এপেক নেতাদের ৩২তম অনানুষ্ঠানিক সভার দ্বিতীয় পর্যায়ের সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট সি’র বক্তৃতা

সম্মানীয় প্রেসিডেন্ট লি জাই-মিং,

সহকর্মীরা,

বর্তমানে, নতুন দফা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং শিল্প-বিপ্লব গভীরভাবে বিকশিত হচ্ছে, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো অগ্রগামী প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতি মানবজাতির জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। একই সময়ে, বিশ্ব-অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির গতি অপর্যাপ্ত, বৈশ্বিক উন্নয়ন ঘাটতি প্রসারিত হচ্ছে, এবং জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তার মতো চ্যালেঞ্জগুলো তীব্রতর হচ্ছে। এপেক অর্থনীতিগুলোর পারস্পরিক সুবিধাজনক সহযোগিতা জোরদার, নতুন সুযোগ কাজে লাগানো এবং নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা উচিত, যাতে আমরা সম্মিলিতভাবে একটি টেকসই ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারি।

এ জন্য, আমি তিনটি প্রস্তাব দিতে চাই: প্রথমত, ডিজিটাল ও বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতায়ন শক্তিশালী করে এপেকের উদ্ভাবনী উন্নয়নে নতুন সুবিধা তৈরি করতে হবে। আমাদের নতুন প্রযুক্তির চালিকা ও ক্ষমতায়নমূলক ভূমিকা সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে, ডিজিটালকরণ, বুদ্ধিবৃত্তিককরণ ও সবুজায়নের সুযোগ দ্রুত ধরতে হবে এবং নতুন গুণগত উৎপাদন শক্তির বিকাশ ত্বরান্বিত করতে হবে। ডেটার মৌলিক সম্পদ ও উদ্ভাবন ইঞ্জিনের ভূমিকা সক্রিয় করতে হবে, ডেটার নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল প্রবাহ এগিয়ে নিতে হবে এবং উচ্চ-গুণমানের ডিজিটাল অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। প্রযুক্তির উন্মুক্ত-উৎস ও উন্মুক্ত সহযোগিতা গভীর করতে হবে এবং একটি প্রতিযোগিতামূলক উন্মুক্ত উদ্ভাবন বাস্তুতন্ত্র গড়ে তুলতে হবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি বিশ্বের সকল দেশ ও অঞ্চলের মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সমগ্র মানবজাতির কল্যাণকে বিবেচনায় নিয়ে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপকারী, নিরাপদ ও ন্যায়সঙ্গত দিকে স্বাস্থ্যকর ও সুশৃঙ্খল উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। চীন বিশ্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে, এবং উন্নয়ন কৌশল, শাসন নিয়ম, প্রযুক্তিগত মান ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গণপণ্য সরবরাহ করতে ইচ্ছুক। চীন এপেক সদস্যদের সাথে একত্রে জনগণের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দক্ষতা উন্নত করতে এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ডিজিটাল ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিভাজন দূর করতে প্রস্তুত।

দ্বিতীয়ত, সবুজ ও নিম্ন-কার্বন নীতি অব্যাহত রেখে এপেকের টেকসই উন্নয়নের নতুন মডেল তৈরি করতে হবে। সবুজ পাহাড় ও পরিষ্কার জল হল, সোনার ও রূপার পাহাড়। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে, বিভিন্ন অর্থনীতির সবুজ উন্নয়ন কৌশলগুলোর সংযোগ শক্তিশালী করতে হবে, উচ্চ-গুণমানের সবুজ প্রযুক্তি ও পণ্যের অবাধ প্রবাহ সুবিধাজনক করতে হবে, উন্নয়ন পদ্ধতির সবুজ ও নিম্ন-কার্বন রূপান্তর ত্বরান্বিত করতে হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তন সক্রিয়ভাবে মোকাবেলা করতে হবে। সাধারণ কিন্তু পৃথকীকৃৎ দায়িত্ব বাস্তবায়ন করতে হবে, এবং উন্নত অর্থনীতিগুলোকে উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল, প্রযুক্তি, সক্ষমতা নির্মাণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অব্যাহত সমর্থন প্রদানের জন্য উৎসাহিত করতে হবে।

চীন ৫ বছর আগে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ শীর্ষবিন্দু ও কার্বন নিরপেক্ষ লক্ষ্য ঘোষণা করার পর থেকে, বিশ্বের বৃহত্তম ও দ্রুততম বর্ধনশীল নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, এবং ব‍্যাটারি গাড়ি, লিথিয়াম ব্যাটারি, ফটোভোলটাইক শিল্পের দ্রুত উন্নতি হয়েছে। চীন ইতোমধ্যেই ২০৩৫ সালের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করার জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান লক্ষ্য জমা দিয়েছে, এবং কার্বন নিঃসরণের মোট পরিমাণ ও তীব্রতা নিয়ন্ত্রণের দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করবে। চীন এপেকের ডিজিটাল ও সবুজ রূপান্তর সাব-ফান্ড প্রতিষ্ঠার জন্য অনুদান দিয়েছে এবং পরিচ্ছন্ন শক্তি, সবুজ রূপান্তর সম্পর্কিত উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখবে।

তৃতীয়ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাপূর্ণ ভাগাভাগি বাস্তবায়ন করে এপেকের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের নতুন চিত্র উপস্থাপন করতে হবে। আমাদের জনগণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে, নীতি সংলাপ, অভিজ্ঞতা বিনিময় ও বাস্তবসম্মত সহযোগিতা জোরদার করতে হবে, জাতিসংঘের ২০৩০ টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডা সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করতে হবে, দারিদ্র্য দূর করতে হাত মিলাতে হবে এবং এপেকের সকল মানুষের সাধারণ সমৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। এপেকের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বিকাশের ঐতিহ্যবাহী সুবিধা সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে, এপেক অর্থনীতিগুলোকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ‘ইলেকট্রনিক বাণিজ্য চুক্তরি’র জন্য প্রথমে চেষ্টা করতে উৎসাহিত করতে হবে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি রূপান্তর, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে সহযোগিতা গভীর করতে হবে, এবং উন্নয়নশীল অর্থনীতিগুলোর ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন অর্জনে সহায়তা করতে হবে।

চলতি বছর, দক্ষিণ কোরিয়া জনসংখ্যা কাঠামোগত পরিবর্তন মোকাবেলায় সহযোগিতা প্রস্তাব করেছে, যা এপেকের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে সহায়ক। চীন সমগ্র জনগোষ্ঠী ও সারাজীবনব্যাপী জনমানুষের সেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে, সিলভার ইকোনমি ব্যাপকভাবে বিকাশ করবে এবং জনসংখ্যার উচ্চ-গুণমান উন্নয়ন এগিয়ে নেবে। চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে স্বাস্থ্য সহায়তা, নারীদের ডিজিটাল সাক্ষরতা উন্নয়ন ইত্যাদি উদ্যোগ বাস্তবায়ন তরান্বিত করবে, যাতে আরও সহযোগিতার ফলাফল এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের মানুষ উপভোগ করতে পারে।

‘একা উঠতে কষ্ট হয়, দলবদ্ধভাবে এগুলে সহজে এগুতে পারে।’ চীন সকল পক্ষের সাথে একত্রে উদ্ভাবন, সমন্বয়, সবুজ, উন্মুক্ত ও ভাগাভাগি উন্নয়নের ধারণা বজায় রেখে, এশিয়া-প্যাসিফিক কমিউনিটি গড়ে তুলতে হাত মিলাতে ইচ্ছুক।

সূত্র: সিএমজি