ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় কেমোথেরাপি একটি বহুল ব্যবহৃত চিকিৎসা পদ্ধতি।
কেমোথেরাপি এমন এক ধরণের চিকিৎসা যার মাধ্যমে ক্যান্সারের সেলগুলোকে ধ্বংস করা হয় এবং সেগুলোর বিস্তার থামানো হয়।
তবে সব ধরনের ক্যান্সারের জন্য এক ধরণের চিকিৎসা প্রযোজ্য নয়।
বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার সেল বিভিন্ন ধরণের ঔষধে সাড়া দেয়।
কেমোথেরাপির সর্বোচ্চ ভালো ফলাফলের জন্য আট ধরনের ঔষধের সমন্বয়ে ঘটানো হয়।
কেমোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা উন্নত করার জন্য চিকিৎসকরা নতুন ধরণের ঔষধের সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা করছেন।
অধিকাংশ সময় কেমোথেরাপির কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু আধুনিক কিছু কেমোথেরাপি সামান্য সমস্যা তৈরি করে।
কখন কেমোথেরাপি দেয়া হয়?
কেমোথেরাপির ঔষধ রক্তের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো হয়। এটি তখন পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
ফলে ক্যান্সারের সেল যেখানেই পাওয়া যাবে সেখানেই ধ্বংস হবে।
কেমোথেরাপি তখনই দেয়া হয়, যখন ডাক্তাররা মনে করেন যে, ক্যান্সারের সেল শরীরের একাধিক জায়গায় আছে।
ক্যান্সার যদি শনাক্ত করা না যায়, তখন এর কিছু সেল মূল টিউমার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আশেপাশের অংশে আক্রমণ করে।
অনেক সময় ক্যান্সার সেল অনেক দূর পর্যন্ত যায়। যেমন লিভার কিংবা ফুসফুসে গিয়ে ছড়াতে থাকে।
একজন চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্যান্সার টিউমারের এবং তার আশপাশের টিস্যু কেটে ফেলতে পারেন।
রেডিওথেরাপির মাধ্যমেও ক্যান্সার সেল ধ্বংস করা যায়। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট ছোট জায়গায় রেডিও থেরাপি দেয়া যায়।
তবে এর মাধ্যমে শরীরের সুস্থ কোষগুলো নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
ক্যান্সার আক্রান্ত অংশ ফেলে দেবার পর সেখানে যদি আরো ক্ষতিকারক ক্যান্সারের কোষের সম্ভাবনা থাকে তখন কেমোথেরাপি দেয়া হয়।
কিছু কিছু ক্যান্সার, যেমন লিউকেমিয়ার চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি দেয়া হয়।
কারণ লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হলে সেটি পুরো শরীরে ছড়িয়ে যায়।
অনেক সময় অস্ত্রোপচারের আগেও কেমোথেরাপি দেয়া হয়। ক্যান্সার টিউমারের আকার ছোট করার জন্য এটি করা হয়।
টিউমারের আকার ছোট হয়ে আসলে চিকিৎসকের জন্য সেটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ফেলে দেয়া সহজ হয়।
অনেক সময় ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য না হলেও কেমোথেরাপি দেয়া হয়। এর মাধ্যমে রোগীর শরীরে কিছুটা ভালোভাবে তৈরি হয়।
কেমোথেরাপি কিভাবে কাজ করে?
ক্যান্সার সেলের জন্য কেমোথেরাপি হচ্ছে এক ধরণের বিষ।
এতে ক্যান্সার সেল ধ্বংস হয়। এটাকে বলা হয় সাইটোটক্সিক কেমিক্যাল।
তবে মনে রাখা দরকার যে জিনিসটিকে শরীরের ক্যান্সার সেলের জন্য বিষাক্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে, সেটি শরীরের সুস্থ-স্বাভাবিক কোষকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
কেমোথেরাপি এমন একটি জিনিস যেটি শরীরের ক্ষতিকারক ক্যান্সার কোষগুলোকে যতটা সম্ভব খুঁজে বের করে ধ্বংস করে এবং ভালো কোষগুলোকে যতটা সম্ভব কম ধ্বংস করে।
কেমোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসকরা এখন অনেক বেশি সাফল্য পাচ্ছেন, কারণ এর মাধ্যমে শরীরের ক্যান্সার কোষ এবং এর আশপাশের ভালো কোষগুলোকে চিহ্নিত করে আলাদা করা যাচ্ছে।
শরীরের ক্যান্সার কোষ এবং সুস্থ কোষের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য আছে।
ক্যান্সার কোষগুলো দ্রুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পুনরায় ক্যান্সার কোষ তৈরি করে।
অন্যদিকে সুস্থ কোষগুলো ক্যান্সার কোষের মতো দ্রুত আলাদা হয় না এবং বিস্তার লাভ করে না।
ক্যান্সার কোষগুলো যেহেতু দ্রুত বিস্তার লাভের মাধ্যমে নতুন কোষ তৈরি করে সেজন্য টিউমার তৈরি হয়।
শরীরের যে স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে সেটি ক্যান্সার কোষ আক্রমণ করেন না।
কারণ ক্যান্সার কোষ শরীরের ভেতরেই তৈরি হয়। ফলে শরীরের ভেতরকার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্যান্সারকে বাইরে থেকে আসা কিছু মনে করে না।
কিছু কেমোথেরাপি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এমনভাবে পরিবর্তনের চেষ্টা করে যাতে ক্যান্সার কোষগুলোকে বাইরে থেকে আসা কোষ হিসেবে দেখে এবং সেগুলোকে আক্রমণ করে।
কেমোথেরাপি কীভাবে দেয়া হয়?
সাধারণত ইনজেকশনের মাধ্যমে কেমোথেরাপি শিরায় প্রবেশ করানো হয়।
অনেক সময় স্যালাইন যেভাবে দেয়া হয়, কেমোথেরাপিও সেভাবে দেয়া হয়। এতে করে ঔষধ কিছুটা পাতলা হয়ে আসে।
কোন রোগীকে যদি অন্য ঔষধও নিতে হয় তখন তার শিরায় একটি ইনজেকশনের টিউব রেখে দেয়া হয়। যাতে করে বিভিন্ন ধরনের ঔষধের জন্য বারবার সেটি খুলতে এবং লাগাতে না হয়। এতে করে রোগীর অস্বস্তি কম হতে পারে।
অনেক সময় শরীরের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট পরিমাণ কেমোথেরাপি দিতে হয়। ক্যান্সার আক্রান্ত জায়গাটিতে কেমোথেরাপি সরাসরি প্রয়োগ করা হলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম হতে পারে।
কেমোথেরাপি কতদিন চলবে সেটি নির্ভর করে ক্যান্সারের ধরণের উপর। কিছু কেমোথেরাপি ১৫দিন পরপর দেয়া হয়। আবার কিছু দেয়া হয় এক মাস পরপর।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন হয়?
কিছু কেমোথেরাপি যেহেতু দ্রুত বর্ধনশীল ক্যান্সার কোষকে আক্রমণ করে, সেজন্য এর মাধ্যমে ভালো কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হবার সম্ভাবনাও থাকে।
শরীরের যেসব কোষ চুলের সাথে সম্পৃক্ত সেগুলো আক্রান্ত হতে পারে কেমোথেরাপির মাধ্যমে। সেজন্য কেমোথেরাপি চলার সময় চুল পড়ে যায়। অবশ্য কেমোথেরাপি শেষ হবার পর চুল পুনরায় গজিয়ে উঠে।
কেমোথেরাপির ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং ডায়রিয়া হতে পারে। অন্যদিকে শরীরের রক্তকোষ কেমোথেরাপির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
রক্তের লাল কোষ অক্সিজেন বহনের মাধ্যমে অন্য কোষগুলোকে জীবিত রাখে। অন্য রক্ত কোষগুলো সংক্রমণ ঠেকাতে সহায়তা করে।
এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারণে কেমোথেরাপি নেয়া ব্যক্তির সংক্রমণের আশংকা থাকে।
কেমোথেরাপি নেয়া ব্যক্তি সাংঘাতিক ক্লান্তিতে ভুগতে পারে। কেমোথেরাপির কারণে নারী এবং পুরুষের সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কেমোথেরাপির কারণে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু জমে যেতে পারে।