Site icon Mati News

ভিন্ন প্রজাতিরও মাঝেও কথা হয়

নিউজিল্যান্ডের উত্তর উপকূলের মাহিয়া বিচ। পথ হারিয়ে আহত দুটো শিশু তিমি ক্রমেই অস্থির হয়ে ওঠে। আশপাশে স্বজাতির কেউ নেই। উদ্ধারের আশা ক্ষীণ। খানিক পর তাদের আলোড়ন দেখে এগিয়ে আসে একটি ডলফিন। বুদ্ধিমত্তায় যে কিনা অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তিমিদের বিপদ বুঝতে পেরে সাঙ্কেতিক ভাষায় একটা কিছু বলে ঐ ডলফিন। আর তা শুনেই প্রাণ ফিরে পায় বাচ্চা তিমি দুটো। ঘুরে গিয়ে ডলফিনটা সাঁতরে এগিয়ে যায়। তার পিছু নিয়ে নিরাপদ স্থানে স্বজাতির মাঝে ফিরে আসে আহত তিমি দুটো। কিন্তু কোন সঙ্কেত দিয়েছিল ঐ ডলফিন? তিমি দুটো তার ভাষা বুঝলো কী করে? নাকি ডলফিনই জানে তিমিদের ভাষা?

ভিন্ন প্রজাতির সঙ্গে যোগাযোগের অদ্ভুত এ ক্ষমতা কয়েকটি প্রাণীর মাঝে দেখতে পেয়েছেন গবেষকরা। তবে মানুষ বুঝতে না পারলেও মানুষের ভাষা বুঝতে পারে এমন প্রাণী আছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর তো আছেই, শিম্পাঞ্জীও মাঝে মাঝে চোয়াল নেড়ে মানুষের কথার জবাব দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের একটি ডলফিন কমিউনিকেশন প্রজেক্টের গবেষক জাস্টিন গ্রেগ জানালেন, যোগাযোগ মানেই ঠিক কথোপকথন নয়। তিমির শাবক দুটোকে ঐ ডলফিন শুধু এটুকু বোঝাতে পেরেছিল যে, হেই! আমার পিছু নাও, সামনেই খোলা সমুদ্র!
গ্রেগ আরো জানালেন, ডলফিন তিন উপায়ে স্বজাতির সঙ্গে যোগাযোগ করেÑ হুইসেল, টিক টিক শব্দ ও অঙ্গভঙ্গি। প্রয়োজনে এ তিনটির কম্বিনেশনে পরিবর্তন এনেই ডলফিন অন্য প্রাণীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। একই ব্যাপার ধরা পড়েছে টিকটিকির ক্ষেত্রেও।

তবে মজার ব্যাপার হলো, প্রাণীজগতে ভিন্ন প্রজাতির সঙ্গে অজস্র লেনদেন ঘটছে অহরহ। কেবল মানুষের বেলাতেই এর ব্যতিক্রম। গাছের পাতায় বাস করা বিশেষ একটি উকুনকে রক্ষা করার বিনিময়ে পিঁপড়া পাতা থেকে চিনি জাতীয় উপাদান আহরণ করে। বিবিসি ও জিওগ্রাফির ক্যামেরায় যা অনেকবারই ধরা পড়েছে।

মৌমাছি প্রায়ই ব্যাজার নামের একটি গর্তবাসী ক্ষুদ্র প্রাণীর পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করে। এমনকি প্রাণীটা যদি পথ ভুল করে তবে মৌমাছি ফিরে গিয়ে আবার তাকে পথে নিয়ে আসে। গ্রেগের ভাষায়, এ ধরনের যোগাযোগ মোটেও পরিকল্পিত নয়। প্রাণীদের মধ্যে এ ব্যাপারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। তবে এ প্রক্রিয়ায় কেউ কারোর কথা ভেবে বা কাউকে উদ্দেশ্য করে সঙ্কেত পাঠায় না। অনেকটা আড়িপাতার মতো এক প্রাণী অন্য প্রাণীর সঙ্কেত বুঝে নেয়।

হয়তো মানুষের কথাও বুঝতে পারে কেউ কেউ, কিন্তু প্রকাশের ক্ষমতা তো থাকা চাই। এখন মানুষ যদি তাদের কথা বোঝার কোনো যন্ত্র বানিয়ে ফেলে তবে তো কথাই নেই। বিজ্ঞাপনের ভাষায় কথাই তো পারে দেয়াল তুলে দিতে।

Exit mobile version