বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে কচু চাষ হয়। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের পাহাড়গুলোয় সমতলের তুলনায় অব্যবহƒত ঢালু জমিতে বেশি কচু চাষ হয়। ফলন ভালো হওয়ায় বেশ আগ্রহী এসব স্থানের অনেক চাষি। আর কচুর বাজারদরও তুলনামূলক ভালো। তাই পাহাড়ের মাঝারি গড়নের পতিত টিলা ভূমিতে কচু চাষ করে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখেন এসব অঞ্চলের চাষিরা। তাছাড়া প্রাচীনকাল থেকে কচু চাষের জন্য বিখ্যাত এ অঞ্চলগুলো। এ কারণে বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ এ কচু চাষাবাদের বিস্তৃতিও ঘটছে। পাহাড়ে চাষ করা এ সবজিটি ‘পাহাড়ি কচু’ নামে অধিক পরিচিত হলেও কৃষি বিভাগের কাছে এর নাম ‘মুখিকচু’।
মুখিকচুর মান ভালো করার জন্য রোপণের আগে কৃষকরা জমিতে বেশ কয়েকবার চাষ দেন। চাষের পর মাটি সমান করে মুখিকচু রোপণের জন্য লাঙল দিয়ে সারি অনুযায়ী নালা টেনে নেন। এরপর নির্দিষ্ট দূরত্বে কচুর কন্দ ফেলে দুপাশের মাটি টেনে ঢেকে দেন। এপ্রিল থেকে মে মাস কচু রোপণের নির্দিষ্ট সময়। রোপণের ছয় থেকে সাত মাস পর ফসল তোলার উপযুক্ত সময়। অর্থাৎ অক্টোবরে তাদের ফসল তুলে বাজারজাত করতে হয়। কেউ কেউ অধিক লাভের আশায় আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরেও বাজারজাত করেন।
পাহাড়ি অঞ্চলের আবহাওয়া আর পাহাড়ি মাটি কচু চাষের জন্য উপযোগী। এ চাষাবাদে আগাছা পরিষ্কার ছাড়া খুব বেশি পরিমাণ সার-কীটনাশক লাগে না। মুখির ছড়া বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গাছ হলুদ হয়ে শুকিয়ে গেলে তুলতে হয়। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ কচু সমতল জেলার কচুর চেয়ে সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা ও বাজারদর অনেক বেশি। জানা যায়, এখানে প্রতি হেক্টর জমিতে ১০০০ কেজির মতো বীজ রোপণ করে প্রায় ১২ থকে ১৩ হাজার কেজি ফলন পাওয়া যায়। অন্য যে কোনো কচুর চেয়ে এ কচু ঘ্রাণ ও স্বাদে ভিন্ন হওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। শুধু কচু-ই নয়, পোঁপারও (কচুর ফুল) চাহিদা রয়েছে বেশ।
এখানকার চাষিদের কাছ থেকে জানা যায়, কচুর ফুল যত বড় হয় ফলনও তত ভালো হয়। এটাই কচুর ভালো ফলন বোঝার উপায়। পাহাড়ে কচু আবাদের সময় পুরো পাহাড়জুড়ে সবুজ আর সবুজের সমারোহ নজর কাড়ে। আকার-আকৃতিতে প্রতিটি চারাই একেকটি গুচ্ছে পরিণত হয়। ডগায় ডগায় উজ্জ্বল ফুলের ছড়াছড়ি চোখে পড়ে। চাষিরা এর বেশ যতœ নেন। তাই অক্টোবর এলেই কচু বিক্রির ধুম পড়ে যায়, এতে প্রচুর লাভবান হন কৃষক। তাছাড়া এ কচু উৎপাদনে খরচ কম হওয়ায় এর চাষে প্রান্তিক চাষিদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
কচু চাষে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানকার চাষিরা আরও লাভবান হবেন। তাদের আগ্রহ বাড়বে বলে স্থানীয়রা মনে করেন। এতে করে পাহাড়ের মানুষের
আর্থ-সামাজিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। জানা যায়, এ পাহাড়ি কচু দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। এমনকি রপ্তানিও করা হয়। তাই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি। এর মধ্য দিয়ে মুখিকচু চাষ হয়ে উঠতে পারে পাহাড়ের মানুষের ভাগ্যবদলের অন্যতম হাতিয়ার।