প্রাচীন অনাবিষ্কৃত স্থানে ভ্রমণ -এর মাধ্যমেই কিছু রহস্যের জট খুলবে ও অপেক্ষাকৃত কম জানা ঐতিহাসিক আশ্চর্যগুলো সম্পর্কে জানা যাবে। চলুন ভ্রমণ করে আসা যাক বিস্ময়কর কিছু স্থান থেকে।
জলের ওপর ভাসমান দ্বীপপুঞ্জ, আগ্নেয় শিলার তৈরি পাতাল শহর, পাথর কেটে তৈরি প্রাগৈতিহাসিক স্থান আকারে এত বড় যে, যে কেউই অবাক বিস্ময়ে ভাববে কিভাবে এই পাথরগুলো কাটা হয়েছে এবং এখানে টেনে আনা হলো। তবে চলুন কিছু অজানাকে জানি। পৃথিবীর জানাশোনা আশ্চর্যজনক স্থান আছে অনেক। তবে আমরা আজ আপনাকে অতীতের এমন কিছু জায়গা সম্পর্কে জানাবো যেগুলো রহস্যে ঘেরা ও যার সম্পর্কে খুব কমই জানা হয়েছে।
দেরিংকিউ, তুরস্ক
একটি স্কুল, একটি ওয়াইনরি (ওয়াইন তৈরির কারখানা), আস্তাবল ও চার্চের সমন্বয়ে সাজান এই মাল্টি-লেভেল পাতাল শহরটি কাপ্পাদোকিয়ায় অবস্থিত। খ্রীষ্টপূর্ব সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ের এই শহরটি আগ্নেয় শিলার অনন্য বিন্যাসে তৈরি। শহরটিতে ভ্রমণ করলে দেখতে পাবেন প্যাসেজ, টানেল ও গলির একটি জটিল নেটওয়ার্ক। বয়সে অনেক পুরোনো হলেও শহরটি এখনও বেশ শক্ত ও ভালো অবস্থায় আছে। প্রতি বছর অসংখ্য পর্যটককে নিজে সৌন্দর্যের বন্ধনে স্বাগত জানায় এই শহর। তবে ভ্রমণ -এর সময় যারা যারা সিঁড়ি বাইতে ভয় পান তাদের জন্য সতর্কতা হচ্ছে এই শহরের মোহনীয় জটিলতার জট খুলতে অনেকগুলো সিঁড়ি বাইতে হবে।
ভ্রমণ করুন নান মাদোল, ফেডারেটেড স্টেটস অব মাইক্রোনেশিয়া
১২০০ সালের দিকে নির্মিত রহস্যজনক ভাসমান মাইক্রোনেশিয়ান শহর নান মাদোল গঠিত হয়েছে মানুষের তৈরি সারি সারি আগ্নেয় শিলা দ্বীপের মাধ্যমে। যেগুলো একটি থেকে আরেকটি সরু খালের মাধ্যমে বিভাজিত। ফিলিপাইন থেকে ৩ হাজার ৬০০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে ফনপেইতে অবস্থিত এই দ্বীপমালা সম্পর্কে অনেকেই কম জানেন। নির্মাণের পর এই দ্বীপমালার প্রতিটি দ্বীপই একটি নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহৃত হতো। যেমন, পালতোলা নৌকা তৈরি, রান্না, রোগীর সেবা। ধারণা করা হয় এগুলোর ওপর কাঠ ও পাম পাতার ছাদ ছিল।
বালবেক, লেবানন
নয় হাজার বছর আগে আত্মপ্রকাশ করা বালবেক পূর্ব লেবাননের বেকা ভ্যালিতে অবস্থিত। ফিনিশিয়ান, গ্রিক এবং রোমানদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় ভ্রমণের জায়গা ছিল। এখানে গ্রিক আসবদেবতা, ভেনাস ও জুপিটারের মন্দির থাকায় এই স্থানটি ধর্মীয় পবিত্র স্থান হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। এখানকার জুপিটারের মন্দিরে আছে বিশাল আকারের সব কোরিহেন্থিয় স্তম্ভ, ধারণা করা হয় এগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড়। জুপিটারের মন্দিরের নিম্নভাগে আছে তিনটি অতিকায় প্রাচীন পাথর বা মেগালিথ। কিভাবে এই অতিকায় পাথরগুলো এখানে আনা হয়েছে তা এখনও অসমাধিত রহস্য তবে ধারণা করা হয় প্রাচীন রোমান ক্রেনের সাহায্যে এই পাথরগুলো এখানে স্থাপন করা হয়েছিল।
নিউগ্যারেঞ্জ, কান্টি মিথ, আয়ারল্যান্ড
পাঁচ হাজার বছর আগে খ্রিষ্টপূর্ব ৩২০০ সনের দিকে নিওলিথিক সময়ের এই নিউগ্যারেঞ্জের গোলাকার গম্বুজটি দেখতে ঘসের ছাদযুক্ত ইউএফও এর মতো মনে হয়। আইরিশ লোকগাঁথায় এটাকে ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মেগালিথিক স্থাপনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এই স্থাপনাটি একের পর এক স্তরে সাজানো মাটি ও পাথর দিয়ে নির্মিত। ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ হিসেবে বিবেচিত এই স্থানটির সম্মুখে সাদা কোয়ার্টজ পাথরের বেড়া রয়েছে। নিউগ্যারেঞ্জের ভেতরকার প্যাসেজটি একের পর এক কক্ষে সজ্জিত ও ১৯ মিটার লম্বা। প্যাসেজের শেষ প্রান্তের ছোট কক্ষগুলো প্রাচীন সমাধিস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হতো বলে ধারণা করা হয়। এই প্রাচীন স্থাপনাটি নিখুঁতভাবে সময় মাপতে পারে বলে বিশ্বাস রয়েছে।
অজন্তা ও ইলোরা গুহামালা, মহারাষ্ট্র, ভারত
ইলোরা গুহামালাকে বলা হয় ভারতের পাথর কেটে তৈরি স্থাপনাগুলোর আদর্শ নিদর্শন। এই স্থানের ৩৪টি গুহাই ষষ্ঠ থেকে নবম শতাব্দী সময়কালে চরনন্দি পাহাড়ের পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ও চমকপ্রদ প্রাচীন চিত্রশিল্প ও ভাষ্কর্যের জন্য এই গুহাগুলো বিখ্যাত। এখানকার অঙ্কিত ছবিগুলো ভারতীয় প্রাচীন চিত্রশিল্পের সবচেয়ে নিখুঁত উদাহরণ বলে বিবেচনা করা হয়। সুউচ্চ ও সুদর্শন কৈলাস মন্দিরটি একটি অতিকায় পাথর খোদাই করে তৈরি করা হয়। দেড় হাজার বছর পরেও অজান্তা গুহামালা এখনও সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে। বৌদ্ধ মন্দির, মঠ, প্রার্থনা কক্ষ ও আবাসস্থান নির্মাণের লক্ষ্যে দ্বিতীয় ও সপ্তম শতকের মধ্যকার সময়কালে এই পাথরগুলোকে কাটা হয়।