Thursday, March 28
Shadow

ইউক্রেন যুদ্ধে কতজন মারা গেলো?

ইউক্রেনের লুহানস্ক অঞ্চলের লিসিচানস্কের একটি ভবনে রুশ বিমান হামলায় সেখানে লুকিয়ে থাকা চার জন নিহত হয়েছেন। কাছাকাছি অবস্থিত সেভেরোডোনেস্কে রুশ বাহিনীর গোলাবর্ষণের একদিনের মাথায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। ডোনেস্ক শহরের উপকণ্ঠে ইউক্রেনীয় বাহিনী বোমার আঘাতে নিহত হন এক ব্যক্তি। উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় সুমি এলাকার সাদিভস্কায় রুশ বাহিনী গুলিতে নিহত হন চার জন। জুনের একটি দিনে যারা এসব হামলায় মারা গিয়েছিল তারা সবাই বেসামরিক বলে মনে করা হয়।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে এই সংঘাতের সূচনা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। এরপর থেকে ইউক্রেনে নথিবদ্ধ নিহতের ঘটনাগুলোর মধ্যে প্রতি তিন জনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর ক্ষেত্রে এমন বক্তব্য পাওয়া গেছে। রাজনৈতিক সহিংসতা রেকর্ডকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডাটা প্রজেক্ট (এসিএলইডি) থেকে প্রাপ্ত ডাটা নিয়ে বিবিসির বিশ্লেষণে এমনটাই উঠে এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, রেকর্ডকৃত মৃত্যুর মোট সংখ্যা প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে ঢের কম হতে পারে। ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়ের তরফেই নিহতের সংখ্যা কয়েক হাজারে পৌঁছানোর দাবি করা হচ্ছে। তবে তাদের এমন দাবি স্বাধীনভাবে যাচাইয়ের সুযোগ নেই। আর এই সংখ্যা বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।

যুদ্ধের মানবিক মূল্য অনুধাবনের চেষ্টা করতে হলে জাতিসংঘ, সরকার এবং স্বাধীন পর্যবেক্ষকসহ বেশ কয়েকটি উৎসের দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

 

মানুষ কোথায় মারা যাচ্ছে?

রাশিয়ার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলোর পাশাপাশি ইউক্রেনের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলীয় এলাকাগুলোর বাসিন্দারাও চলমান সহিংসতায় বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। রুশ বাহিনীর স্থল হামলায় বড় রকমের খেসারত দিতে হয়েছে তারা।

ইউক্রেনে সশস্ত্র সংঘাত বা বিমান হামলার মতো সহিংসতার পৃথক ঘটনা এবং এসবের ঘটনাস্থল নিয়ে হিসাব রাখে এসিএলইডি। যেসব ঘটনা একবার স্থানীয় মিডিয়া এবং অংশীদার সংস্থাগুলো কর্তৃক নিশ্চিত করা হয় শুধু সেগুলোই তারা নথিভুক্ত করে। যার অর্থ দাঁড়ায়, এসিএলইডি-র পরিসংখ্যানের চেয়ে প্রাণহানির প্রকৃত সংখ্যা ঢের বেশি।

 

প্রাণহানির পরিসংখ্যান

সামগ্রিকভাবে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে একলেড ইউক্রেনে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর দিয়েছে। দক্ষিণ-পূর্বে মারিউপোল, উত্তর-পূর্বে খারকিভ এবং পূর্বে বিলোহোরিভকাতে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

এসিএলইডি-র উল্লিখিত মোট সংখ্যা থেকে বিবিসি গত জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার ৬০০ বেসামরিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা শনাক্ত করেছে, যখন জাতিসংঘ মাসের শেষ পর্যন্ত প্রায় চার হাজার ৭০০ জন নিহতের কথা নিশ্চিত করেছে।

জাতিসংঘ এবং এসিএলইডি উভয়েই বলছে, তাদের পরিসংখ্যান নিহতের প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে অনেক কম। কারণ যুদ্ধের সময় সবক্ষেত্রে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ।

জাতিসংঘ পুলিশ, হাসপাতাল বা অন্যান্য সিভিল রেকর্ড ব্যবহার করে প্রতিটি প্রাণহানির ঘটনার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চায়। কিন্তু এসিএলইডি-র ডাটায় শুধু সেই ব্যক্তিদের কথা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যারা নিশ্চিত হওয়া সুনির্দিষ্ট হামলার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। এটি মারিউপোলের মতো জায়গাগুলোতে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যেসব স্থানে আটকে থাকা অনেক বেসামরিক নাগরিক দীর্ঘ সময় ধরে অবরুদ্ধ ছিল।

ইউক্রেনে জাতিসংঘের মানবাধিকার মনিটরিং মিশনের প্রধান মাতিলদা বোগনার বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে আমাদের ধারণা, (নিশ্চিত মৃত্যু ছাড়াও) অন্তত তিন হাজার বেসামরিক নাগরিক অবরুদ্ধ বা সংঘাতকবলিত শহরগুলোতে মারা গেছে।’ এক্ষেত্রে তিনি ভিকটিমদের স্বাস্থ্যগত চাপ এবং চিকিৎসা সেবার ঘাটতির বিষয়টি উল্লেখ করেন।

 

বেসামরিকদের প্রাণহানি কেন ঘটছে?

জাতিসংঘের রিপোর্টিং এবং বিবিসি-র ডাটা বিশ্লেষণ বলছে, ইউক্রেনে বেসামরিক মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো গোলাবর্ষণ এবং বিমান হামলা। এসিএলইডি-র ডাটা বলছে, কাছাকাছি রেঞ্জে চালানো হামলায় প্রায় হাজারখানেক বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এসব প্রাণহানির একটা বড় অংশই ঘটেছে রুশ বাহিনীর কিয়েভ অবরোধের সময়।

জেনেভা কনভেনশন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের বা তাদের বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে চালানো যুদ্ধাপরাধের আওতায় পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!