ভূমিকা
ক্যাপসিকাম, যা সাধারণত “বেল পিপার” নামে পরিচিত, এটি বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য একটি লাভজনক সবজি চাষ হতে পারে। চাহিদা বাড়ার কারণে এটি চাষ করে ভালো আয় করা সম্ভব। সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করলে স্বল্প সময়ে ভালো উৎপাদন সম্ভব।
উপযুক্ত জলবায়ু ও মাটি
ক্যাপসিকাম চাষের জন্য উষ্ণ ও শীতল জলবায়ু উপযুক্ত। মাটি উর্বর ও সুনিষ্কাশিত হতে হবে। দোআঁশ বা বেলে-দোআঁশ মাটি ক্যাপসিকাম চাষের জন্য সর্বোত্তম। মাটির pH মান ৬.০-৬.৫ হলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
ক্যাপসিকাম চাষের পদ্ধতি
১. বীজ নির্বাচন ও চারা প্রস্তুতি
উন্নত জাতের ক্যাপসিকাম বীজ নির্বাচন করা জরুরি। হাইব্রিড জাত যেমন বারি ক্যাপসিকাম-১, বারি ক্যাপসিকাম-২ চাষ করলে ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়। বীজতলায় বীজ বপন করে ২৫-৩০ দিন পর চারা মূল জমিতে রোপণ করতে হয়।
২. জমি প্রস্তুতি
জমি ভালোভাবে চাষ করে মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে। জমি তৈরির সময় ১০-১৫ টন গোবর সার দিতে হয়। জমি প্রস্তুতির সময় চারা রোপণের জন্য ৫০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রেখে সারি তৈরি করতে হয়।
৩. চারা রোপণ ও পরিচর্যা
চারা রোপণের সময় সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০-৬০ সেন্টিমিটার এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪০-৫০ সেন্টিমিটার রাখতে হয়।
সার প্রয়োগ
ক্যাপসিকাম গাছের জন্য নিম্নলিখিত সারের পরিমাণ প্রযোজ্য:
- গোবর সার: ১০-১৫ টন/হেক্টর
- ইউরিয়া: ১৫০-২০০ কেজি/হেক্টর
- টিএসপি: ১০০-১৫০ কেজি/হেক্টর
- এমওপি: ১০০-১৫০ কেজি/হেক্টর
সার প্রয়োগ করার সময় গোবর সার জমি তৈরির সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়।
রোগ ও পোকা দমন
ক্যাপসিকাম চাষে বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ হতে পারে। সাধারণত ব্লাইট, ডাউনি মিলডিউ, লিফ স্পট রোগ দেখা দেয়। প্রতিকার হিসেবে বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে। এফিড ও জ্যাসিড দমন করতে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফসল সংগ্রহ
চারা রোপণের ৭০-৮০ দিনের মধ্যে ক্যাপসিকাম সংগ্রহযোগ্য হয়। কাঁচা অবস্থায় বা পাকলে সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি গাছে ১০-১৫টি ক্যাপসিকাম ফলন দিতে পারে।
বাজারদর ও লাভ
ক্যাপসিকামের বাজারদর অন্যান্য শাক-সবজির তুলনায় ভালো। মৌসুম অনুযায়ী ক্যাপসিকামের দাম ওঠানামা করে। প্রতি কেজি ৮০-২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।
উপসংহার
সঠিক পরিকল্পনা ও যত্ন সহকারে ক্যাপসিকাম চাষ করলে কৃষকরা সহজেই ভালো আয় করতে পারেন। চাষের পাশাপাশি সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের দিকে নজর দিলে লাভ আরও বাড়তে পারে।