Site icon Mati News

হুমায়ূন আহমেদের সেরা বই | রইল ১০টি বইয়ের রিভিউ

হুমায়ূন আহমেদের সেরা বই

হুমায়ূন আহমেদ- বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় লেখক। ১৯৪৮ সালে নেত্রকোনা জেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকাশিত বই তিন শতাধিক। ৬৩ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মারা যান তিনি। আজ রইল হুমায়ূন আহমেদের সেরা বই নিয়ে বিশেষ আয়োজন।

 

হুমায়ূন আহমেদের সেরা বই | রইল সেরা ১০

সে ও নর্তকী

হুমায়ূন আহমেদের সেরা বই গুলোর মধ্যে ‘সে ও নর্তকী’র নাম আসবেই। উপন্যাসটি স্বাতীকে নিয়ে শুরু হলেও আরও দুই চরিত্র রুবি, লিলিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তিনজনের জীবন জড়ানো হাসনাত নামের এক চিত্রকরের সঙ্গে।

স্বাতী একজন চমৎকার পরিবারের মেয়ে। ওর মা বাবা ওকে অনেক ভালবাসে। কিন্তু ও এটাকে তাদের নাটক ভাবে। ছোট থেকে তাদের ঝগড়া দেখে আসছে। বাবা মায়ের ঝগড়া কেমন প্রভাব ফেলে সন্তানের উপর তা লেখক সুন্দর ভাবে লিখেছেন। মাকে শাস্তি দিতে গিয়ে একজন ডিভোরসি চিত্রকরের সঙ্গে জড়িয়েছে।

লিলি স্বাতীর একজন কাছের বান্ধবী। তারসঙ্গে সে সবকিছু শেয়ার করে। লিলির পরিবার আবার স্বাতীর উল্টো। ওর বাবা কথায় কথায় ওর মাকে মারে। অশান্তি লেগেই থাকে। লিলির স্বপ্ন হল সে এমন বাসায় থাকবে যেখানে কোন অশান্তি নেই।

হাসনাতে ১ম স্ত্রী রুবি। রুবির হাসনাতের প্রতি অনেক অভিযোগ। যে আবেগ দিয়ে ওর ছবি আঁকে,বাস্তবে তার উল্টো।এত বছর পর ওর মেয়ে জিহানকে নিতে এসেছে।

জিহান কি যাবে তার সাথে? হাসনাত একজন চিত্রকর। একজন শিল্পীর যে আবেগ বাহিরে ফুটে ওঠে, সেইটাই হলো তার বাস্তব অনুভূতি।আসলে তা কিন্তু নয়। ভেতর আবেগটা কেউ কখনো বুঝতে পারেনি হাসনাতের। না পেরেছে রুবি,না স্বাতী।

 

তাহারা

তাহারা হুমায়ূন আহমেদের একটি সায়েন্স ফিকশন গল্প। গল্পের শুরুতে নিউরোলজির অধ্যাপক আনিসুর রহমানের কাছে জালাল নামক কাটা কাপড় ব্যবসায়ী তার ছেলেকে নিয়ে সমস্যার কথা বলতে আসেন। ছেলেটির নাম রশিদ।

একটাই সমস্যা মাথা ব্যথা করে অংক করতে গেলে। নামবিহীন, আকার ছাড়া কাল্পনিক ‘তাহারা’ তাকে অংক করতে দিলে তার এই মাথাব্যথার উৎপত্তি। যদিও আনিসুর রহমান একথা পুরোপুরি বিশ্বাস করেননি। পাই এর মান শেষ করার অংক করতে গিয়ে ছেলেটির মৃত্যু ঘটে।

 

জোছনা ও জননীর গল্প

হুমায়ূন আহমেদের সেরা বই জোছনা ও জননীর গল্প। বইটিকে শুধু উপন্যাস বললে ভুল হবে। কারন এটি উপন্যাসের থেকে আরো বেশি কিছু ধারণ করে। এর মূল বিষয় হল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। উপন্যাসটি পড়লে মুক্তিযুদ্ধ সময়কার আবহ টের পাবেন। মোহমুগ্ধ হয়ে পড়লে সেই সময়কার বাংলাদেশের পরিস্থিতি, অত্যাচার, শোষণ, অনাকাঙ্ক্ষিত দুঃখ ইত্যাদি এসবের সম্পর্কে জানতে পারবেন। তখনকার মানুষ কিভাবে দেশান্তরী হয়েছেন, রাগ, ক্ষোভ, দুঃখপ্রকাশ করেছে তা নিয়ে দারুণ এক চিত্র তুলে ধরেছেন লেখক হুমায়ূন আহমেদ।

 

দেবী

দেবী বইটি হলো কবি হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টি মিসির আলি সিরিজের বই। এটি হুমায়ূন আহমেদের একটি অনন্য উপন্যাস। দেবী বইটি ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত হয়। এর আলোকে অনেকে হয়তো চলচ্চিত্রটি দেখে ফেলেছেন। কিন্তু বইটি পড়লে আরো ভালো উপভোগ করতে পারবেন।

সাইকোলজির শিক্ষক মিসির আলি একজন অতি সাধারণ মানুষ। তিনি মানুষের মন নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেছেন। মাঝে মধ্যে অতি অলৌকিক আর অপ্রাকৃতিক জিনিস নিয়ে ব্যাখ্যার চেষ্টা করেন।

দেবী উপন্যাসটিতে রানু নামের এক নববিবাহিত মহিলার অলৌকিক শক্তি আর মানসিক সমস্যা সমাধানের জন্যে তার স্বামী আনিস মিসির আলির সরণাপন্ন হয়।কি করে রানু এই অলৌকিক ক্ষমতা পেল?এর উৎস কোথায়? এসব জানতে হলে বইটি অবশ্যই পড়ুন। এটি কোনও ভৌতিক গল্প না। তবে রাতের নির্জনে পড়লে ভয় লাগবেই।

 

বাদশার নামদার

হুমায়ূন আহমেদের সেরা বই গুলোর মধ্যে যদি শ্রেণিবিভাগ করা হয় তবে বাদশার নামদার সেরা হবে ইতিহাসনির্ভর উপন্যাস শ্রেণিতে। ইতিহাসনির্ভর বই অনেকের কাছে নিরস লাগে। তবে বাদশার নামদার পড়লে ভালো লাগবেই। কারণ ইতিহাসের সঙ্গে চিরায়ত রস মিশিয়েছেন লেখক।

উপন্যাসটির প্রধান চরিত্র মুঘল সাম্রাজ্যের সম্রাট হুমায়ুন। অন্যান্য চরিত্রকেও ভালোভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। তৎকালীন সময়ের মুঘল সাম্রাজ্যের শাসন, মুঘল সম্রাটদের খাবারের তালিকা, হুমায়ুনের জীবনযাত্রা, ন্যায়পরায়নতা, উদারতা শত্রুদের বিশ্বাসঘাতকতা ইত্যাদি উপস্থাপন করেছেন লেখক।

 

অপেক্ষা

অপেক্ষা হুমায়ূন আহমেদের লেখা আরেকটি দুর্দান্ত উপন্যাস। এই উপন্যাসে দেখা যায়, স্বামী হাসানুজ্জামান ছেলে ইমনকে নিয়ে সুরাইয়ার সুখের সংসার। সেই সংসারে নতুন অতিথি আসতে চলেছে। সংবাদটা দেওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে সুরাইয়া স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

সুরাইয়া তার দুই সন্তান ইমন ও সুপ্রভাকে নিয়ে তার বড় ভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। কিন্তু দিন দিন সুরাইয়ার অবস্থার অবনতি হয়,বাস্তব জগত থেকে যেন দূরে সরে যাচ্ছে। দুই সন্তানের প্রতিও অসহনীয় হয়ে উঠছে। সুরাইয়ার এই অপেক্ষার শেষ কোথায়? তার স্বামী কি ফিরবে?

তাছাড়া আরো কিছু চরিত্র আছে এ বইতে- মিতু, সুপ্রভাত, জামিলুর রহমান। এ ছাড়া আরো ছোট ছোট চরিত্র আছে এই উপন্যাসে। উপন্যাসটি পড়লে জীবনের কিছু কঠিন সত্য গভীরভাবে উপলব্ধি করা যায়।

 

দেয়াল

কারও মতে হুমায়ূন আহমেদের সেরা বই দেয়াল। এটি মূলত মুক্তিযুদ্ধের পরের সময়ের ঘটনাগুলো নিয়ে লেখা। মূল চরিত্র অবন্তী। মুক্তিযুদ্ধের পরের অনেক অজানা তথ্য উপন্যাসটিতে দেওয়া হয়েছে। হুমায়ূন নিজের পরিবারের কিছু উল্লেখযোগ্য সময় ও তথ্যও তুলে ধরেছেন।

 

কুদ্দুসের একদিন

কুদ্দুসের একদিন হুমায়ূন আহমেদের লিখা সায়েন্স ফিকশন গল্প। এই গল্পে কুদ্দুস একদিন হঠাৎ করে লিফট থেকে আমাদের ত্রিমাত্রিক জগত থেকে চতুর্মাত্রিক জগতে প্রবেশ করে নিজের অজান্তেই।চতুর্মাত্রিক জগতে এক মানুষের আকার, স্বচ্ছ কাঁচের অনেক অঙ্গবিশিষ্ট মানুষের সাথে পরিচিত হয়।

সে কিভাবে তাদের জগতে প্রবেশ করেছে তা জানতে চায়। কিন্তু সে তো জানে না এসবের মানে। মাত্রা ভাঙা বা পড়াশোনা সে ভালো মত শেষ করতে পারেনি, কারণ তার বাবা মারা গিয়েছিলেন অনেক ছোট থাকতে। সাপের কামড়ে।

 

জাদুকর

জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের আরেকটি সায়েন্স ফিকশন। গল্পটি এক স্কুলছাত্র ও ভিনগ্রহের অপরিচিত এক প্রাণীকে নিয়ে। বাবলু অংকে সাড়ে আট পাওয়ায় ধীরেন স্যার ওর খাতায় গরু লিখে শাস্তি দিয়েছিলেন বেঞ্চির ওপর দাঁড়া করিয়ে। আর অংকে ফেল করায় বাবার ঝাড়ি খাবার ভয়ে জাম গাছের তলায় এসে সেখানে জীবন কাটাবে বলে ঠিক করে । কিন্তু হইয়েংশুন নামে এক ভিনগ্রহের ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় ঘটে। সে তাকে আশেপাশের পোকা, পাখির কথার অনুবাদ ও মানুষের বর্ণনা দেয়। শুনে বাবলু অনুপ্রেরণা পায় পড়াশোনার। বাবার ও ধীরেন স্যারের মনের কথা ও বাইরের আচরণের মর্ম ও বুঝতে পারে।

এই ফিকশনে লেখক কোনো কিছু ব্যর্থ নয় জীবনে তা এই গল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন।

 

বহুব্রীহি

বহুব্রীহি হুমায়ূন আহমেদের লেখা একটি ক্লাসিক বই। এর প্রধান চরিত্র সবে ওকালতি থেকে অবসর নিয়েছেন। তার দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে সুখের সংসার। হঠাৎ তিনি ইলিশ মাছের সংকট নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। ভাবেন ইলিশ মাছ অদূর ভবিষ্যতে জাদুঘরে চলে যাবে।

তাই তিনি অনেক চিন্তা-ভাবনার পর এক প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছে এক বছরের জন্য ইলিশ মাছ খাওয়া বন্ধের মতামত দেন। এতে করে বহু বছরের ইলিশ সংস্থান হয়ে যাবে। বহুব্রীহি নামে হুমায়ূনের জনপ্রিয় একটি ধারাবাহিকও আছে। যা ইউটিউবে দেখা যাবে।

 

হুমায়ূন আহমেদের সেরা বই নিয়ে লিখেছেন ইসরাত জাহান স্বর্ণা।

 

আরও পড়ুন: ধ্রুব নীলের গল্প – ক্লেপটোম্যানিয়া

Exit mobile version