কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের মাটিকে চাষাবাদের উপযোগী করে তুলতে প্রয়োজন সার। চাষিরা মাটির প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান দিতে নানা ধরনের সার তৈরি করে জমিতে ব্যবহার করেন। এতে যেমন ফসল ভালো হয়, তেমনি লাভবান হয় কৃষক। তাই তিন ধরনের সার সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন
কচুরিপানা সার: খাল-বিল, পুকুর-নদী প্রভৃতি জলাশয়ে কচুরিপানা পাওয়া যায়। একেই অনেক কৃষক সার হিসেবে ব্যবহার করেন। বলা যায় কচুরিপানার বিশেষ কদর রয়েছে। ভালো ফলনের জন্য মাটিতে তিন ধরনের পুষ্টি প্রয়োজন: নাটট্রোজেন, পটাশিয়াম ও ফসফরাস। এ তিন উপাদন কচুরিপানায় বিদ্যমান। তাই চাষি মাটির গুণাগুণ বজায় রাখার জন্য সার হিসেবে এটি ব্যবহার করছে। কচুরিপানা, মাটি ও ছাই দিয়ে তারা এক ধরনের কমপোস্ট তৈরি করেন। দুই মাসের মধ্যে এ কমপোস্ট উচ্চমানের সারে পরিণত হয়। কচুরিপানা সার মাটির জন্য বেশ উপকারী। এ সার মাটিতে বিদ্যমান ক্ষুদ্র জীব বাঁচিয়ে রাখে। এসব জীব সাধারণত মাটি পচিয়ে মাটির মধ্যে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে সহায়তা করে। এ সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা বাড়ে, ফসলও সতেজ হয়।
খামারজাত সার: গরু, মহিষ, ভেড়া,হাঁস-মুরগি প্রভৃতি গৃহপালিত জীবজন্তুর মলমূত্র খড়কুটোর সঙ্গে মিশিয়ে খামারের একপাশে জমা করে এক ধরনের খামারজাত সার তৈরি করা হয়। খামারজাত সারের প্রধান উপকরণ হচ্ছে পশুর মল, মূত্র, গোয়ালঘরে ব্যবহƒত খড় ও খাবারের অংশবিশেষ। এ ধরনের সারে মলের চেয়ে মূত্রভাগে অধিক নাইট্রোজেন ও পটাশিয়াম থাকে। তাই মূত্রকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। গোয়ালঘরের মেঝে থেকে মূত্র সহজে গড়িয়ে অন্য জায়গা বা নিচের দিকে গিয়ে নষ্ট হয়। তাই মেঝেতে খড় বা তুষ অথবা কাঠের গুঁড়োর বিছানা পেতে দিলে তাতে মূত্র শোষিত হয়ে থেকে যায়। তাই সেখানে আগের দিন বিছানা ভালো করে বিছিয়ে দিতে হবে যেন মূত্র সবটুকুই শুষে নিতে পারে। পরদিন সকালে এগুলো স্তূপ করা হয়। এখান থেকে উন্নতমানের খামারজাত সার তৈরি হয়। গরু-মহিষের ক্ষেত্রে যে দিকে দাঁড়িয়ে খড়কুটো খায়, তার পেছনের দিকে নালা করে দিতে হবে। জমা গোবর ও মূত্র একসঙ্গে গোবরের গাদা বা সরাসরি জমিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। খামারজাত সারের পরিমাণ ও গুণাগুণ নির্ভর করে গৃহপালিত জীবজন্তুর শ্রেণি, বয়স, খাদ্যের বিভিন্নতা, গোয়াল রের বিছানায় ব্যবহƒত দ্রব্যাদি, গাদায় সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রভৃতির ওপর। এ সার ভালোভাবে পচলে জমিতে ব্যবহার উপযোগী হয়।
কৃষিজমিতে বেশ কার্যকর খামারজাত সার। এ সার ব্যবহারে গাছ বেশ তরতাজা হয়। তবে এ সার সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। কারণ, গোবরে সূর্যের আলো সরাসরি পড়লে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে নাইট্রোজেনের ঘাটতি দেখা দেয় ও গোবর শুকিয়ে যায়। আর বৃষ্টি পড়লে নাইট্রোজেনসহ অন্যান্য খাদ্য উপাদান ও জৈব পদার্থের অপচয় হয়। এভাবে অপচয় হতে থাকলে সার হিসেবে কাজ করবে না। তাই মাটিতে গর্ত করে গর্তের তলদেশ ও চারপাশ ইট দিয়ে পাকা করে ওপরে চালা দিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
কুইক কম্পোস্ট সার: সাধারণ কম্পোস্ট সার তৈরি করতে অনেক সময় প্রয়োজন। তাছাড়া কম্পোস্ট সার তৈরিও বেশ কঠিন। তাই কুইক কম্পোস্ট সার ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি খুব কম সময় ও সহজে তৈরি করা যায়। সাধারণ কম্পোস্ট তৈরিতে দুই থেকে তিন মাস প্রয়োজন। কিন্তু কুইক কম্পোস্ট তৈরি করতে মাত্র ১৫ দিন লাগে। কুইক বলে মনে করা যাবে না যে, এর কার্যকারিতা কম। এটি মাটির পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মাটিতে থাকা অণুজীবের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া গাছের শিকড় ও অঙ্গ বাড়াতেও সহায়ক। এটি মালচিংয়ের কাজও করে। কুইক কম্পোস্ট তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ হচ্ছে পচা গোবর, কাঠের গুঁড়ো ও খৈল। খৈল গুঁড়ো করে কাঠের গুঁড়ো বা চালের কুড়া একসঙ্গে করে গোবর বা
হাঁস-মুরগির বিষ্ঠার সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। এ তিনটি উপাদান মেশালে এক ধরনের খামির মতো তৈরি হয়। পরে মিশ্রণটি স্তূপ করে রেখে দিলে তৈরি হবে কুইক কম্পোস্ট। এ সারে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়ামের পাশাপাশি অন্যান্য গৌণ উপাদানও পাওয়া যায়।