাল ভিজিয়ে রেখে পরে বাসায় তৈরি করা যায় মুড়ি। বাজারের চেয়ে অর্ধেক খরচে পাবেন পুরোপুরি অর্গানিক মুড়ি।

সে যাকগে, এবার আসুন চালে। মোটা চাল চিকন চাল। সে এক আজগুবি চয়েস আমাদের। ভালোটা রেখে খারাপটা খাই বেশি দামে। মোটা চাল চাবাতে নাকি কষ্ট হয়! আমাদের দাঁত যেন মাখনের তৈরি। অর্ধেক দামে আসল চাল রেখে তাই আমরা অজাত-কুজাত মিনিকেট নাজিরশাইল কিনি, যেগুলো কিনা আদতে চালের নামই না! গরম গরম আউশ ধানের ভাত খেয়ে দেখুন একবার! বুঝতে পারবেন বছরের পর বছর সাদা আর চিকন চালের লোভ দেখিয়ে আপনার পকেট থেকে কত লাখ টাকা খোয়া গেছে।

অনলাইন শপিং কাকে বলে ভুলে যান। বাজারে গিয়ে ভ্যানওয়ালার কাছ থেকে ৫০ টাকা দরে টিশার্ট কিনে ফেলুন দুটো। আগের জামা কাপড় তো আছেই। নতুন গুলো ধুয়ে টুয়ে পরুন।সাবান লাগবে না সবসময়। গরম পানিতেই ভালো পরিষ্কার হয় কাপড়। আর দয়া করে মুচির কাছে যাওয়ার অভ্যাস করুন। একটা জুতো অন্তত এক বছর পরুন। আপনার অযাচিত বিলাসিতার কারণে যেন একগাদা ফ্যাশন কোম্পানি গড়ে না ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখুন। দেখলেন তো এখন আপনার ফাস্ট ফুড আর শপিং বন্ধ হওয়াতে কত লাখ মানুষ বেকার হয়ে গেল। আপনি অহেতুক কেনাকাটাগুলো না করে থাকলে এরা অন্য কিছু করতেন। খেত খামার করতেন। চাল কাটার জন্য তখন ছাত্রদল-ছাত্রলীগ লাগত না। ঢাকার বেকার রিকশাওয়ালা ও কাজের বুয়ারাই যেতেন। তাদের দুবেলা খাবার হতো, কৃষকের চিন্তাও থাকত না। আবার গ্রামের পড়ে থাকা ক্ষেতখামারগুলোও অনাবাদী থাকত না।

আহারে জং ধরা সাইকেলটা

আপনার আমার বিলাসিতার কারণে দেশে একটা বড় বেকায়দার অর্থনীতি তৈরি হয়েছে। হাজার হাজার রিকশাওয়ালা নাকি না খেয়ে আছে। আমাকে রিকশায় উঠতেই হবে কেন? এক দুই মাইল আমরা হাঁটি না কেন? বাইসাইকেল চালাতে শিখিনি কেন? সাইকেল চালালে যে হার্ট ভালো থাকে সেটা জানি না কেন? চার-পাঁচ হাজার টাকার একটা সাইকেল থাকলে যে প্রতি মাসেই কয়েক হাজার টাকা রিকশাভাড়া বাঁচে সেটা আমরা চাকরিজীবীরা জানি না কেন? আমরা তো এত গাধা নই? সমস্যা হলো চোখের দোষ। চোখের সামনে খালি রিকশা দেখলে আমাদের পা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। তো আর টাকা বাঁচাবেন কিভাবে ? একটা সাইকেল দশ মিনিট চালালেই যাওয়া যায় দুই কিলোমিটার! আর শোনা গেছে সাইকেল চালালে নাকি মনও ভালো থাকে। এক সংবাদকর্মীকে চিনি যিনি গত দুমাসে সাইকেল চালিয়ে অফিস করেছেন। বাঁচিয়ে দিয়েছেন ঝাড়া ৩ হাজার টাকা যাতায়াত খরচা! আর আপনি বসে থাকেন বাসের অপেক্ষায়।

এমনি এমনি লকডাউন 

বিশেষ জরুরি কাজ বা পর্যটনের খায়েশ না থাকলে এমনি এমনি লকডাউন মানুন। বের হওয়া মানেই কিছু না কিছু খরচ। এটা সেটা কেনা হবেই। যেটা কিনা শেষে পড়ে থাকবে অবহেলায় ঘরের কোণে কিংবা শেষে স্থান হবে ডাস্টবিনে। টাকা বাঁচাবেন কিভাবে ? স্বেচ্ছায় মাসে ৪-৫ দিন লকডাউন মেনে চলুন।

 

যা কিনতে পারেন

বারান্দায় জায়গা থাকলে একটা খোপওয়ালা খাঁচা কিনে তাতে মুরগি পালা শুরু করুন। বাচ্চা মুরগিকে বড় করুন বা ডিমপাড়া মুরগি কিনে ডিম খান। স্ত্রী কোয়েল কিনতে পারেন। বুকের কাছে ফুলের মতো ছোপ আছে এমন ৪০ দিনের কোয়েল পাখি প্রতিদিনই ডিম দেয়। ওরা খাবে ১.৫ টাকার, ডিম দেবে ৩ টাকার। মুরগির খাঁচা পরিষ্কার করতে গিয়ে ব্যায়ামও হবে আবার এসব পোষা প্রাণী মনও ভাল রাখবে। সঙ্গে বারান্দায় পুরনো তেলের কন্টেইনারে লাগিয়ে দিন কুমড়ার বীজ। অন্তত মাসের দুদিন সবজির যোগান নিজেই করুন।

 

টাকা বাঁচাবেন কিভাবে ? না কেনার তালিকায় যোগ করুন

চকোলেট, কোল্ড ড্রিংকস, নতুন জামা, জুতো, এসি, নতুন মোবাইল, ফাস্ট ফুড (বাসায় বানান), জানালার পর্দা, বেবি কর্ন বা ক্যাপসিকাম টাইপের চটকদার সবজি, বাজারের পাউরুটি, শাক (নিজে চাষ করুন বারান্দায়) ইত্যাদি।

বেশি না, এভাবে মাস তিনেক খরচে লকডাউন মেরে রাখুন। তারপর দেখুন কী ঘটে! টাকা বাঁচাবেন কিভাবে ? এটা তখন আর গুগলে খুঁজতে হবে না।

অনেক ব্যবসায়ীই কিন্তু তক্কে তক্কে বসে আছেন, লকডাউনটা যাক, তখন পচা বাসি খাবার কিংবা ডাবল ভাড়া নিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেব ক্ষণ! আপনার অভ্যাস না বদলালে কিন্তু তারাও পেয়ে বসবে। তো আজই সাইকেল বা একটা কমদামি মোটরসাইকেল কিনে ফেলুন। গণপরিবহন নিয়ে টেনশন না করলেও চলবে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের টিপস : অবশ্যই মেনে চলবেন

Respiratory physiotherapy in strengthening the respiratory system

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!