মায়ের শেকড়ের খোঁজে নেদারল্যান্ডের ছাত্রী নওমি উইলেমসেন (২১) ঘুরে গেলেন জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার কাজিয়ার চর ও কাজিবাড়ি গ্রাম। তার মা লিপি বেগমকে তিন বছর বয়সে ঢাকার একটি অরফানেজ ট্রাস্ট থেকে দত্তক নিয়েছিলেন নেদারল্যান্ডের এক নাগরিক। আর নওমির জন্ম নেদারল্যান্ডে। নাড়ীর টানে শেকড়ের সন্ধানে গত বছর বাংলাদেশে এসেছিলেন নওমির মা লিপি বেগম। এবার ঘুরে গেলেন নওমি নিজেই।
বাংলাদেশে আসা এবং এসে কেমন লাগছে তা জানতে চাইলে নওমি উইলেমসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার নাম নওমি। নেদারল্যান্ড থেকে এসেছি। আমি জেনেছি যে ১৯৭৭ সালে আমার মাকে বাংলাদেশ থেকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল। এই কারণেই আমি আমার মায়ের শেকড়ের সন্ধানে আমি জামালপুরে এসেছি। আমি নেদারল্যান্ডে বেড়ে উঠেছি। বাংলাদেশ সম্পর্কে আমার তেমন জানা নেই। আমার মায়ের জন্ম স্থান বাংলাদেশে সেই কারণে আমিও বাংলাদেশের একটা অংশ। যদিও আমি প্রথমবার এখানে এসেছি তাই আমি নিজেকে খুব সুখী মনে করছি। বাংলাদেশের বিশেষ করে জামালপুরের মানুষের অনেক আতিথেয়তা পাই। তাতে আমি খুবই উৎসাহী। আমি আশাবাদী যে আমার নানি আর দুই খালাকে খুঁজে পাবই। আমি সবার সহযোগিতা চাই।’
নওমির সঙ্গে আসা ভারতের পোনের আইনজীবী অঞ্জলি পাওয়ারের কাছ থেকে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার কাজিয়ারচর গ্রাম বা কাজিরবাড়ি গ্রামের মো. আরসি শেখ মারা যান। তখন দেশে দুর্ভিক্ষ চলছিল। তার মৃত্যুর দুই মাস আগে ১৯৭৪ সালের ১২ জুন তার স্ত্রী সখিনা বেগমের গর্ভে এক কন্যাশিশু জন্ম নেয়। তার নাম রাখা হয় লিপি বেগম। কিন্তু তিন মেয়েকে লালন পালন করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ায় বিধবা সখিনা বেগম নিরুপায় হয়ে মাত্র তিন মাস বয়সী শিশু লিপি বেগমকে ঢাকায় একটি অরফানেজ ট্রাস্টে রেখে আসেন। ১৯৭৭ সালে নেদারল্যান্ডের একজন নাগরিক ঢাকার ওই অরফানেজ ট্রাস্ট থেকে তিন বছর বয়সী শিশু লিপি বেগমকে দত্তক নিয়ে যান।
পরবর্তীতে নেদারল্যান্ডের নাগরিক জেসপিয়ার উইলেমসেন তাকে বিয়ে করেন। জেসপিয়ার উইলেমসেন নেদারল্যান্ডের একজন ট্যাক্স কনসালটেন্ট। লিপি বেগমের গর্ভে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। নাম রাখা হয় নওমি উইলেমসেন। নওমির বয়স বর্তমানে ২১ বছর। নওমি নেদারল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউরোপিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতক পাস করেছেন। বর্তমানে তিনি ওই দেশে ইনটার্ন করছেন।
ঢাকার ওই অরফানেজ ট্রাস্টের ঠিকানার সূত্র ধরে জন্মের প্রায় ৪৪ বছর পর লিপি বেগম গত বছর তার স্বামী জেসপিয়ার উইলেমসেনকে নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তারাও জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার কাজিয়ারচর ও কাজিরবাড়ি গ্রাম ঘুরে গেছেন। এবার তার মেয়ে নওমি তার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আন্তর্জাতিক শিশু পাচার রোধ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নেদারল্যান্ডের নাগরিক অরূণ দোহল ও ওই সংস্থার ভারতের পোনে প্রতিনিধি আইনজীবী অঞ্জলি পাওয়ারকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে জামালপুরের বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন সংঘের আইন উপদেষ্টা আইনজীবী মো. নূরুজ্জামান গত বুধবার মাদারগঞ্জের কাজিয়ারচর এবং কাজির বাড়ি গ্রাম ঘুরে আসেন।
নওমিকে সঙ্গে নিয়ে ওই প্রতিনিধিরা বৃহস্পতিবার বিকেলে জামালপুর প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে নওমির শেকড়ের সন্ধানে তার নানি ও দুই খালাকে পেতে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।
আইনজীবী অঞ্জলি পাওয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা নওমিকে সহযোগিতা করতেই তাকে নিয়ে এসেছি। তাকে নিয়ে মাদারগঞ্জের কাজিয়ারচর ও কাজিবাড়ি গ্রামে গিয়েছি। অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছি। কিন্তু নওমির নানির বাড়ির সঠিক ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আমরা আশাবাদী যে নওমি তার মায়ের শেকড়ের সন্ধান পাবে। আমরা শনিবার ঢাকায় যাব। সেখান থেকে নওমিকে নিয়ে ভারতে যাব। তাকে নিয়ে আমাদের আরো কিছু কাজ বাকি আছে। তাই নওমি ভারতে দুই মাস থাকবেন। আসছে ৫ জুন নওমি ও তার গাইড অরূণ দোহল নেদারল্যান্ডে ফিরে যাবেন।’