চব্বিশের ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পতনের পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বৈরাচারের মনোনীত উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ সত্তরের অধিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা একযোগে পদত্যাগ করেন।ফলে অভিভাবক শূন্যতায় স্থবির হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর নতুন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকে এ প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। নতুন উপাচার্যের কাছে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা অনেক। বিশ্ববিদ্যালয়ে কি কি সংস্কার হওয়া প্রয়োজন সেসব নিয়ে কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী। মতামত সংগ্রহ করেন বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ও রাবি প্রতিনিধি শাহ্ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
“দ্রুত রাকসু সচল করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন”
বহুল প্রত্যাশিত সংস্কারের দাবি নিয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে আজকের জায়গায় পৌছাতে পেরেছে শিক্ষার্থীরা। রাবি ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির কারণে কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলো সাধারণ শিক্ষার্থীরা; তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাহত হচ্ছিলো দীর্ঘদিন যাবত। একজন যায় আরেকজন আসে কিন্তু হারাধনের (সাধারণ শিক্ষার্থী) কথা কেউ ভাবেনি আগে। এর পিছনে ব্যর্থতার অন্যতম চিহ্ন ছিল রাকসু অচল করা। প্রত্যেক রাজনৈতিক দল এবং তাদের দোসর উপাচার্যরা চেয়েছে ছাত্ররা যাতে দমে থাকে, কথা না বলে। তাই রাকসু এবং হল সংসদগুলো বন্ধ করে রাখাই তাদের প্রধানতম কাজ ছিল। এমতাবস্থায় গণ-অভ্যুত্থানের পরে একজন ছাত্র বান্ধব ভিসি হিসেবে রাবিতে সালেহ হাসান নকীব স্যারকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাঁর প্রধান কাজ আমাদের অঙ্গীকার রক্ষা করা আর সেই অঙ্গীকারের অংশ দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা এবং ছাত্রদের ক্ষমতা তাদের হাতে ফিরিয়ে দেয়া। একমাত্র রাকসু সচল করা গেলেই অন্যান্য সকল দাবি তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে আদায় করতে পারবে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেই আমার বিশ্বাস।
লেখা: ফাহিম মুনতাসির রাফিন
শিক্ষার্থী: বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
আলোকচিত্রী ও স্বেচ্ছাসেবক: প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন।
“সংস্কার হোক নতুন উপাচার্যের মূল লক্ষ্য”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই বিপ্লব-২৪ এর মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ এবং তাদের দোসরদের পতন হয়েছে এবং সেসব জায়গাতে এসেছে নতুন মুখ; যাদের হাত ধরে সাধারণ মানুষ আশা করছে ব্যাপক সংস্কারের। প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীব স্যারের কাছে সততা,নিষ্ঠা,দক্ষতা, সদিচ্ছা এবং অভিজ্ঞতার প্রশ্নে কারোর ভিন্নমত নেই।
একটি স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত কাঠামোর ক্যাম্পাস,পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত প্রকাশ করা,কেন্দ্রীয় পাঠাগার সংস্কার,মেডিকেল সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধি, হলে মেধা ও জৈষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে সীট নিশ্চিত করা, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে পাঠাপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করা, শ্রেণীককক্ষগুলোর আধুনিকীকরণ, স্নাতকদের জন্য নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরীর জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেওয়াসহ একটি নামে নয় কাজের আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রাপ্তির স্বপ্ন নিয়ে তাঁর কাছে আমাদের অফুরন্ত প্রত্যাশা ও শুভকামনা।
লেখা: আইরিন সুলতানা আলো
শিক্ষার্থী : সমাজকর্ম বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
কার্যনির্বাহী সদস্য: মলাট
‘ আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি ‘
নতুন সূর্য উদিত হয়েছে বাংলাদেশে। যার নেপথ্যে সবচেয়ে বড় অবদান দেশের ছাত্রসমাজের। পরিবর্তনের এই ছোঁয়া থেকে বাদ যায়নি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও। গত ৫ সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে ননিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও দেশের অন্যতম বিজ্ঞানী জনাব ড.সালেহ হাসান নকীব স্যার। অভিনন্দন স্যারকে। আশা করি স্যারের হাত ধরেই এই বিশ্ববিদ্যালয় দেখাবে তার নতুন রূপ।
বিভাগীয় পরীক্ষার প্রত্যেক সেমিস্টারে ফর্ম-ফিলাপের সময় বিভাগীয় প্রধান ও হল প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষর সহ নানা কার্যক্রমে ভোগান্তি, পড়ালেখা শেষে সনদ তুলতে একই ভোগান্তি, প্রত্যেক বছর বিভাগীয় ভর্তি কার্যক্রমে তথ্য সংগ্রহ ও স্বাক্ষর নেওয়ার হয়রানি হতে হয়। এছাড়া দেশের অন্যতম বড় লাইব্রেরি হওয়া সত্ত্বেও বই সংগ্রহের সমস্যা এবং উন্নত যন্ত্রপাতি থাকার পরও ব্যবহার না করা সহ হল গুলোর সিট বন্টন ও নানা কাজের মাধ্যমে ভোগান্তির শিকার হয়ে এসেছে শিক্ষার্থীরা। পরিবর্তনের এই ধারায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্যের হাত ধরেই এই সকল কার্যক্রম আধুনিকায়ন হবে। এই প্রত্যাশা সকল সাধারণ শিক্ষার্থীর।
লেখা: গৌতম কুমার জয়
শিক্ষার্থী: বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক: কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট, রাবি
“পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি বাস্তবায়ন করতে হবে”
শিক্ষা সংস্কৃতি ও গবেষণায় পদ্মা বিধৌত এই মতিহার চত্বর দেশের অন্যতম প্রধান একটি বিদ্যাপীঠ। দীর্ঘ ৭১ বছরের পথচলায় বিশ্ববিদ্যালয়টি স্বীয় খ্যাতি ও অর্জনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অর্জন ও অবকাঠামো থাকলেও স্থবির হয়ে আছে সাংস্কৃতিক অঙ্গন। একসময় এই ক্যাম্পাস গান নাটক আবৃত্তি অভিনয় সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে মুখরিত থাকলেও এখন তা হারিয়ে যেতে বসেছে। পূর্ণাঙ্গ টিএসসি বাস্তবায়িত না হওয়ার ফলে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড নিয়মিত সংকীর্ণ হয়ে আসছে এবং বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। পর্যাপ্ত মহড়াকক্ষ, মঞ্চ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সাংস্কৃতিক অঙ্গন আজ হুমকির মুখে। জুলাই বিপ্লবের পর ক্যাম্পাসকে নতুন আঙ্গিকে সাজানোর বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য এবং প্রশাসন সেই সংস্কার অংশ হিসেবে সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে পুনর্গঠিত করার লক্ষ্যে পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি বাস্তবায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা দান করবে বলে আশা করছি।
লেখা: পরিষা রায়
শিক্ষার্থী: মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়