Tuesday, October 8

গবেষণা বলছে মাইক্রোপ্লাস্টিক হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়

সম্প্রতি নতুন ধাঁচের  একটি গবেষণায় ধমনীতে জমাট বাঁধা প্লাকে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে। গবেষকদের মতে , মাইক্রোপ্লাস্টিক রক্তনালী সংকোচন করে। ফলে  হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ে।  তবে গবেষণাটি পুরোপুরি সঠিক কিনা তা জানতে  আরও তথ্য দরকার।

  • প্লাস্টিকের মাইক্রোস্কোপিক বিট মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানোপ্লাস্টিক  পুরো পরিবেশে ছড়িয়ে আছে।  সমুদ্র,  খাদ্য ও মানুষের শরীরে বিশেষ অংশে এদের দেখা যায়।   বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত  এটি পরিবেশের  ক্ষতিকর করে।  তবে মানুষের স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব এখনও ভালোমত বোঝা যায়নি। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাইক্রোপ্লাসটিক রক্তনালী সংকোচন করে।  এর ফলে মারাত্মক  সমস্যাও দেখা দেয়। হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো   কার্ডিওভাসকুলার জটিলতার জন্যও এটি দায়ী নাকি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
  • এই মাসে “দি নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে” গবেষণাটি প্রকাশ করে। গবেষণার সাথে জড়িত না থাকলেও  ডাক্তার রিক ফেরারো এ   বিষয়ে   বলেছেন, “এটি গবেষণার নতুন ক্ষেত্র যার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে”। তিনি আরো বলেন, গবেষণাটির ফল এখনও ঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না তবে রক্তনালী সংকোচনে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি চিন্তার বিষয়। এছাড়া এটি অন্যান্য কার্ডিয়াক সমস্যাও বাড়াতে পারে। রিক ফেরারো জন্স হপকিন্স মেডিসিনের সাথে যুক্ত  এবং   কার্ডিওলজি নিয়ে কাজ করেন।

৬০% রোগীর রক্তনালীতে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে

  • ড. রাফায়েল মারফেলা গবেষণাটি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি  ইতালির ইউনিভার্সিটি ডিগ্লি স্টুডি ডেলা ক্যাম্পানিয়া লুইগি ভ্যানভিটেলির মেডিসিনের অধ্যাপক।  মারফেলাও জানান গবেষণাটিতে মূলত দুইটি জিনিস দেখা যায়।  একটি হলো, ন্যানোপ্লাস্টিক ধমনীতে জমাট বাঁধা  প্লাকে থাকে।  রক্তনালীর সংকোচনের পরের এ অবস্থাকে এথেরোস্ক্লেরোটিক বলে।  অন্যটি হলো, যেসব রোগীদের ধমনী ন্যানোপ্লাসটিক দিয়ে আক্রান্ত ছিল, তাদের মধ্যে মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন, স্ট্রোক বা মৃত্যুর পরিমাণ বেশি। অন্যদিকে যেসব রোগীর সংকোচিত ধমনীতে ন্যানোপ্লাসটিক পাওয়া যায়নি তাদের মধ্যে এসব সমস্যার পরিমাণ কম।
  • মারফেলা ও তার টিম  ২৫০ জনেরও বেশি রোগীর সংকোচিত হওয়া রক্তনালীর উপর পরীক্ষা চালান। এ  সমস্যা থেকে নিস্তার পেতে “ক্যারোটিড এন্ডার্টারেক্টমি” নামে পরিচিত  একিটু অস্ত্রোপচার করেছিল রোগীরা।  গবেষকেরা  খুঁজে পান, প্রায় ৬০ শতাংশ  রোগীর রক্তনালীতে মাইক্রোপ্লাস্টিক আছে। পলিথিন আর এই মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপকরণ একই। অন্যদিকে ১২ শতাংশ রোগীর ধমনীতে পলিভিনাইল ক্লোরাইড মাইক্রোপ্লাস্টিক দেখা যায়। পলিথিন এবং পলিভিনাইল ক্লোরাইড হলো প্লাস্টিকের সবচেয়ে সাধারণ দুটি রূপ। বোতল থেকে নির্মাণ সামগ্রী পর্যন্ত সবকিছুতে এদের ব্যবহার  রয়েছে।
  • অস্ত্রোপচারের ৩৫ মাস পরে  গবেষকেরা আরো কিছু জিনিস দেখতে পান। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক বা মৃত্যুসহ গুরুতর কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার সম্ভাবনা মাইক্রোপ্লাসাস্টিক থাকা রোগীদের মধ্যে বেশি। তারা অন্যান্য রোগীদের চেয়ে ৪.৫ গুণ  বেশি ঝুঁকিতে থাকে। বাকি রোগীদের মধ্যে এ ধরনের জটিলটা কম দেখা যায়।
  • তবে এ পুরো বিষয় সম্পর্কে এখনো জোর দিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। মাইক্রোপ্লাস্টিক ছাড়া অন্য কোনো কারণেও এসব জটিলতা দেখা দিতে পারে। ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের সাথে জড়িত ভাস্কুলার মেডিসিনের পরিচালক, ডক্টর অ্যারন অ্যাডে, এ বিষয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, গবেষণাটি এমন রোগীদের উপরই করা হয়েছে যারা ইতোমধ্যে ক্যারোটিড রক্তনালী সংকোচন সমস্যায় ভুগছিলেন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এ থেকে নিস্তারের পাওয়া যায়। তবে মাইক্রোপ্লাস্টিকের জন্য ডাউনস্ট্রিম কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকি এতটা বেড়ে যায়  তা  চিন্তার বিষয়।

 প্লাস্টিক যেভাবে রক্তনালীর ভিতরে  থাকে

  • প্রতিবছর ৩৮০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক তৈরি করা হয়। এটি অন্যতম টেকসই পণ্য হওয়ার ফলে সবাই ব্যবহার কর। প্লাস্টিক  তৈরির  সময় এর ছোট ছোট টুকরো সাধারণত পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে।
  • পৃথিবীর সব জায়গায় প্লাস্টিকের ছোট ছোট কণা পাওয়া যায়। মাইক্রোপ্লাস্টিকের সাইজ ৫ মিলিমিটারেরও চেয়েও ছোট  এবং ১০০০ ন্যানোমিটারের চেয়েও ছোট প্লাস্টিক কণার নাম ন্যানোপ্লাস্টিক। ২০২২ সালের একটি গবেষণায়  মানব দুগ্ধে  প্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়া ২০২৩  সালে গবেষকরা মিসৌরির ক্লিফ গুহায় মাইক্রোপ্লাস্টিক খুঁজে পান। অবাক করা বিষয় হল,  ত্রিশ বছর ধরে গুহাটিতে মানুষ যায়নি।
  • সমুদ্রের গভীরতম জায়গার নাম মারিয়ানা ট্রাঞ্চ। এখানেও প্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছে। সমুদ্রের ১০ হাজার ফিট গভীরেও প্লাস্টিকের টুকরা পেয়ে অবাক হয়েছেন গবেষকেরা। খাবার, পানি ও বাতাসে তো এদের উপস্থিতি টের পাওয়া গিয়েছে অনেক আগেই। এর ফলে মানব স্বাস্থ্যের উপর মাইক্রোপ্লাস্টিকের প্রভাব নিয়ে গবেষকরা  চিন্তিত। গবেষক এডয় বলেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানোপ্লাস্টিকগুলো আমাদের সংবহনতন্ত্রে ঢুকতে পারে।  এতে হার্টসহ বাকি অংশের ক্ষতি হতে পারে। অন্যান্য প্রাণির হার্ট এবং রক্তনালীতেও ক্ষতিকারক পরিবর্তন ঘটাতে পারে এই মাইক্রপ্লাসটিক।
  • হার্টের উপর মাইক্রোপ্লাস্টিকের মারাত্মক প্রভাব পুরোপুরি প্রমাণিত হওয়ার আগের এ বিষয়ে আরো গবেষণা করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা এজন্য বড় পরিসরে  কাজ করার উপর জোর দেন। অনেকে জনসংখ্যা এবং পরিবেশগ তথ্যে সংগ্রহের কথাও বলেন।
  • বিশেষজ্ঞ ফেরারো পরিবেশের উপাদানগুলোকে খতিয়ে দেখাতে বলেন। তার মতে, উপাদানগুলোর জন্য কোনো মানুষ রোগে আক্রান্ত হলে তাকেও গবেষণার আওতায় আনতে হবে। তিনি ভিন্ন অঞ্চল ও জাতিসত্তার মানুষদের উপরও  মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানোপ্লাস্টিকের কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকির পরিমাণ জানার পরামর্শ দেন। এভাবে গবেষণার কাজের  পরিধি আরো বাড়াবে বলে তিনি মনে করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Please disable your adblocker or whitelist this site!

error: Content is protected !!
Exit mobile version