Site icon Mati News

জাফর ইকবালের বই | সেরা পাঁচটি বইয়ের রিভিউ

স্যার মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত ও জনপ্রিয় লেখক হবার পাশাপাশি তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী, কলামিস্ট, গল্পকার, ঔপন্যাসিক। জাফর ইকবাল সব বয়সী মানুষের কাছে এক জনপ্রিয় নাম। জাফর ইকবালের বই শিশু-কিশোরদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে এক নতুন জগতের সঙ্গে।

প্রতি বছর-ই নতুন নতুন গল্প নিয়ে হাজির হন জাফর ইকবাল। বেশিরভাগ গল্পই বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নির্ভর। এছাড়াও তিনি মুক্তিযুদ্ধ, গণিত অলিম্পিয়াড নিয়ে লিখে থাকেন।

এখানে আমরা জাফর ইকবালের লেখা সেরা পাঁচ বইয়ের কাহিনি জানতে পারব।

জাফর ইকবালের বই

জাফর ইকবালের বই : দীপু নাম্বার টু

মুহাম্মদ জাফর ইকবালের সেরা পাঁচটি বইয়ের লিস্টে প্রথম নাম্বারে আছে দীপু নাম্বার টু।এটি জাফর ইকবালের লেখা অন্যতম শ্রেষ্ঠ কিশোর উপন্যাস। উপন্যাসটি ১৯৮৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হলে জনপ্রিয় হতে থাকে। এই বই অবলম্বনে নির্মাণ করা হয়েছে একটি চলচ্চিত্রও। উপন্যাসের কাহিনি অনুসারে দীপুর পরিবারের সদস্য সংখ্যা দুইজন। একজন সে আর একজন তার বাবা, দীপু জানে তার বাবা বেঁচে নেই, আবার এদিক দিয়ে দীপুর বাবার স্বভাব খুব ভিন্ন, কোন জায়গায় দীর্ঘ সময় সে থাকতে পারেন না। প্রতি বছর-ই দীপুর বাবা নতুন নতুন জায়গায় বদলি হয়, যার ফলে দীপুকেও তার বাবার সাথে যেতে হয়৷ ভর্তি হতে হয় নতুন স্কুলে, এমনি করেই নতুন স্কুলে ক্লাস এইটে ভর্তি হয় দীপু। উপন্যাসের ঘটনা অনুসারে দীপু ও তার সহপাঠি তারিকের মাঝে গড়ে ওঠে গভীর বন্ধুত্ব। এক পর্যায়ে দীপু জানতে পারে ওর মায়ের কথা। জানতে পারে, বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে বহুদিন আগে আমেরিকা চলে গিয়েছিলেন। দেশে এসেছেন কয়েক দিনের জন্য। ছেলেকে দেখতে চেয়ে বাবাকে চিঠি লিখেছেন। দীপু একা একাই মায়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য ঢাকায় যায়। মাকে পেয়ে দীপুর মধ্যে অদ্ভুত এক অনুভূতি জেগে ওঠে। তারপরও সে আবার ফিরে আসে বাবার কাছে। মা ফিরে যান আমেরিকায়। এদিকে দীপু জানতে পারে তারিকের অপ্রকৃতিস্থ মায়ের কথা। তারিকের স্বপ্ন টাকা আয় করে ওর মায়ের চিকিৎসা করাবে। এরপর শুরু হয় দুঃসাহসিক অভিযান। বুদ্ধি আর সাহস খাটিয়ে দীপু, তারিক আর ওদের বন্ধুরা দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মূর্তি পাচারকারী চক্রকে ধরিয়ে দেয়।

 

অনলাইনে জাফর ইকবালের বই

 

জাফর ইকবালের বই : আমার বন্ধু রাশেদ

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে রচিত লেখক জাফর ইকবাল স্যারের অন্যতম সেরা উপন্যাস “আমার বন্ধু রাশেদ”। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাশেদকে বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের এক প্রতীকী চিত্র হিসেবে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পূর্বে রাশেদের বন্ধুরা জানতো না দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে। কিন্তু রাশেদ তার বন্ধুদের কাছে দেশ নিয়ে আলোচনা করতো। তার বন্ধুরা অবাক হতো রাশেদ কি করে এত কিছু জানে?

রাশেদ দেশমাতৃকার টানে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বন্ধুদের উদ্ভুদ্ধ করে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য। কিন্তু উপায় খুঁজে পাচ্ছিল না তারা কী করে যুদ্ধে যাবে? কে তাদের যুদ্ধে নিয়ে যাবে আর অংশগ্রহণ করার সুযোগ দিবে?

একসময় তারা যুদ্ধে অংশ নেয়। সেখানে দেখা হয় তাদের এলাকার বড় ভাই শফিকের সাথে। সেখানে তাদের কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করা। কিন্তু একদিন অপারেশনে গিয়ে শফিক ভাই ধরা পড়ে। তবে সে যাত্রায় কোনো এক গেরিলা বাহিনীর বুদ্ধির জোরে শফিক ভাইকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। কিন্তু সবার মনে প্রশ্ন কারা এই গেরিলা বাহিনী? শফিক ভাইকে উদ্ধার করার পর এরা উধাও হয়ে যায়।

এরপর রাশেদ নিজেও অংশ নেয় যুদ্ধে। তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ইবুসহ তার পরিবার চলে যায় ভারতে। এমনকি অন্যরাও একেক জন একেক জায়গায় চলে যায়। তখন সে একাই মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করে। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতার বিপক্ষ দল পাকিস্তানিদের দোসর রাজাকারের হাতে ধরা পড়ে যায় রাশেদ।এই উপন্যাস অবলম্বনে ২০১১ সালে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ নামে একটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। তবে রাশেদের শেষ পরিণতি জানতে হলে পাঠককে বইটি পড়তে বা চলচ্চিত্র টি দেখতে হবে৷

 

জাফর ইকবালের বই : সেরিনা

এই কল্পকাহিনীর প্রধান চরিত্র সেরিনা। জন্মপরিচয়হীন সেরিনা বড় হয় ডাক্তার শামীমের কাছে বাবার স্নেহে। সেরিনার একটা অস্বাভাবিক ক্ষমতা আছে। সে পানির নিচে থাকতে থাকতে পারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। দিনের পর দিন। এক সময় ভিনদেশি স্বার্থলোভীদের চোখে পড়ে যায় সেরিনার এই অস্বাভাবিক ক্ষমতা। সেরিনাকে জানতে ও তাকে খুঁজে পেতে ভিনদেশিরা তার দেহে শক্তিশালী ইলেকট্রনিক ডিভাইস ট্রাকিওশান ঢুকিয়ে দেয়। ন্যানো প্রযুক্তিতে তৈরি ট্রাকিওশান সিরিঞ্জে করে সেরিনার শরীরের রক্তে ইনজেক্ট করে দেওয়া হয়, যা দেহের ভিতরে রক্তের সাথে মিশে যায় এবং অজ্ঞাত স্থান থেকে এক ঘণ্টা পর পর ভিনদেশিদের স্যাটেলাইটে সিগন্যাল পাঠিয়ে দিতে থাকে। ভিনদেশিদের হাত থেকে বাঁচতে সেরিনা কি তবে পানির নিচে আত্মগোপন করে থাকবে? পানির নিচে সিগন্যাল কতটুকু কাজ করবে? জানতে হলে এখনই পড়ে নিন সেরিনা।

 

আরও পড়ুন: প্রেমের গল্প : তোমার অসীমে

সায়েন্স ফিকশন গল্প : এখন কিংবা…

ধ্রুব নীলের সায়েন্স ফিকশন গল্প | একটি লম্বা সকাল

 

জাফর ইকবালের বই : আমি তপু

আমি তপু’ শীর্ষক কিশোর উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় ২০০৫ অমর একুশে বইমেলায়। এটি মূলত এক সঙ্গীহীন কিশোরের দুঃসহ জীবনের গল্প, অন্ধকার জীবন থেকে এক কিশোরের স্বপ্নের গল্প। উপন্যাসটি লেখকের জনপ্রিয় কিশোর উপন্যাসগুলোর একটি।

উপন্যাসের মূল চরিত্র আরিফুল ইসলাম তপু। সে-ই এই উপন্যাসের কথক চরিত্র। ডাকনামের মতো তার জীবনটাও খুব বেশি বড় নয়, সবেমাত্র ক্লাস এইটে পড়ে। কিন্তু এই ছোট্ট জীবনেই সে সাক্ষী হয়েছে বহু তিক্ত অভিজ্ঞতার।তপু যখন ক্লাস ফাইভে পড়তো, তখন এক ভয়ানক সড়ক দুর্ঘটনায় তার বাবার মৃত্যু হয়, অল্পের জন্য রক্ষা পায় সে নিজে। কিন্তু স্বামী হারানোর শোকে বিহ্বল তপুর মায়ের বদ্ধমূল ধারণা জন্মায় তপুই তার বাবার মৃত্যুর কারণ। ফলে তপুর সাথে তার আচরণ হয়ে পড়ে প্রচণ্ড রুক্ষ। কারণে-অকারণে তপুকে মারধর করেন, তাকে সরিয়ে দেন ঘর থেকে; ক্রমাগত ছেলেটি পেতে থাকে অনাদর, উপেক্ষা আর ঘৃণা। কাছের মানুষগুলো দূরে সরে যাওয়ার সাথে সাথে লেখাপড়ারও অবনতি ঘটতে থাকে একসময়ের দুর্দান্ত মেধাবী ছাত্র তপুর। একসময় ফার্স্ট হওয়া ছেলেটির জায়গা হয় ক্লাসের শেষ বেঞ্চে। সহপাঠী, শিক্ষকদের থেকে দূরে সরে যেতে থাকে তপু। তাদের কাছে সে পরিচিত হয় বখে যাওয়া চরম উশৃঙ্খল একটি ছেলে হিসেবে।

নিঃসঙ্গ কিশোরের এই দুঃসহ জীবনে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় নিতান্তই অপরিচিত একজন- প্রিয়াঙ্কা‌। তার স্পর্শে তপু ফিরে পায় বাঁচার আনন্দ, নতুন উৎসাহে সে আবিষ্কার করে হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য, লুকিয়ে থাকা স্বপ্নগুলো। অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্যের পর নতুন করে আলোর দিকে ছুটতে থাকে তপু।

‘আমি তপু’ নিঃসঙ্গ এই কিশোরের বেঁচে থাকার ইতিহাস!

 

জাফর ইকবালের বই : হাতকাটা রবিন

জাফর ইকবালের বইগুলোর মধ্যে রীতিমতো ইতিহাস গড়েছে বইটি। মূলত জাফর ইকবালের বই পড়ার হাতেখড়িই হয় এ বইটির মাধ্যমে।

গল্পের অন্যতম চরিত্র টোপন, যার বর্ণনায়/কথার ধারাবাহিকতায় সম্পূর্ণ গল্পটি এগিয়ে চলে। টোপনের মাধ্যমেই জানা যায় ওদের পাড়াতে থাকতে আসে ওদের-ই বয়সী একটি ছেলে – রবিন। সব বন্ধুরা অবাক হয়ে রবিন কে দেখতে থাকে কারণ রবিনের বাম হাত কনুইয়ের কাছ থেকে কাটা। রবিন-এর সাথে ওদের বন্ধুত্ত্ব গড়ে উঠতে সময় লাগে না। ফুটবল খেলা, প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সি সবকিছুই যেনো কিশোর বয়সের দূরন্তপনার সাক্ষী। কিছুদিনের মধ্যেই রবিন হয়ে ওঠে এই ক্ষুদে গোয়েন্দা গ্রুপের অন্যতম সদস্য। রবিন যেনো সবকিছুতেই একটু বেশি জেদী, যেমনঃ ফুটবলের মালিক রবিন দেখে রবিন-ই হয়ে যায় ফুটবল টিমের ক্যাপ্টেন। যদিও টিমের সবচাইতে ভালো খেলোয়াড় সলিল, ওদের-ই আরেক বন্ধু। হঠাৎ করেই টোপন, রবিনরা একদিন রাতের বেলা ডাকাত দলকে দেখে ফেলে, সাথে এটাও জেনে যায় যে দলের একজন সদস্য মারাত্মক ভাবে আহত। সেই দিন থেকেই ওরা চেষ্টা করতে থাকে কিভাবে ডাকাত দলটিকে ধরিয়ে দেবে। কিন্তু কোনোভাবেই ডাকাত দলটির কোনো খবর বের করা সম্ভব হয় না। যদিও একসময় রবিন আর বন্ধুরা ডাকাতদলটাকে খুঁজে পায়, ওরা এটাও জেনে যায় ডাকাতরা এরপর কোথায় ডাকাতি করার পরিকল্পনা করেছে। বন্ধুদের সাথে নিয়ে রবিন ঠিক করে এই ডাকাতদের ধরিয়ে দেয়ার। বন্ধুদেরকে সাথে নিয়ে রবিন তার পরিকল্পনায় সফল হতে পারে কি না সেটা জানতে পড়তে হবে হাতকাটা রবিন নামের জাফর ইকবালের বই থেকে।

 

আধিভৌতিক রহস্য থ্রিলার গল্প: পোর্ট্রেট

ধ্রুব নীলের নতুন বই | রোমান্টিক থ্রিলার- ছায়া এসে পড়ে

 

Exit mobile version