অবৈধ অভিবাসী হলে আশ্রয়ের আবেদন করা যাবে না

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশকারী অভিবাসীদের আশ্রয়ের আবেদন এখন থেকে বিবেচনা করবে না প্রশাসন। অভিবাসীবিরোধী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গত বৃহস্পতিবার এ নতুন নিয়মের কথা জানায়। নাগরিক অধিকার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ নিয়মকে ‘অবৈধ’ অ্যাখ্যা দিয়ে এর সমালোচনা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, তাঁদের দেশের সঙ্গে থাকা মেক্সিকোর সীমান্তজুড়ে মার্কিন অভিবাসন ব্যবস্থার অস্বাভাবিক অপব্যবহার ঘটছে ‘ঐতিহাসিক কাল ধরে’। অভিবাসননীতির অপব্যবহার ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দপ্তর নতুন নিয়ম চালু করেছে। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী মনে করলে প্রেসিডেন্ট অবৈধ অভিবাসীদের প্রতিহত করতে পারবেন। নতুন অভিবাসন নিয়ম কার্যকর করার জন্য এখন শুধু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্বাক্ষরের অপেক্ষা এবং অল্প সময়ের মধ্যে তিনি স্বাক্ষর করবেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) মার্কিন প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘কোনো ব্যক্তি আশ্রয়ের আবেদন করতে চাইলে তাকে সে অনুমতি দেওয়ার সুনির্দিষ্ট বিধান যুক্তরাষ্ট্রের আইনে আছে, ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তের প্রবেশপথে (পোর্ট অব এন্ট্রিতে) থাকুক বা না থাকুক। সংস্থা বা প্রেসিডেন্টের আদেশ জারির মাধ্যমে সে অধিকারকে বাধাগ্রস্ত করাটা অবৈধ।’

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসীবিরোধী বক্তব্যকে ‘অমানবিক’ অ্যাখ্যা দিয়েছে। সংস্থার মহাসচিব কুমি নাইডু বলেন, ‘আশ্রয় কোনো পালানোর পথ নয়, প্রাণ বাঁচানোর রাস্তা।’ ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নিয়মের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এ নীতি অপ্রয়োজনে হাজার হাজার মানুষের জীবনকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।’

বিভিন্ন সংস্থা ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসীবিরোধী সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, অবৈধ অভিবাসীরা সীমান্তে সত্যিই এক সমস্যা। তাঁরা জানান, একজন ব্যক্তি কোনোভাবে একবার সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারলে আশ্রয়ের আবেদন করতে পারে। কিন্তু তাদের আবেদন আদালত পর্যন্ত গড়ানোর আগেই তারা লাপাত্তা হয়ে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দেখা যায়, এসব আবেদনের বেশির ভাগই আর নিষ্পত্তি করা যায় না।’ সব মিলিয়ে ১০ শতাংশেরও কম আশ্রয়প্রার্থীর আবেদনে সম্মতি দেওয়া হয় বলে সরকার জানায়।

সীমান্তের অবৈধ অভিবাসীদের প্রচণ্ড চাপ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন জানায়, এ বছর এরই মধ্যে চার লাখের বেশির লোকের অবৈধ প্রবেশ শনাক্ত করা হয়েছে। আর গত পাঁচ বছরে আশ্রয়ের আবেদন দুই হাজার শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের যুক্তি, প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা যেসব ব্যক্তির সত্যিই আশ্রয় দরকার, তাদের আলাদা করে খুঁজে বের করার স্বার্থে নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে।