Site icon Mati News

বগুড়ার সাবলা এখন কুমড়োবড়ির পল্লি

শীতের জনপ্রিয় খাবার কুমড়োবড়ি। শীতের সকালে গ্রামের অনেক বাড়ির মাচাংয়ে বা খোলা জায়গায় পাতলা কাপড়ে করে এটি বানানোর ধুম পড়ে। বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার সাবলা গ্রামেও দেখা যাবে কুমড়ো বড়ির ছড়াছড়ি। আশপাশের আরও অনেক গ্রামেও চলছে কুমড়োবড়ি তৈরির চেষ্টা। গ্রামে ঢুকলেই মনে হচ্ছে এ যেন কুমড়োবড়ির পল্লি।

বগুড়ার কুমড়োবড়ি

মাষকলাইর ডাল থেকে শুধু শীতের মৌসুমেই তৈরি হয় সুস্বাদু খাবারটি। আর তা বছরজুড়ে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। দেশব্যাপী চাহিদা ব্যাপক হওয়ায় প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন কুমড়োবড়ি। তালোড়া পৌরসভার সাবলা মহল্লার (হিন্দুপাড়া) দেড় শতাধিক হিন্দু ধর্মাবলম্বীর পরিবার শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখে কুমড়োবড়ি তৈরির এ পেশা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সাবলা ছাড়াও উপজেলার দুপচাঁচিয়া সদরের লক্ষ্মীতলা, কালীতলা, জিয়ানগর ইউনিয়নের বাঁকপাল হিন্দুপাড়া, তালোড়া ইউনিয়নের কইল, পোড়াঘাটাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কম-বেশি কুমড়োবড়ি তৈরি করা হয়।

গ্রামের গৃহবধূ শোভা রানী মোহন্ত, উপলা রানী ও রিমা মোহন্ত জানান, কুয়াশাভেজা শীতের সকালে মাষের ডালের সঙ্গে পরিপক্ব কুমড়োর রস মিশিয়ে এই বড়ি তৈরি করার কারণে এর নাম কুমড়োবড়ি। এটি তৈরিতে মাষকলাই জাঁতায় মাড়ানোর পর ঝেড়ে নিতে হয়। এরপর পানিতে ভেজানো হয় খোসা ছাড়িয়ে নিতে। ভেজা ডালের খোসা ছড়িয়ে পাটায় পিষতে হয়। এর সঙ্গে যোগ করতে হয় জিরা, কালো এলাচ ও কালজিরা বাটা। এরপর এগুলো ফেটিয়ে নরম করে পাতলা কাপড়ের ওপর গোলাকৃতির বড়ি তৈরি করা হয়। রোদে শুকাতে হয় সেগুলো।

টানা তিন দিন শুকানোর পর খাওয়ার উপযোগী হয় বড়িগুলো। সাবলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কুমড়োবড়ি তৈরির কাজ করছেন পরিবারের সদস্যরা। বগুড়া জেলাসহ রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নওগাঁ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে কুমড়োবড়ি কিনে নিয়ে যায়। এ কাজ করে সাবলার অনেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন।

জানা গেছে, সাবলার একটি পরিবার গড়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কেজি কুমড়োবড়ি তৈরি করেন। প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। মাস শেষে একেকটি পরিবারের আয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। এ হিসাবে মহল্লার দেড় শতাধিক পরিবার প্রায় এক কোটি টাকার বড়ি মাসে বিক্রি করেন। কার্তিক থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত প্রায় ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার কুমড়োবড়ি বিক্রি করেন সাবলার বাসিন্দারা।

ধীরেন চন্দ্র শীল বলেন, ‘বাপ-দাদারা এ পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। শীতের এ মৌসুমে কুমড়োবড়ি বিক্রি বেশি হয় বলে আজও আমরা ঐতিহ্য ধরে রেখেছি। মহল্লার প্রায় প্রতিটি পরিবারই এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তবে কুমড়োবড়ি তৈরির উপকরণের দাম বেড়েছে।’

তিনি জানান, গত বছর সাধারণ মানের কুমড়োবড়ি ১২০ টাকা এবং ভালো মানের কুমড়োবড়ি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন এখন তার দাম ১৫০ ও ৪০০ টাকা। মহল্লার রেখা রানী শীল বলেন, ‘গ্রামের নারীরা মধ্যরাত থেকে কুমড়োবড়ির তৈরির কাজ শুরু করেন।’

বীরু চন্দ্র শীল বলেন, ‘এ পেশায় সরকারি বা বেসরকারি পর্যায় থেকে স্বল্প সুদে ঋণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেলে আমাদের কুমড়োবড়ি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে পাঠানো সম্ভব। বড়ি বিক্রি করেই ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে পারছি। খেয়েপরে জীবনযাপন করছি।’

বগুড়ার পাইকারি ব্যবসায়ী নজমল হোসেন জানান, শীতের মৌসুমে ওই গ্রামবাসীর মূল পেশা এটি। সেখান থেকে চাহিদামাফিক সঠিক ওজন ও দামে বড়ি কিনতে পারেন। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় কুমড়োবড়ি সরবরাহ করেন।

পৌর কাউন্সিল এমরান আলী রিপু বলেন, ‘সাবলা মহল্লার দু-একজন ছাড়া সবাই অসচ্ছল। সুযোগ পেলে তাদের সাধ্যমতো সহযোগিতা করব।’

দুপচাঁচিয়া ইউএনও সুমন জিহাদী বলেন, ‘কুমড়োবড়ি তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্তরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সরকারি যেসব সুযোগ সুবিধা রয়েছে তা প্রদানের ব্যবস্থা করব। এ ছাড়াও কৃষি ঋণ কমিটির সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।’

Exit mobile version