মুক্ত চিন্তা, মনন ও ব্যবহারিক জ্ঞানের একমাত্র জায়গা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্হায় তাত্ত্বিক জ্ঞানকে যতটুকু গুরুত্ব দেওয়া হয় সেই তুলনায় ব্যবহারিক জ্ঞানকে সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এজন্যই শিক্ষার্থীরা তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারে না। পুঁথিগত জ্ঞানকে ব্যবহারিক জ্ঞানে কাজে লাগানোর অন্যতম মাধ্যম হলো- ট্যুর। বিভিন্ন ধরনের ট্যুর যেমন কান্ট্রি ট্যুর, ফিল্ড ভিজিট, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুরের মাধ্যমেই শিক্ষার্থীরা ভিন্ন রকমের সংস্কৃতি, আচরণগত বিদ্যা এবং ব্যবহারিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারে।

তাত্ত্বিক জ্ঞানকে ব্যবহারিক কাজে কীভাবে কাজে লাগানো যায় সেই উদ্দেশ্য জানার জন্য সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ এর উদ্যোগে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্যুর এর আয়োজন করা হয়।
বৃহস্পতিবার এনিমেল প্রোডাকশন বিভাগের তত্ত্বাবধানে ৫ম সেমিস্টার এবং ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের মোট ৭৯ জন শিক্ষার্থী নিয়ে মিল্ক ভিটা (শাহজাদপুর) ও বাথান (রেশম বাড়ি) এর উদ্দেশ্যে সকাল ৭ টায় রওনা হয়।
মোট ৭৯ জন শিক্ষার্থীকে ২টি গ্ৰুপে ভাগ করা হয় এবং এই দুটি গ্ৰুপের নেতৃত্ব দেন ডাঃ মোঃ জামিনুর রহমান ও ডাঃ নওশীন আঞ্জুম মৌ। হালকা শীতকে উপেক্ষা করে সবাই হাজির বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বরে। সবাই বাসের সিট গ্ৰহণ করার পর ই বাস নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হলো এবং সবাই আনন্দে পুলকিত হয়ে উঠেছিলো। সকালে সবাই ক্ষুধার্ত পেট নিয়েই বাসে ভ্রমণ শুরু করেছে। কিন্তু ডিম খিচুড়ি এর মিশ্র ঘ্রাণ সবার ক্ষুধাকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে তুলেছিলো। যমুনার ওপারে যেয়ে সবাই তৃপ্তি সহকারে খাবার খেয়েছিলো। সকালের নাস্তা শেষে আবারও মিল্ক ভিটা এর উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। ঠিক সকাল ১১ টায় বাঘাবাড়ি মিল্ক ভিটায় পৌঁছে যায় আমাদের বাস। মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ সকল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা মূলক বক্তব্য প্রদান করে বিভিন্ন প্লান্টে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমেই ট্যুরের শিক্ষণীয় বিষয়ের সূচনা ঘটে। সেখানে প্রথমে দুগ্ধ সরবরাহ এবং সংগ্রহ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে দুধের ঘনত্ব ও দুধের স্বাভাবিক রঙ এবং অনান্য বিষয় দেখা হয়। এরপর বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঘি ও মাখন উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও, তরল দুধকে গুঁড়া দুধে পরিণত করার প্রক্রিয়াও স্ব- চক্ষে দেখানো হয়। পরিশেষে মিল্ক ভিটার উপ মহাব্যবস্থাপক ডাঃ মোঃ ছাইদুল ইসলামের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মিল্ক ভিটার ট্যুর শেষ হয়।
পড়ন্ত দুপুরে বাসে রওনা দিলাম বাথানের উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে দুপুরে হোটেলে অর্ডারকৃত ঝাল মোরগ পোলাও খাওয়া হয়। অতঃপর ৩ টায় আমরা পোতাজিয়ায় পৌঁছে যায় কিন্তু বাথানের রাস্তা সরু হওয়ায় ভ্যানে করে যেতে হয়েছিল। চারিদিকে সবুজ শ্যামলা এবং ফসলি আবাদি জমির মাঝে সরু রাস্তা দিয়ে মেঠোপথ পেরিয়ে ভ্যান চলেছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। নৌকায় পার হয়ে সবাই পৌঁছে গেলো কাঙ্খিত বাথানে। বাথানে সবুজ গোচারণ ভূমিতে অসংখ্য গরূর পাল দেখা গিয়েছিলো। নদীতে রঙ বেরঙের পাতিহাঁসের সাঁতার দেখে সবাই মুগ্ধ হয়েছিলো। আমরা সবাই হতবাক হয়েছি- দুধ দহনের সময় বাছুরকে নির্দিষ্ট নামে ডাকায় বাছুরগুলো ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছিলো। সবার ফটোশেসনের পরে আমরা নৌকায় পার হয়ে আবারো ভ্যানে উঠি। অতঃপর পোতাজিয়া পৌঁছায়। বাসে সবাই উঠার পর ই বাস সাভারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। বাসে সবাই গানের তালে নাচানাচি শুরু করে এবং রাত ১০ টায় ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনের সামনে পৌঁছে যায়।
ট্যুরের সার্বিক বিষয়ে এনিমেল প্রোডাকশন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ মোঃ রুকনুজ্জামান বলেন, তত্ত্বীয় জ্ঞানের বাস্তবিক প্রয়োগ স্বচক্ষে দেখার জন্যই এই আয়োজন। ভবিষ্যতেও যুগোপযোগী ফিল্ড রিলেটেড জ্ঞান আহরণের জন্য এই ধরণের প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে।
দিনটা যেমন ছিলো শিক্ষণীয়, ঠিক তেমনি আনন্দের। দু’ বছর পরে একাডেমিক পড়াশোনার পরিসমাপ্তি ঘটবে। কিন্তু হৃদয়ের মনিকোঠায় স্মৃতি হয়ে থাকবে ট্যুরের ইতি কথাগুলো। তত্ত্বীয় জ্ঞানকে ব্যবহার করে ব্যবহারিক শিক্ষা হয়ে উঠুক আগামীর কর্মজীবনের সূচনা।
মোঃ আনসারুজ্জামান সিয়াম
শিক্ষার্থী, ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদ।
গণ বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার।