Site icon Mati News

নারীদের মেনোপজ সমস্যা ও সমাধান

মেয়েদের রজঃস্রাব বা মাসিক শুরু হয় সাধারণত ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সে। এটি খুবই স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক শরীরবৃত্তীয় ঘটনা। আবার স্বাভাবিক নিয়মেই এটি ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সে শেষ হয়। রজঃস্রাব বন্ধ হওয়াকে মেনোপেজ বলে। মেনোপেজের পর নারীদের নানা রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসা পরিভাষায় একে ‘মেনোপেজাল সিন্ড্রোম’ বলে। মেনোপেজের সিন্ড্রোম থেকে মুক্তির উপায় জানাচ্ছেন ডা. উজ্জ্বল কুমার রায়। সূত্র: দৈনিক কালবেলা

সমস্যা

মেনোপেজের পর ডিম্বাশয় তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ইস্ট্রোজেন নামক হরমোন ক্ষরণের পরিমাণ কমে যায়। এতে ক্যালসিয়াম, ভিটামিনসহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের অভাবে মেনোপেজাল সিন্ড্রোম দেখা দেয়। মেনোপেজাল সিন্ড্রোমে মেজাজ হয় খিটখিটে। শরীরে জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়। সঙ্গে বুক ধড়ফড়, ভয় ভয় ভাব, অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্তি এবং কাজে ভুল হতে পারে। অতিরিক্ত ঘাম হয় এমনকি শীতের দিনেও। স্তনের গ্লান্ড শুকিয়ে যেতে শুরু করে। যৌনিপথ শুষ্ক হয়ে যাওয়ার ফলে সহবাসের সময় অস্বস্তি ও ব্যথা হতে পারে। চুল পাতলা হয়ে আসে। শরীর ও মুখে বলিরেখা পড়তে শুরু করে। হৃৎপিণ্ডের ধমনিতে চর্বি জমতে শুরু করে। ফলে হার্ট অ্যাটাক ও ডিপ ভেন থ্রম্বোসিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। হাড়ে ক্যালসিয়ামের অভাবে অস্টিওপোরোসিস দেখা দেয়। হাড় সহজেই ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। ইউরিন ইনফেকশন বিশেষত ই-কোলাই ইনফেকশন প্রায়ই হয়। প্রস্রাব চেপে রাখতে পারে না। এই সব উপসর্গের কারণে তৈরি হয় অ্যাংজাইটি, অনিদ্রা, ডিপ্রেশন ও মাইগ্রেনের মতো কঠিন অসুখ।

 

সমাধান

মেনোপেজ জনিত উপসর্গের জন্য প্রয়োজন গাইনোলজিক্যাল কাউন্সেলিং, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি, ক্যালসিয়াম এবং বিশেষ কিছু ভিটামিনের প্রয়োগ। হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা এইচআরটির ফলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমে গিয়ে ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) ও ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়ে, ধমনির নালির পথ সুগম হয় এবং হার্ট অ্যাটাক ও অস্টিওপোরোসিসের সম্ভাবনা কমে। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ফিরে আসায় নারীরা আত্মবিশ্বাস ফিরে পান। তবে এই থেরাপি শুরুর আগে এইচটিআর চেক নিতে হবে। না হলে ইউটেরাস ও ব্রেস্টের ক্যান্সারের আশঙ্কা থাকে। থেরাপির পাশাপাশি নিয়মিত হাঁটা, যোগব্যায়াম বা হ্যান্ড এক্সারসাইজ ও নিয়মমতো ঘুম খুব জরুরি। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন টমেটো, সয়াবিন, সবুজ শাক-সবজি, ক্যারোটিনয়েড, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার ও মৌসুমি ফলমূল বেশি করে খেতে হবে।

 

লেখক : মেডিসিন ও গ্যাসট্রোএন্টারওলজিস্ট। গ্লোবাল স্পেশালাইজড হাসপাতাল

 

Exit mobile version