বাড়ির খুদে সদস্যকে নিয়ে চিন্তা কার না হয়? ঠিক সময়ে খেল কি না, ঠিক মতো পুষ্টি পেল কি না চিন্তা থাকে সবেতেই। সামান্য আবহাওয়ার বদলেই ভয় বাসা বাঁধে। কিন্তু যার সুস্থতা নিয়ে এত ভাবনা, আপনার কিছু ভুল পদক্ষেপেই সে দিনকে দিন আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে না তো! আপনার কোন অভ্যাস বদলালে সন্তান হয়ে উঠতে পারে আরও সতেজ, আরও সুস্থ, জেনে নিন
বাইরে খেলতে যেতে চাইলে না বকে উৎসাহ দিন। ছুটোছুটি করে খেললে শরীরে যে পরিমাণ এটিপি খরচ হয়, ইনডোর গেমে তার ছিটেফোঁটাও হয় না। কম পরিশ্রম শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই বাড়ির কাছাকাছি কোনও মাঠ না থাকলে চেষ্টা করুন অন্তত কিছুটা সময় সাইকেলিং, সাঁতার বা কোনও খেলার প্রশিক্ষণে ভর্তি করতে। যোগব্যায়ামও এ ক্ষেত্রে উপকারী।
পড়াশোনার উপর জোর দিতে গিয়ে বা মোবাইলে গেম খেলার জেরে কি শিশুর ঘুম কম হচ্ছে? এই কম ঘুম ওর মস্তিষ্কে অক্সিজেন সংবহনে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে অল্পেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কম বয়সেই অনিদ্রার শিকারও হতে পারে। নির্দিষ্ট সময়ে আলো নিভিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিন। দরকারে বেড রুমে চালাতে পারেন লঘু সংগীত। তা শরীরের সঙ্গে মনকেও আরাম দেবে। কাটবে ক্লান্তি।
সামান্য জ্বরজ্বালা বা অসুখে মুঠো মুঠো অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছেন কি? এতে কিন্তু ক্ষতি হচ্ছে শিশুর। ডাক্তারের পরামর্শ না মেনে অ্যান্টিবায়োটিক দিলে তা কিন্তু প্রভাবিত করে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে। শরীরে অ্যান্টিবডি রেজিস্ট্যান্ট তৈরি হয়। খেয়াল রাখুন সে দিকে।
জরুরি কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাসে অভ্যস্ত করুন শিশুকে। ক্লান্ত থাকলেও বাইরে থেকে এসে হাত-মুখ ধোওয়া, দিনে দু’বার দাঁত মাজা, হাত ধুয়ে খেতে বসা, ঠিক ভাবে স্নান করা— এই নিয়মগুলোতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে শরীরে সহজে জীবাণু বাসা বাঁধবে না। একটা সময়ের পর তা করতে দিন নিজে হাতেই। তাতে নিজের উপর নির্ভরশীল হবে শিশু। দরকার বুঝে সাহায্য করুন।
বায়না সামলাতে বা রান্নার ঝক্কি কমাতে মাঝে মাঝেই কি বাইরের খাবারে অভ্যস্ত করে ফেলছেন শিশুকে? তা হলে এ বার সময় হয়েছে ভাবার। হাই প্রোটিন আর লো কার্বসের ডায়েট রাখুন শিশুর বিকাশের কথা ভেবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, শরীরকে সুস্থ রাখে এমন খাবার দিন। মরসুমি তরিতরকারি ও ফল রাখুন খাদ্যতালিকায়।
মানসিক সমস্যার খুঁটিনাটি ভাগ করে নিতে পারেন তো? সময় দিন শিশুকে। জানতে চান, সারা দিন তার কেমন কাটল, স্কুল বা কোচিংয়ের খবরাখবর নিন। সহজ হন তার কাছে। যেন আপনাকে সে বলতে পারে সব। এতে তার মন ভাল তো থাকবেই, সঙ্গে স্ট্রেস হরমোনের প্রভাব কমে শরীর থাকবে তরতাজা।
শিশুর সামনেই সিগারেটে সুখটান দেন? নিজে তো অসুস্থ হচ্ছেনই, সঙ্গে অসুস্থতার দিকে ঠেলছেন শিশুকেও। এই বদ অভ্যাস আগে বদলান। পরোক্ষ ধূমপানে তার শরীরেও ঢুকছে নিকোটিন, আর্সেনিক, ক্যাডমিয়ামের মতো মারণ বিষ। তাই নিজে তো সাবধান হনই, সঙ্গে খেয়াল রাখুন শিশু যেন স্মোকিং জোনের ধারেকাছে না থাকে।
জল অবশ্যই শরীরের টক্সিন সরায়। হজম শক্তিকে সবল রাখে। কিন্তু তা বলে জল খাওয়ার জন্য অহেতুক চাপ দেবেন না। বাচ্চার ওজন ও খাদ্যতালিকা এবং কতটুকু নুন সারা দিনে খাচ্ছে তার উপর নির্ভর করে কতটুকু জল ওর প্রয়োজন আগে সেটা জানুন। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে খেতে দিন জল। প্রচুর জল খেলই শরীর ভাল থকে— এমন ভ্রান্ত ধারণা থেকে সরুন।