বাজারে গিয়ে রোজই ভুলে যান কিছু না কিছু আনতে? কিংবা রোজের সাংসারিক সহজ কাজেই ভুলচুক হয়ে যাচ্ছে? বয়স বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এ সব লক্ষণ যত প্রকাশ পায়, ততই ভয় পেয়ে যান সাধারণ মানুষ। বয়স বাড়লে সামান্য স্মৃতিভ্রষ্ট হলেই অ্যালঝাইমার্সের আতঙ্ক তাড়া করে অনেককে।
তবে চিকিৎসকরা আশ্বাস দিচ্ছেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বয়স বাড়ার সঙ্গে যেটুকু স্মৃতি লোপ পায়, তার জন্য দায়ী মস্তিষ্কের কিছু কোষ।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, ‘‘মোটেও সব ভুলে যাওয়া মানেই তা অ্যালঝাইমার্স নয়। বরং খুব স্বাভাবিক আর পাঁচটা স্বাভাবিক ঘটনাই এটি।’’
আরও পড়ুন: ফ্রিজ খুলে ঠান্ডা জল গলায় ঢালেন? জানেন কী বিপদ হতে পারে?
কিন্তু কেন এমন হয়?
সাধারণত, এক জন সুস্থ মানুষের মস্তিষ্ক-কোষের সংখ্যা সক্রিয় ভাবে বাড়ে ২৫ বছর পর্যন্ত। তার পর এই বৃদ্ধির গতি হ্রাস পায়। বয়স ৫৫-৬০-এর কাছাকাছি পৌঁছলে মস্তিষ্ককোষের সংখ্যা ও বৃদ্ধির গতি দুই-ই হ্রাস পেতে শুরু করে। কার ক্ষেত্রে ঠিক কোন বয়সে তা হ্রাস পাবে তা নির্ভর করে মানুষটির লাইফস্টাইল, খাওয়াদাওয়া ও শরীরের অবস্থার উপর। এই হ্রাসের কারণেই আসলে মানুষ ভুলতে বসে খুব সাধারণ ঘটনা। এর সঙ্গে অ্যালঝাইমার্সের কোনও যোগ নেই।
কোথায় ফারাক অ্যালঝাইমার্সের সঙ্গে?
অ্যালঝাইমার্সের মূল কারণ মস্তিষ্কের কোষে বিশেষ ধরনের প্রোটিন জমা হওয়া। নন এনজাইমেটিক গ্লাইকেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এই প্রোটিন জমা হয়। তবে ৫৫-৬০ বছরের আগে এই প্রক্রিয়া সাধারণত শুরু হয় না। এমনিতে মানুষের স্মৃতিকে দু’ ভাগে ভাগ করা হয়। সাম্প্রতিক স্মৃতি বা রিসেন্ট মেমোরি এবং দূরের স্মৃতি বা ডিসট্যান্ট মেমোরি।
অ্যালঝাইমার্সে এই সাম্প্রতিক স্মৃতিই আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, উল্টো দিকে দূরের স্মৃতি হয়ে ওঠে বেশি সক্রিয়। পুরো খেলাটাই ওই কোষে জমে যাওয়া প্রোটিনের জন্য হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, এই অসুখ কিছুটা বংশগত। তবে হঠাৎ কোনও ঘটনায় শক পেলে বা পরিবেশজনিত কারণেও এই অসুখ হানা দিতে পারে। বয়স বাড়লে বিশেষ করে ৬০ পেরলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে ঠিকই, কিন্তু সাধারণ ভুলে যাওয়ার প্রবণতার সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়।
সুতরাং আপনার রোজের সাধারণ ভুলে যাওয়া নিয়ে ভীত হওয়ার কোনও কারণই নেই! ভুলে যাওয়ার টেনশন ভুলে আনন্দে বাঁচুন।