Site icon Mati News

গোলাপ গাছের রোগ ও সেগুলোর সমাধান

গোলাপ গাছের রোগ ও সেগুলোর সমাধান নিয়ে লিখেছেন কৃষিবিদ শাহ্ তাসদিকা অয়ন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে পড়াশোনা করেছেন।

শখের বাগান করেন যারা, গোলাপ তাদের প্রথম পছন্দ। গোলাপ ছাড়া বাগান যেন অসম্পূর্ণ। কিন্তু গোলাপ লাগানোর পর বাগানিরা নানা রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণের শিকার হন। অনেকে বুঝে উঠতে পারেন না, ঠিক কিভাবে গোলাপ গাছের রোগ দমন করবেন।

গোলাপ গাছের রোগ বা পোকামাকড় দমনের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাগুলো সুনির্দিষ্ট। আপনি যদি আপনার গাছের রোগটি সঠিক ভাবে নির্ণয় করে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তবে সেটি যেমন আপনার গাছকে ভালো রাখবে অন্যদিকে আপনার পরিশ্রমও লাঘব করবে।

 

গোলাপ গাছের রোগ : মিলিবাগ

এক ধরনের সাদা রঙের পোকা মিলিবাগ। গাছের চিরশত্রু এটি। কম বেশি সব গোলাপ চাষীরাই এই পোকার সাথে পরিচিত। অসংখ্য সাদা সাদা পোকা একত্রিত হয়ে গাছের পাতা বা ডালে গুচ্ছাকারে থাকে। এই পোকাগুলো একধরনের মিষ্টি রস নিঃসরণ করে যা পিঁপড়ার জন্য অতি উপাদেয়। কখনও কখনও অতিরিক্ত মিলিবাগের আক্রমণ শুটি মোল্ড ছত্রাকের আক্রমণ ঘটায় যা কিনা পুরো গাছটিকে মেরে ফেলতে পারে।

 

মিলিবাগ প্রতিকারের উপায়

 

গোলাপ গাছের রোগ : পাতাখেকো পোকা

গোলাপ গাছের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে পাতাখেকো পোকা। লাল রঙের এই পোকা পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। এরা মূলত পাতার একদম কিনার থেকে খেতে শুরু করে এবং এক পর্যায়ে পুরো পাতা ঝাঝরা করে ফেলে।

 

প্রতিকার

 

গোলাপের শত্রু ঘাসফড়িং

সোনালী বর্ণের, প্রায় আড়াই সেন্টিমিটার লম্বা এই ফড়িং। এটিও গোলাপ গাছের পাতায় আক্রমণ করে। এরা পাতার কিনারা থেকে শুরু করে শিরা-উপশিরা পর্যন্ত কেটে ফেলে। ফলে গাছ অনেক দুর্বল হয়ে পরে।

 

ঘাসফড়িং প্রতিরোধের উপায়

গোলাপের পাতার কালো দাগ রোগ

এই রোগে পাতায় কালো কালো দাগ পরে এবং কালো দাগের চারপাশে এক ধরনের হলুদ অংশ দেখা যায়। এটি একটি খুব সাধারন রোগ। এই রোগ দেখা দিলে গাছে ফুল আসার সংখ্যা হ্রাস পায় এবং অপরিণত পাতাও ঝরে পরে।

 

প্রতিকার

১) রোগাক্রান্ত পাতা ও ডাল যত দ্রুত সম্ভব অপসারণ করে ফেলতে হবে।

২) গাছের পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ সার প্রয়োগ করতে হবে।

৩) বাগানে নিয়োমিত সেচ দিতে হবে।

 

ভালো জাতের চারা রোপন করলে ও বাগান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখলে এই রোগ এড়ানো সম্ভব।

 

গোলাপের আগামরা রোগ

কখনও কখনও দেখা যায় গাছের আগা থেকে শুরু করে ক্রমশ নিচের দিকে গাছ মরে যাচ্ছে। এটি গোলাপের আগামরা রোগ। ছত্রাকের আক্রমনে এই রোগ হয় যা কিনা পুরো গাছটিকে মেরে ফেলতে পারে।

 

প্রতিকার

১) গাছে নিয়মিত ভাবে সার ও সেচ প্রদান করতে হবে।

২) গাছে নিয়মিত প্রুনিং করতে হবে।

৩) আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলার পর কাটা অংশে বোর্দো মিশ্রণ লাগাতে হবে।

৪) কপার অক্সিক্লোরাইট জাতীয় ছত্রাক নাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমনঃ প্রতি এক লিটার পানিতে সাত গ্রাম কুপ্রাভিট এর মিশ্রণ তৈরী করে গাছে স্প্রে করতে হবে।

৫) গাছে পুনরায় নতুন পাতা আসলে ব্যাভিস্টিন এক গ্রাম/ লিটার পানিতে মিশিয়ে সাত দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।

 

গোলাপের লেদা পোকা

এরা পাতা ও ফুলের কুড়িতে আক্রমণ করে। এতে ফুল কুড়িতেই বিনষ্ট হয়ে যায়।

 

প্রতিকার

১) ফেরোমন ফাঁদ এই পোকা দমনে খুবই কার্যকরি উপায়।

২) বাগানে বন্ধু পোকাদের রক্ষা করতে হবে।

৩) প্রতি এক লিটার পানিতে দশ গ্রাম তামাকের গুড়া, পাঁচ গ্রাম সাবানের গুড়া ও  পাঁচ গ্রাম নিম পাতার নির্যাসের মিশ্রণ তৈরী করে স্প্রে করতে হবে।

৪) পোকার আক্রমণ বেশি হলে এডমেয়ার ২০ এসএল ব্যবহার করতে হবে।

 

গোলাপের থ্রিপস

কচি পাতা ও ডগার রস শুষে খায় গোলাপের থ্রিপস। ফলে পাতা কুঁকড়ে যায় ও গাছ দুর্বল হয়ে পরে। বেশি আক্রমণ হলে ফুলের পাপড়িও খেয়ে ফেলে এরা।

 

প্রতিকার

১) ঘরোয়া উপায় হিসেবে শুকনো ছাঁই ছেটানো এই রোগের খুব ভালো ঔষধ।

২) অনেক জোরে পানি ছিটিয়ে থ্রিপস মেরে ফেলা যায়।

৩) হলুদ রং এর ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে।

৪) প্রতি এক লিটার পানিতে দশ গ্রাম তামাকের গুড়া, পাঁচ গ্রাম সাবানের গুড়া ও  পাঁচ গ্রাম নিম পাতার নির্যাসের মিশ্রণ তৈরী করে স্প্রে করতে হবে।

৫) সংক্রমণ বেশি হলে গেইন ২০ এসএল(প্রতি ১ লিটার পানিতে ০-২৫ মিলিলিটার হারে) ব্যবহার করতে হবে।

 

গোলাপের কুঁড়ি ছিদ্রকারী পোকা

এটি ফুলের কুঁড়ি ও ফুলের পোকা। এরা কুঁড়ি ও ফুল ছিদ্র করে ফেলে। এতে ফুলের গুনগত মান অনেক কমে যায়।

 

প্রতিকার

১) পোকা দেখা মাত্রই গাছের সেই অংশ ছেঁটে ফেলতে হবে।

২)বেশি আক্রমণ দেখা দিলে ইমিডাক্লোরপিড গ্রুপের কোন কীটনাশক অনুমোদিত ডোজে ব্যবহার করতে হবে।

৩) এছাড়া সব সময় বাগান পরিষ্কার রাখতে হবে।



গোলাপের পাতার উইভিল

এরা গাছের কচি পাতা ও আগার অংশ কেটে ফেলে যা গাছের বৃদ্ধি ব্যহত করে।

 

প্রতিকার

১) গাছের নিচের অংশ সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। পুরোনো পাতা পরে থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে।

২) এই পোকা গুলো মাটি থেকে গাছের গোড়া বেয়ে উপরে ওঠে। তাই গাছের গোড়ার অংশে মাটি থেকে ২/১ ফুট উপরে আঠালো পদার্থের আবরণ দিলে পোকা উপরে উঠতে পারে না।

৩) কার্বারিল গ্রুপের কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। নতুন পাতা বের হওয়ার পর ভিটাব্রিল বা সেভিন ১ গ্রাম/ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

৪) মাঝে মাঝে বাগানের মাটিতে চাষ দিতে হবে।

গোলাপ গাছের রোগ গুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে চাইলে বাগান পরিষ্কার রাখা ও নিয়মিত পরিচর্যা করার বিকল্প নেই।

 

Exit mobile version