নারী নেতৃত্ব চর্চায় এগিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর গণ বিশ্ববিদ্যালয়

FacebookTwitterEmailShare

মোজাহিদুল ইসলাম নিরব, গবি সংবাদদাতা: পরাধীনতা আর বৈষম্যের অদৃশ্য শিকলকে বিকল করতে নারীর কোমল হাতে পশ্চিম থেকে জ্বলে উঠেছিলো যে আগুন, তারই তপ্ত লেলিহান শিখা শিকলকে গলিয়ে নারীকে তৈরি করেছিলো ‘নারী’ হিসেবে। স্যাকরা যেমন সোনা থেকে বানায় দামী গহনা। সারাবিশ্বে নারী অধিকার এবং নারী ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই পশ্চিমের সে আগুন ছড়িয়ে গেছে উত্তর-দক্ষিণ-পূর্বে। এ আগুন সকল বৈষম্য, অনাচার, অত্যাচার জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে জন্ম দিয়েছে নারী নামের অনিন্দ্য গোলাপ। 

আমাদের দেশেও যার সূচনা হয়েছিলো নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার হাত ধরে। বাংলার নারীরাও সকল প্রতিকূলতার তীর চূর্ণ করে হয়েছে পাইলট কিংবা ডাক্তার আবার সাহসী নেতৃত্বের গুণে সুফিয়া কামাল, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্তদের মতো ভূমিকা পালন করছে দেশের জন্য, মানুষের জন্য। নারী ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠার আরো এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। প্রচলিত ধারণাকে তোয়াক্কা না করে যিনি ভূমিকা রেখেছিলেন নারী ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠায়। 

সেই সংশপ্তক পুরুষের স্বপ্নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)। বত্রিশ একরের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বাংলার মহারথীদের ছবি এদেশের নারী জাগরণের ইতিহাস বহন করে। সংশপ্তকের দেখানো পথেই ভিন্নধর্মী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চর্চা হয় নারী ক্ষমতায়নের, নারী নেতৃত্বের। সম্প্রতি গবিতে এমনই এক মাইলফলক স্থাপন করে নারী নেতৃত্বের নতুন ইতিহাস জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সংগঠন গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস)। সাংবাদিকতার মতো দুঃসাহসিক পেশায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা।

সানজিদা জান্নাত পিংকি- সভাপতি (গবিসাস)

গত ২২ ডিসেম্বর গবিসাসের দ্বাদশ কার্যনির্বাহী পরিষদ গঠন করা হয়। নারী নেতৃত্বের অনন্য এক নজির স্থাপন করে এ পরিষদের নেতৃত্বে সভাপতি এবং সম্পাদক উভয়ই নারী। প্রথমবারের মতো নারী সভাপতি-সম্পাদক পায় গবিসাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে প্রাচীন এ সংগঠনের নতুন সভাপতি আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা জান্নাত পিংকি এবং সম্পাদক ফার্মেসী বিভাগের ইভা আক্তার। 

নারী নেতৃত্বে গবিসাস সৃজনশীল এবং বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র তুলে ধরবে। বাংলাদেশের সাংবাদিক সংগঠনের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক এটি। ইতিহাসের পাতায় মোটা কালিতে লেখা থাকবে সাংবাদিকতার মতো বুদ্ধিদীপ্ত এবং ঝুকিপূর্ণ পেশায় গবিসাসের নারী সাংবাদিকদের সাহসী নেতৃত্বের ইতিকথা।

গবিসাসের দ্বাদশ কার্যনির্বাহী পরিষদের নেতৃত্ব দেওয়া নারী সাধারণ সম্পাদক ইভা আক্তার

গবিসাসের দ্বাদশ কার্যনির্বাহী পরিষদের নেতৃত্ব দেওয়া নারী সাধারণ সম্পাদক ইভা আক্তার বলেন, ‘ইতিহাস বারবার দেখেছে নারী নেতৃত্ব সংকট মোকাবিলায় কেবল মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করেনি বরং স্থায়ী সমাধানের ভিত্তিও স্থাপন করেছে। যুদ্ধ থেকে মহামারী সকল পরিস্থিতিতে নারীদের অবদান ছিল ব্যাপক এবং বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। নারী নেতৃত্বের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং কূটনৈতিক দক্ষতা শান্তি এবং স্থায়িত্বের পথে আলোকবর্তিকা হয়ে উঠতে পারে।’

মুন্নি আক্তার

গবিসাসের নারী নেতৃত্বের এ ইতিহাস নতুন নয়। বাংলাদেশের সাংবাদিক সংগঠনের ইতিহাসে প্রথম নারী সাধারণ সম্পাদক গবিসাসের মুন্নি আক্তার। ২০১৮ সালে পঞ্চম কার্যনির্বাহী পরিষদে নারী নেতৃত্বের এ যুগান্তকারী ইতিহাস তৈরি করে গবিসাস। দক্ষতা এবং নেতৃত্ব প্রদানের সাহসিক গুণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় এ সংগঠনকে নেতৃত্ব দিচ্ছে নারীরা। মুন্নি, সানজিদা, ইভাদের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সংগঠনকেও নেতৃত্ব দিচ্ছে নারীরা। নারী শক্তির এ যুগে নারী ক্ষমতায়ন এবং নারী নেতৃত্ব চর্চায় এগিয়ে গণ বিশ্ববিদ্যালয়, এগিয়ে গবিসাস।

নারীরা আজ অপ্রতিরোধ্য, অদম্য। কর্মদক্ষতা ও সহনশীলতায় সবেতেই অদ্বিতীয়া নারী। সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে বিশ্ব ইতিহাসের উচ্চতায় উড়ছে নারী শক্তির ঝান্ডা। নারী ক্ষমতায়নের এ অপ্রতিরোধ্য সৌন্দর্যের পৃথিবীতে বিরাজ করছে সাম্যতা, হাতে হাত রেখে সামনে এগিয়ে চলার শক্তি। নারী-পুরুষের সাম্যের এ পৃথিবীতে তাই চির অমর হয়ে আছে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বাণী ‘পুরুষ এনেছে দিবসের জ্বালা তপ্ত রৌদ্রদাহ, কামিনী এনেছে যামিনী-শান্তি, সমীরণ, বারিবাহ।’

ক্যাম্পাস