কবুতরের বর্ষাকালীণ রোগ-ব্যাধি ও প্রতিকার

কবুতরের বর্ষাকালীণ রোগ-ব্যাধি ও প্রতিকার

শান্তির প্রতীক, মানব সভ্যতার প্রাথমিক পর্যায়ের বার্তাবাহক হচ্ছে কবুতর। সৌখিনতায় কবুতর পালন বহুকাল ধরে সমাদৃত। বর্তমানে খামার পর্যায়ও কবুতর পালন শুরু হয়েছে । যার কারণে অনেকে আজ এটিকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। মুরগীর তুলনায় রোগ প্রতিরোধ কবুতরের বেশি হলেও রোগ-ব্যাধিতে এর পালককে কম ভোগান্তি পোহাতে হয়না। তবে বেশির ভাগ সমস্যা তৈরী হয় অপর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনার দরুন। আমাদের দেশে বর্তমানে বর্ষাকাল চলছে , এ সময়ে প্রতিবছরে নানান রোগের প্রার্দূভাব বৃদ্ধি পায় এতে করে প্রচুর পাখি মারা যায়।

যে সকল রোগ-ব্যাধি বর্ষাকালে কবুতরে হয়ে থাকেঃ

১। প্যারাটাইফয়েড: খাবারের প্রকৃতি ও দূষিত খাবার এর প্রধান কারণ।

২। কোক্সিডিওসিস : অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এর জন্য দায়ী।

৩। ক্যাঙ্কার/ ট্রাইকোমোনিয়াসিসঃ অপ্রতুল খাবার ও কবুতরের খাঁচার পরিবেশ এ রোগের প্রাদূরভাব বৃদ্ধি করে।

৪। অন্তঃপরজীবী

৫। বহিঃপরজীবী/ মাইট

রোগ লক্ষণঃ

১। প্যারাটাইফয়েডঃ

ওজন কমে যাবে

ঘন ঘন পানি পান করবে

সবুজাভাব পায়খানা করবে ডায়রিয়া দেখা দিবে।

এক চোখ অন্ধ হয়ে যাবে।

অনুর্বর ডিম প্রদান করবে।

শারীরিক ভারসম্যহীনতা ও প্যারালাইসিস দেখা দেয়।

ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়,ঘাড় বেঁকে যায়।

২। কোক্সিডিওসিসঃ

ক্ষুদামন্দা,শারীরিক ওজন হ্রাস

রেসিং কবুতরের পারফরম্যন্স হ্রাস, উড়তে স্বাচ্ছন্দবোধ করে না

ডায়রিয়াতে পায়খানার নরম এবং মাঝে মাঝে মিউকাস পাওয়া যায়।

বিষ্ঠা পরীক্ষা করলে কোক্সিডিয়ান প্যারাসাইট এর ডিম (ওসিস্ট)পাওয়া যায়।

৩। ট্রাইকোমইয়াসিস/ ক্যাঙ্কারঃ

নাক, মুখে (ফ্যারিংস) ঘাড়ে ক্যাঙ্কার (ফোলা) চিহ্ন পাওয়া যায়।

শ্বাস কষ্ট দেখা দেয়।

নেভাল, ভেন্ট, চোখেও ফোঁড়া দেখা দেয়।

প্রাপ্ত বয়স্ক কবুতরে কম লক্ষন প্রকাশ পেলেও, অল্প বয়স্ক কবুতরে এর প্রাভাব মারাতœক ও প্রাণঘাতি হয়ে থাকে।

খাওয়া-দাওয়া প্রায় বন্ধ করে দেয়।

প্রচুর পানি পান করে, কিন্তু সে তুলনায় খাবার অনেক কম খায়।

৪। অন্তঃ ও বহিঃ পরজীবিঃ

রোগ ইতিহাস, পারাসাইট (পরজীবী), পরজীবীর ডিম দেখে

পাখির ওজন হ্রাস, দুর্বল হয়ে যাওয়া থেকে এরোগ নির্ণয় করা হয়।

চিকিৎসাঃ

১। প্যারাটাইফয়েড: ইনজেকশন প্রতিটি পাখিকে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা ব্যবধানে রোগের অবস্থা অনুসারে প্রদান করতে হবে। সেই সাথে খাবার পানির সাথে প্রয়োজন মত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে প্রদান করতে হবে।

২। কোক্সিডিওসিস : খাবার পানির সাথে নিয়মিত প্রয়োজন অনুসারে প্রদান করতে হবে।

৩। ক্যাঙ্কার (ঈধহশবৎ)/ ট্রাইকোমোনিয়া সিসঃ ৩০সম প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের হিসেবে ওরালি ৫দিন খাওয়াতে হবে।

৪। অন্তঃ ও বহিঃ পরজবীঃ

৫০০সম/ প্রতি কেজি অথাবা ৭.৫সম প্রতি কেজি দৈহিক ওজন হিসেবে প্রদান করলে সুফল পাওয়া যায়। তাছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

কবুতরের রোগ-ব্যাধি ও চিকিৎসা ছকঃ

প্রতিকার

১। প্রতিদিন খাঁচা ও কবুতরের দিকে নজর রাখতে হবে। যে কোন ধরণের সমস্যা দেখা দিলে, তার ততক্ষণাত ব্যবস্থা নিতে হবে।

২। নিয়মিত কবুতরের খাঁচা ও আশপাশ এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে।

৩। বাসি খাবার খাওয়ানো যাবে না।

৪। খাবার ও পানির পাত্র জীবাণু মুক্ত রাখতে হবে।

৫। দু সপ্তাহ পর পর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারি ঔষধ প্রদান করতে হবে।

৬। কবুতরের খাঁচা পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ বায়ু প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

৭। দৈনিক ব্যায়াম করার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখতে হবে।

৮। খাঁচায় যাতে পানি প্রবেশ করতে না পাড়ে সে দিকে নজর রাখতে হবে।

৯। প্রতি সপ্তাহে জীবাণু নাশক দ্বারা খাঁচা ও খাঁচার আশপাশ এলাকা জীবাণু মুক্ত করতে হবে।

১০। বর্ষাকালে কবুতরের বাচ্চা উৎপাদন না করায় ভালো।

১১। জরুরী প্রয়োজনে ব্যবহার্য ঔষধ সংগ্রহ করে রাখতে হবে।

https://www.youtube.com/watch?v=Geg0SPadJxM

 

কবুতরকবুতর পালনকবুতরের চিকিৎসাকবুতরের দামকবুতরের বর্ষাকালীণ রোগ-ব্যাধিকবুতরের রোগ