রান্নার যে ভুল খাবার বিষাক্ত করে

কিছু বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকি আপনার কিচেনেই রয়েছে। অর্থাৎ রান্নার কিছু অভ্যাস আপনার খাবারকে বিষাক্ত করতে পারে।

খাবারকে বিষাক্ত করতে পারে রান্নার এমন কিছু অভ্যাস নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে শেষ পর্ব। আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে এসব অভ্যাস আজই পরিবর্তন করা উচিত।

* অবশিষ্ট খাবার প্লাস্টিকের পাত্রে সংরক্ষণ করা
রান্নার হাড়িপাতিল বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়, ঠিক তেমনি খাবার সংরক্ষণের জন্য পাত্র কেনার সময়ও সতর্ক থাকতে হয়। ফ্লোরিডায় অবস্থিত পাম হার্বারের ফাংশনাল মেডিসিনের চিকিৎসক রাউল সেরানো বলেন, ‘খাবার সংরক্ষণের কিছু প্লাস্টিকের পাত্রে বিসফেনল-এ (বিপিএ) থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিপিএ শরীরে প্রবেশ করলে ইস্ট্রোজেনকে অনুকরণ করতে পারে। উচ্চ মাত্রার ইস্ট্রোজেন ওজন বৃদ্ধি, অনিয়মিত মাসিক চক্র, মাথাব্যথা ও কিছু ক্যানসারের উচ্চ ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।’ তিনি প্লাস্টিকের পাত্রের পরিবর্তে কাঁচের পাত্র কিনতে পরামর্শ দিচ্ছেন।

* খাবারে অত্যধিক লবণ ব্যবহার করা
অনেকেই তাদের খাবারের সঙ্গে যে ফ্লেভারটি খেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে তা হচ্ছে, লবণ। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন দৈনিক ২,৩০০ মিলিগ্রাম লবণ সুপারিশ করেছে, যা প্রায় এক চা-চামচের সমান। কিন্তু অনেক প্রাপ্তবয়স্কেরা গড়ে ৩,৫৯২ মিলিগ্রাম লবণ খায়। শিকাগোর খ্যাতনামা ডায়েটিশিয়ান ম্যাজাই মিকালজিক বলেন, ‘কিছু ক্ষেত্রে আমাদের টেস্ট বাড (কোষের একটি গ্রুপ, যা বিশেষ করে জিহ্বায় থাকে) লবণের স্বাদের প্রতি ডিসেন্টিটাইজ হতে পারে।’ প্রক্রিয়াজাত খাবারে সোডিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে, তাই প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।

* খাবারে অত্যধিক চিনি ব্যবহার করা
হোলসাম ইয়ামের প্রতিষ্ঠাতা মায়া ক্রাম্প বলেন, ‘ডেজার্টে চিনি বেশি থাকে, কিন্তু ড্রেসিং, ম্যারিনেড ও সসেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে চিনি থাকে। মধু ও ম্যাপল সিরাপের মতো প্রাকৃতিক চিনি তুলনামূলকভাবে সামান্য ভালো, কিন্তু তারাও পরিশোধিত চিনির মতো ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে পারে।’

* প্রক্রিয়াজাত ফ্রোজেন ফুডের ওপর বেশি নির্ভরতা
খুব অল্প সময়ে ফ্রোজেন ফুড খাওয়ার জন্য মাইক্রোওয়েভে প্রস্তুত করা যায় বলে এর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু প্রায়ক্ষেত্রে এসব খাবারের কেমিক্যাল ও প্রিজারভেটিভ আপনার স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ক্রাম্প বলেন, ‘প্রক্রিয়াজাত খাবারে কৃত্রিম প্রিজারভেটিভ, পরিশোধিত চিনি এবং সাদা ময়দা থাকে।’ এর পরিবর্তে তিনি শাকসবজি, ফল, ডিম ও মাংসের মতো হোল ফুড বেছে নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন। যদি বক্সের কোনো খাবার কিনতে চান, তাহলে এটিতে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে তা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।

* প্রত্যেক খাবারে ‘লো-ফ্যাট’ ব্যবহার করা
একটা সময় ছিল যখন পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা ধারণা করত যে, ফ্যাট বা চর্বি হলো শত্রু। কিন্তু সেই সময় চলে গেছে। এখন আমরা জানি যে, ভালো ফ্যাট এবং খারাপ ফ্যাট রয়েছে। যেকোনো ভাজা খাবার তেমন একটা ভালো নয়, কিন্তু অ্যাভোক্যাডো ও মাছে প্রচুর ভালো ফ্যাট (ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড) রয়েছে। ক্রাম্প সতর্ক করেন যে, রান্নার সময় পর্যাপ্ত ফ্যাট ব্যবহার না করা হচ্ছে একটি ভুল। তিনি বলেন, ‘ফ্যাট হচ্ছে শক্তির উৎস, এটি অর্গানকে সুরক্ষা দেয়, এটি সেল মেমব্রেন ফাংশনে ব্যবহার হয়, এটি রিয়্যাজশন শুরু করে যা ইমিউন সিস্টেম ও মেটাবলিজমকে প্রভাবিত করে এবং এটি ভিটামিন এ, ডি, ই ও কে শোষণে সাহায্য করে।’