Thursday, September 19

বারডেম হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. আবিদ হোসেন মোল্লার পরামর্শ : শিশুর নিউমোনিয়া না ব্রংকিওলাইটিস

শিশুর নিউমোনিয়া না ব্রংকিওলাইটিস

ভাইরাসজনিত শ্বাসতন্ত্রের রোগ ব্রংকিওলাইটিস

, যা শীতকালে বেশি হয়। এই রোগে শিশুরা শ্বাসকষ্ট ও সর্দি-কাশির মতো সমস্যায় বেশি ভোগে। অনেকেই একে নিউমোনিয়া ভেবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করেন, যার কোনো প্রয়োজন নেই। পরামর্শ দিয়েছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবিদ হোসেন মোল্লা

দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুর ব্রংকিওলাইটিস হয় না। শিশু হাত-পা ছড়িয়ে খেলা করলে ধরে নিতে হবে, সে স্বাভাবিক ও সুস্থ অবস্থায় আছে।

ফুসফুসের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ুনালি ভাইরাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হলে শিশুর ব্রংকিওলাইটিস হয়। সাধারণত রেস্পিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস, রাইনো ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণে এই রোগ হয়। এতে বায়ুনালিতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়ে ফুলে যায় এবং মিউকাস নামক পদার্থ দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে শিশুর স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যার সৃষ্টি করে। আনুপাতিকভাবে শিশুদের নিউমোনিয়ার (১১ শতাংশ) চেয়ে ব্রংকিওলাইটিস (২১ শতাংশ) বেশি হয়।

কারণ

অপুষ্টির কারণে, ঘরে পর্যাপ্ত  প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের অভাবে, শিশুর আশপাশে ধূমপান করলে কিংবা রান্নার সময় শিশু যে ঘরে থাকে, সেখানে রান্নার ধোঁয়া পৌঁছলে শিশুর ব্রংকিওলাইটিস হতে পারে। এ জন্য শিশুকে রান্নাঘর থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা উচিত। আর ধূমপায়ী অভিভাবক যেন কোনোভাবেই শিশুর সামনে ধূমপান না করে, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

লক্ষণ ও উপসর্গ

দুই বছরের কম বয়সী শিশু, বিশেষ করে শিশুর বয়স এক বছর পর্যন্ত ব্রংকিওলাইটিস হতে পারে। কিন্তু দুই বছরের বেশি হলে এ সমস্যা হয় না। দুই বছর পর্যন্ত যেসব শিশু বারবার ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভোগে, ধরে নেওয়া হয় তাদের ব্রংকিওলাইটিস সমস্যা রয়েছে। ব্রংকিওলাইটিস হলে শিশু ঠাণ্ডা-কাশি আর অল্প শ্বাসকষ্টে ভুগলেও সেই অর্থে অসুস্থ মনে হয় না। প্রাথমিকভাবে শিশুর হাসি, কাশি ও বুকে বাঁশির মতো শব্দ আছে কি না তা দেখে বুঝতে হবে, শিশুর নিউমোনিয়া নাকি ব্রংকিওলাইটিস হয়েছে। এতে আক্রান্ত শিশুর সাধারণত তেমন জ্বর থাকে না, হলেও কম তাপমাত্রা থাকে। অন্যদিকে শিশু যদি না হাসে, দেখেই কিছুটা অসুস্থ মনে হয়, তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা যায়, তবে ধরে নেওয়া যেতে পারে সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। নিউমোনিয়া বারবার হয় না, তবে পুষ্টিহীন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই বা কম—এমন শিশুর ঘন ঘন নিউমোনিয়া হতে পারে। আর যেকোনো শিশুর এমনকি পূর্ণবয়স্ক শিশুরও নিউমোনিয়া হতে পারে।

চিকিৎসা ও করণীয়

শিশুর ব্রংকিওলাইটিসের জন্য প্রকৃতপক্ষে আলাদা করে তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। আক্রান্ত হওয়ার পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যেই শিশু সুস্থ হয়ে যায়। তবে শিশুকে দেখে অসুস্থ কিংবা শিশুর শরীর কালচে মনে হলে দেরি না করে হাসপাতালে নেওয়া উচিত। এই রোগে আক্রান্ত শিশুকে সময়মতো অক্সিজেন, নেবুলাইজেশন ইত্যাদি প্রয়োগ করলেই শিশুটি সুস্থ হয়ে যায়। যেহেতু দুই বছরের কম বয়সী শিশুর ব্রংকিওলাইটিস হয়, তাই এই রোগে আক্রান্ত হলে লক্ষ রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো বন্ধ না করা হয়। শিশুর বয়স ছয় মাসের বেশি হলে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টিকর খাবারও খাওয়াতে হবে।

আজকাল কর্মজীবী মায়েরা যেহেতু দিনের একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘরের বাইরে থাকেন, সে ক্ষেত্রে হয়তো শিশুকে নিজের কাছে রেখে দুধ পান না করিয়ে বিকল্প খাবার খাওয়ান। এ ক্ষেত্রে মা যখন শিশুর কাছে থাকেন, তখন শিশুকে যতটা সম্ভব বুকের দুধ পান করাতে হবে। আর অন্য সময় শিশুকে যে খাবার দেওয়া হয়, সেটি যেন ঘরে তৈরি ও পুষ্টিকর খাবার হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। শিশুকে ঋতুভিত্তিক মৌসুমি ফল ও সবজি খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। শিশু মায়ের বুকের দুধ পান করলে ব্রংকিওলাইটিসের প্রকোপ কমে যায়।

প্রতিরোধের উপায়

শিশুকে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। উষ্ণ আবহাওয়ায় স্বাভাবিক আলো-বাতাস চলাচল করে এমন ঘরে রাখতে হবে। শিশুর ঘন ঘন ঠাণ্ডা লাগলে বা সর্দি-কাশি হলে গুরুত্ব সহকারে যত্ন ও চিকিৎসা দিতে হবে। গরমে ঘামছে কি না, শীতে কাঁপছে কি না—এসব দিকে ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। শিশু হাত-পা ছড়িয়ে খেলা করলে ধরে নিতে হবে, সে স্বাভাবিক ও সুস্থ অবস্থায় আছে। যেসব শিশু বারবার ব্রংকিওলাইটিসে আক্রান্ত হয়, তাদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে।

সতর্কতা

♦ শিশুকে স্যাঁতসেঁতে, অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশে রাখা যাবে না। এটি বেশ ক্ষতিকারক। শিশু যে ঘরে থাকে, সেখানে দিনে, এমনকি রাতেও প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।

♦ এখন যেহেতু শীতকাল, তাই সব সময় শীত উপযোগী হালকা ও নরম কাপড় পরিধান করাতে হবে।

♦ শিশুর মধ্যে অস্বাভাবিক কোনো পরিবর্তন চোখে পড়ে কি না তা নিয়মিত বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে।

♦ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না। এতে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে।

 

https://www.youtube.com/watch?v=Geg0SPadJxM&feature=youtu.be&fbclid=IwAR0QsvcqjH0dMmsEQj-NPglRMt4gW5oe32oH3C-jCb4BnnI893b6ABrzpvk

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!
Exit mobile version