প্রবীর মিত্র বাংলা চলচ্চিত্রের একজন শক্তিমান অভিনেতা। প্রায় চার যুগ তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তবে এখন আর তিনি অভিনয় করতে পারবেন না। আর কোনো দিন তিনি হাজির হবেন না নতুন চরিত্র নিয়ে। নিজের ঘরে বসেই কাটছে দিন। পুরোনো দিনকে স্মরণ করে কষ্ট পেতেও চান না তিনি।
বছরখানেক ধরেই নিজের ভাড়া বাসায় দিন কাটছে প্রবীর মিত্রের। দুই পায়ের হাঁটুর হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে। এ কারণে তিনি এখন আর আগের মতো হাঁটতে পারেন না। লাঠিতে ভর করে কিছুটা হাঁটার চেষ্টা করেন। চিকিৎসার মাধ্যেমে পায়ের ব্যথা নিরাময় হলেও কোনোদিনই আর স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারবেন না তিনি। এ কারণে আর কোনো দিন শুটিংও করতে পারবেন না।
এ বিষয়ে প্রবীর মিত্র বলেন, ‘শুটিং এখন আমার কাছে অতীত। আর কোনো দিন আমি শুটিং করতে পারব না। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেয়ে যাচ্ছি। এতে করে ব্যথা কিছুটা কমলেও কোনো দিনই একেবারে সেরে উঠব না। এভাবেই হয়তো কাটবে আমার বাকি জীবন।’
দুই হাঁটুর হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে জানিয়ে প্রবীর মিত্র বলেন, ‘হাঁটুর টিস্যুগুলোও দুর্বল হয়ে গেছে। এ কারণে হাঁটতে পারি না। পা নড়াচড়া করতে কষ্ট হয়। এ ছাড়া আমার বয়সও তো হয়েছে।’
কীভাবে কাটছে দিন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে ঘুম থেকে ওঠে একটু হাঁটার চেষ্টা করি। স্নান করতে করতে দুপুর। তার পর আবারও একটা ভাতঘুম। সন্ধ্যায় ড্রয়িংরুমে বসে টিভি দেখা। এভাবেই কাটছে দিন।’
শুটিংয়ের সময়গুলো মনে করতে চান না জানিয়ে প্রবীর মিত্র বলেন, ‘আসলে সেই সময়গুলো তো স্বপ্নের সময়। এখন আর সেগুলো নিয়ে চিন্তা করি না, মন খারাপ হবে। এ ছাড়া এখন আর তেমন কাজ হচ্ছে না যে কাজ করতে না পারার জন্য মন খারাপ হবে। আমার মতো চলচ্চিত্রও অসুস্থ। সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই হচ্ছে না এখন।’
চলচ্চিত্রের কেন আজ এমন অবস্থা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন আর কেউ কাজ করছে না। সবাই টাকা কামানোর চিন্তায় ব্যস্ত। এখন পরিচালক শুধু সিনেমা শেষ করার চেষ্টা করেন। নির্মাণ করার স্বপ্নে বিভোর নন। কেউ টাকা দিয়ে স্ক্রিপ্ট চাইল, স্ক্রিপ্টরাইটার দুদিনের মধ্যে তা দিয়ে দিল। দেখা গেল, তামিল তিনটি বা চারটির ছবির নকল। শিল্পীরা এখন আর অভিনয়শিল্পী হতে আগ্রহী নয়। সবাই যেন তারকা। টাকার নেশায় সবাই পাগল হয়ে গেছে। কেউ আর চলচ্চিত্র নির্মাণ করার চেষ্টা করছেন না।’
এ থেকে উঠে আসার উপায় কী? জানতে চাইলে প্রবীর মিত্র বলেন, ‘সবাইকে মন দিয়ে কাজ করতে হবে। কাজকে ভালোবেসে কাজ করতে হবে। চলচ্চিত্র এমন একটি মাধ্যম, যেখানে শুধু টাকা দিয়ে কিছু হয় না। এখানে মেধার প্রকাশ ঘটাতে টাকার প্রয়োজন, এটা সবাইকে বুঝতে হবে।’
সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় অভিনয় শুরু করেন প্রবীর মিত্র। এইচ আকবর পরিচালত ‘জলছবি’ ছবিতে চিকিৎসকের চরিত্রের মধ্যে দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে সূচনা হয় তাঁর। এরপর একই পরিচালকের ‘জীবন তৃষ্ণা’ ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। নায়ক চরিত্রে অভিনয় করেছে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘চাবুক’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে। প্রবীর মিত্রের স্ত্রী অজন্তা মিত্র ২০০০ সালে মারা গেছেন। প্রবীর মিত্রের এক মেয়ে ও তিন ছেলে।