অ্যালোভেরা নামটি এখন কমবেশি সবার কাছে বেশ পরিচিত। বিশেষ করে তরুণীদের কাছে এটি বেশ প্রিয় হয়ে উঠেছে। কাঁটা ও জেলিযুক্ত এ উদ্ভিদটি প্রাচীনকাল থেকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়ে এলেও ইদানীং রূপচর্চায় গুরুত্ব পেয়েছে অধিক। কিন্তু দেশে এর চাষ অহরহ দেখা যায় না। অ্যালোভেরা নামটি পরিচিত হলেও এর চাষ সম্পর্কে চাষিরা তেমন অভিজ্ঞ নয় বলেই হয়তো চাষ হয় না। তবে চাষ একেবারেই যে হয় না তা নয়। হাতে গোনা কয়েকটি জেলায় এর চাষ দেখা যায়। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ, বগুড়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে অ্যালোভেরা চাষ করে জীবন বদলেছে স্থানীয় চাষিদের। চলুন এর চাষ সম্পর্কে কিছু জেনে নেই
অ্যালোভেরার চাষ বেশ সহজ, খরচও তুলনামূলক কম। পাতা থেকে এর গাছ হয়। তাছাড়া খুব বেশি যত্নআত্তির প্রয়োজন হয় না। চিরসবুজ এ উদ্ভিদ উষ্ণ আবহাওয়া অঞ্চলে ঝোপ বা গুচ্ছ আকারে জন্মে এটি। এর পাতা তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এ পাতার ভেতরে অবস্থিত জেলি অংশটুকু ব্যবহার করা হয়।
মাটি ও জলবায়ু:
প্রায় সব ধরণের জমিতে অ্যালোভেরার চাষ করা যায় না। তবে দোঁ-আশ ও অল্প বালু মিশ্রিত মাটিতে গাছের বৃদ্ধি ভালো হয়। যেসব জমিতে পানি জমে না এমন উঁচু জমি এটি চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। লবণাক্ত ও অম্লীয় মাটি এর জন্য ভালো নয়। নিচু ও পানি জমে এমন স্থানে গাছ পচে যায়। সুতরাং অ্যালোভেরা চাষের জন্য প্রয়োজন সারাদিন রোদ।
রোপণের সময়:
বছরের যে কোনো সময় অ্যালোভেরার চাষ করা যায়। তবে জুনে অর্থাৎ আষাঢ়ের শুরুতে গাছ লাগালে তা দ্রুত বাড়ে। আর শীত ও বর্ষাকালে চারা না লাগানোই ভালো। সাধারণত অক্টোবর থেকে নভেম্বর অর্থাৎ আশ্বিন-কার্তিকে চারা লাগানো উত্তম। তাই চাষিরা এ সময় অ্যালোভেরা রোপণে ব্যস্ত থাকেন।
জমি তৈরি:
জমি প্রথমে ভালোভাবে পরিষ্কার করে চাষ দিতে হবে। চাষের সময় গোবর মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারলে। অনেকে ছাই ব্যবহার করেন। চাষ হয়ে গেলে জমিতে বেড তৈরি করতে হবে। বেড হবে এক দশমিক পাঁচ থেকে দুই দশমিক ২৫ মিটার চওড়া। প্রতি দুই বেডের মাঝে ৪০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার নালা রাখতে হবে।
চারা রোপণ:
যেহেতু এর পাতা থেকে গাছ হয়, সেহেতু বেডে এর পাতা রেখে চাষ করা যেতে পারে। অথবা এর চারা কিনতে পারেন। চারা থেকেও করা যেতে পারে। বাণিজ্যিকভাবে করতে চাইলে চারা লাগানোই উত্তম। চারা লাগিয়ে পাতা তোলার জন্য ছয় মাস অপেক্ষা করতে হয়। তবে তিন মাসের মাথায় পাতা কেটে বিক্রি করা যায়। একটি গাছ থেকে প্রায় ৫০টি পাতা তোলা যায়। দীর্ঘদিন জমিতে থাকার পর গাছের গোড়া যখন লম্বা হয়ে যায় ও গাছ যখন খাড়া থাকতে পারে না, তখন গাছ কেটে দুই-তিনটি পাতা বাদ দিয়ে সেসব গাছ আবার জমিতে লাগানো যায়। লাগানো গাছ যেন সুস্থ-সবল হয় সেদিক লক্ষ্য রাখতে হবে।
রোপণ দূরত্ব:
চারা সারি করে লাগানো হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব সাত ইঞ্চি ও প্রতি সারিতে ছয় ইঞ্চি পরপর চারা লাগাতে হবে। এক বিঘা জমিতে প্রায় তিন হাজার গাছ লাগানো যায়।
সার ও সেচ:
অ্যালোভেরা চাষে সাধারণত কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে ব্যবহার করতে হয় খৈল বা নিম খৈলের মতো জৈব সার। জমি তৈরির সময় জৈব সার ব্যবহার করে চাষ করতে পারেন। নিয়মিত সেচের দরকার হয় না। আর হলেও সেচ দেওয়ার পর গাছের গোড়ায় যাতে পানি না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ইউরিয়া সার দিতে চাইলে একবার ব্যবহারই যথেষ্ট। ইউরিয়া সার জমিতে ছিটিয়ে দিলে চলে। সার ছিটানোর পর আগাছা নিড়িয়ে মাটির সঙ্গে সার মিশিয়ে দিতে হয়। অতিরিক্ত ইউরিয়া সার দিলে রোগের আক্রমণ ও প্রকোপ বেড়ে যায়। শুষ্ক মৌসুমে জমিতে প্রয়োজন মতো সেচ দিতে হবে। মাঝেমধ্যে জমির আগাছা নিড়িয়ে দিতে হবে। অ্যালোভেরার গাছ জমিতে প্রায় দুই বছর থাকে। তাই এটি চাষ করে বেশ লাভবান হয় চাষিরা।
রোগবালাই:
অ্যালোভেরার গাছ রোগে আক্রমণ হয় খুব কম। শুধু গোড়া পচা রোগ ও জাব পোকার আক্রমণ দেখা যায়। যদি গাছের গোড়ায় পানি জমে না থাকে তাহলে গোড়া পচা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আর পোকার জন্য একবার কীটনাশক ওষুধ স্প্রে করলে নিস্তার পাওয়া যায়।