Site icon Mati News

নান্দনিক ও পরাবাস্তব মাধবকুণ্ড

যে দেশে ৮৫ শতাংশই সমতলভূমি সেদেশে ঝর্ণার খোঁজে বের হওয়ার চিন্তা খুব যে বাস্তবসম্মত তা বলা যাবে না। তবুও, এখানে খুঁজে পাওয়া যাবে শান্ত ও সৌম্য বেশ কয়েকটি জলপ্রপাত, যাদের মধ্যে মাধবকুণ্ড সবচেয়ে পরিচিত নাম।

যেভাবে যাবেন মাধবকুণ্ড

যাওয়ার জন্য সবচেয়ে সহজ জলপ্রপাতগুলোর একটি এটি, এবং এটি দেশের সবচেয়ে প্রাচীন জলপ্রপাতগুলোরও একটি। দেশের দুর্গমতর অঞ্চলে বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বিস্তর অনুসন্ধান করে আরও মনোরম ও স্নিগ্ধ জলপ্রপাত পাওয়া গেছে, কিন্তু স্থানীয় পর্যটকদের কাছে যারা বাসে চেপে সারা বছরই মাধবকুণ্ড ভ্রমণে যায় তাদের কাছে ঝর্ণাটি তার নিজের আকর্ষণ ধরে রেখেছে।
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা এলাকায় অবস্থিত এই ঝর্ণাটি সিলেট চা বাগানের ঢালু পাহাড়গুলোর একটি অংশ। ঝর্ণার ধারা তৈরি হয় পাথারিয়া পাহাড়ে, যা ২০০ ফুট উঁচু।
১৭ বছর আগে ঝর্ণার আশপাশের এলাকাকে ইকো পার্ক হিসেবে ঘোষণা করে উন্নয়ন করা হয়। এলাকার উদ্ভিদ ও প্রাণিবৈচিত্র্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে রক্ষা করতে ৫০০ একর জায়গাকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। এর ঝর্ণাধারাকে বলা হয় মাধবছড়া, একই ইকো পার্ক এলাকার মাঝে তুলনামূলক ছোট আরেকটি জলপ্রপাত আছে যার নাম পরিকুণ্ড। যদিও এটিতে জলস্রোত তৈরি হয় শুধু বর্ষার মৌসুমে। এখানে স্থানীয় আদিবাসীদের কিছু ছোট পল্লীগ্রাম আছে, বিশেষ করে খাশি আদিবাসীদের। ঝর্ণাধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আছে চলার পথ, যা কিছু কিছু স্থানে খাড়া হলেও চলার জন্য মোটামুটি নিরাপদ। কিছুটা উঁচু থেকে আশপাশের সৌন্দর্য দেখার জন্য এখানে একটি ওয়াচ টাওয়ারও আছে। ঝর্ণার পাদদেশে পৌঁছানোর পর পর্যটকরা চাইলে পানিতে নামতে পারেন এবং বিভিন্ন আকারের পাথরের চাঁইয়ের ওপর হেঁটে বেড়াতে পারেন অথবা চাইলে কেবল বসে থেকে চারপাশের নির্মল সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। যাই হোক, ঝর্ণার ঠিক নিচের অংশটা ঘেরাও করে রাখা হয়েছে কারণ সেখানকার পানি অনেক গভীর হতে পারে এবং খালি চোখে এর স্রোতের গতিও বোঝা যায় না। ইতিপূর্বের কিছু দুর্ঘটনার কারণে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের মাধবকুণ্ড ঝর্ণার পাশের পাথরের দেয়াল বেয়ে ওঠা এবং ঝর্ণার পানিতে সাঁতার কাটা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছে। আপনি চাইলে উজানের দিকে কিছুটা ভেতরে যেতে পারেন তবে আপনাকে পিচ্ছিল পাথরের বিষয়ে বেশ সতর্ক থাকতে হবে। যারা পানিতে খেলতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এখানে একটি ছোট এলাকা আছে যেখানে প্রাণি ও পাখিদের প্রতিকৃতির সঙ্গে মজার মজার ছবিও তোলার সুযোগ পাবেন। ঝর্ণার দিকে যাওয়ার হাঁটার রাস্তার ধারে একটি রেস্তরাঁও পাওয়া যাবে যা স্থানীয় পর্যটন কর্তৃপক্ষ পরিচালনা করে। পার্কের প্রবেশপথে কিছু দোকান আছে যেখানে স্থানীয় কুটিরশিল্প এবং স্মারক বিক্রি করা হয়। যদিও এখানে রাত কাটানোর জন্য তেমন ভালো কোনও স্থান নেই তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে মাধবকুণ্ড একদিনে ঘুরে দেখা যেতে পারে।

Exit mobile version