এমপি মাশরাফির প্রথম ও শেষ বিশ্বকাপ

দরজায় কড়া নাড়ছে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ। ২রা জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের প্রথম ম্যাচ। দিনটি হতে যাচ্ছে ইতিহাস। এমপি মাশরাফি বিশ্বকাপ ময়দানে প্রথমবারের মতো নামবেন অধিনায়ক হিসেবে। যা ১৬ কোটি বাঙালির গর্বও বটে।
তবে বাজবে বিদায়ের সুরও। কারণ এটিই প্রিয় ‘ম্যাশ’-এর শেষ বিশ্বকাপ। এমনকি দিতে পারেন ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণাও। তিনি ৩৬ স্পর্শ করবেন এ বছর অক্টোবরেই।

এবারই প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য হন তিনি। গুঞ্জন ছিলো তখনই নেবেন খেলার মাঠ থেকে বিদায়। তবে এখনো খেলে যাচ্ছেন তিনি ওয়ানডেতে। জাতীয় দলে ২০০১-এ অভিষেকের পর থেকে কাটিয়ে দিয়েছেন ১৮ বছর। দেশকে এনে দিয়েছেন দারুণ সব সাফল্য। একের পর এক ইনজুরিও কাবু করেনি তাকে। তাই তার হাতধরে এবার বিশ্বকাপেও ভালো কিছুর আশা করছে বাংলাদেশ।

এমপি হিসেবে এটি মাশরাফির প্রথম বিশ্বকাপ হলেও দেশের হয়ে খেলবেন চতুর্থবার। সেইসঙ্গে বিশ্বকাপে নেতৃত্ব দিবেন দ্বিতীয় বার। ২০১৫’র অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপ আসরে তার নেতৃত্বে দল খেলে কোয়ার্টার ফাইনালে। যা বাংলাদেশের জন্য ছিলো বিরল সাফল্য। খেলেছেন ২০০৭ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপেও। তবে অনেক প্রাপ্তির মাঝে আছে বেদনাও। খেলতে পারেননি ২০১১ সালের ঘরের মাটির বিশ্বকাপ। ইনজুরির অযুহাতে নির্বাচকরা রাখেননি দলে। সাকিব আল হাসান ছিলেন সেবার দলের অধিনায়ক। দল থেকে বাদ পড়ায় সেদিন মাশরাফির কান্না দেশের সকল ক্রিকেট ভক্তের হৃদয় কাঁদিয়ে যায়। এখনো সেই স্মৃতি মাশরাফির জন্য শুধু কষ্টের।
তবে মনে মনে হয়তো প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। হয়তো ইনজুরির বিপক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেই যুদ্ধ জিতে মাঠে ফিরে আসেন ২০১৪ শেষদিকে। তাই একেবারে অধিনায়ক হয়ে। এরপর থেকে বদলে যায় বাংলাদেশ দলের চিত্র।  দেশে-বিদেশে একের পর এক জয় আসে তার হাত ধরেই। চ্যালেঞ্জ ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ও ২০১৯ বিশ্বকাপও সরাসরি খেলার। তার জন্য আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে থাকতে হতো ৭ নম্বরে। মাশরাফির নেতৃত্বে সেই চ্যালেঞ্জ উৎরে যায় বাংলাদেশ।
২০১০ এ নেতৃত্ব পাওয়ার পর মাত্র ১ ওয়ানডেতেই জয় পেয়েছিলেন। এরপর ইনজুরিতে ছিটকে পড়েন দল থেকে। তবে ৫ বছর আগে ফিরে আসে যেন অন্য মাশরাফি। সব মিলিয়ে ৭০ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে এনে দিয়েছেন সর্বাধিক ৪০ জয়। তার আগে ১২ অধিনায়কের মধ্যে দল দ্বিতীয় সর্বাধিক ২৯টি জয় পেয়েছে হাবিবুল বাশারের হাত ধরে। এখন পর্যন্ত দেশের হয়ে ২০৫ ওয়ানডে ম্যাচে এই পেসারের শিকার ২৫৯ উইকেট। এছাড়াও ১ ফিফটিতে করেছেন ১৭৫২ রানও।
এরই মধ্যে তাকে অধিনায়ক করে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিসিবি। তার নেতৃত্ব খেলবে আরো ১৪ ক্রিকেটার। তবে জুনের ৩০ তারিখ থেকে শুরু হতে যাওয়া বিশ্বকাপের আরেক বড় চ্যালেঞ্জ হবে বোলারদেরই। কারণ এ সময়টা ইংলিশ কন্ডিশন পুরোটাই থাকে ব্যাটসম্যানদের পক্ষে। শুধু তাই নয়, মূলত দায়িত্ব পেসারদেরই হাতে থাকবে।  যে কারণে মাশরাফির নেতৃত্বে পেস বিভাগের বোলিং আক্রমণের মূল ভরসা। তার সঙ্গে আছেন অভিজ্ঞ রুবেল হোসেন ছাড়াও তরুণ পেসার  মোস্তাফিজুর রহমান, আবু জায়েদ রাহী ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। দেখার বিষয়- ইংলিশ কন্ডিশনে মাশরাফির পেস সৈনিকরা নিতে পারে কতটা চ্যালেঞ্জ।
বিশ্বকাপমাশরাফি