চীনকে প্রযুক্তি স্বনির্ভর করছে অপটিক্স ভ্যালি

ফয়সল আবদুল্লাহ, সিএমজি বাংলা: সারা বিশ্ব এখন অপটিক্যাল ফাইবারের সুতোয় গাঁথা। চীনে আছে সেই অপটিক্যাল ফাইবার তৈরির একটি হাইটেক অঞ্চল—হুবেই প্রদেশের ইস্ট লেক হাইটেক ডেভেলপমেন্ট জোন। চীনের অপটিকস ভ্যালি খ্যাত এই অঞ্চলটি চীনের প্রথম অপটিক্যাল ফাইবার ও অপটো ইলেকট্রনিক্স ট্রান্সমিশন সিস্টেমের হাই টেক হাব। চীনের অপটোইলেক্ট্রনিক শিল্পে এই অঞ্চলটি শুধু এগিয়েই নেই, বরং চীনের প্রযুক্তি স্বনির্ভরতার উদাহরণও তৈরি করেছে এই অপটিক্স ভ্যালি।

হুবেইর রাজধানী উহানে গড়ে ওঠা এটাই চীনের প্রথম অপটিক্যাল ফাইবার শিল্পাঞ্চল। উদীয়মান হাই-টেক হাব হিসেবে এরইমধ্যে খ্যাতি পেয়েছে এলাকাটি।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং প্রথমবারের মতো এই অপটিক্স ভ্যালি পরিদর্শন করেন। ওই সময় ইয়াংজি অপটিক্যাল ফাইবার এবং ক্যাবল জয়েন্ট স্টক লিমিটেড কোম্পানি ওয়াইওএফসি-এর কারখানা পরিদর্শন করেন তিনি। অপটিক্যাল ফাইবার তৈরির প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন তিনি।

ওই সফরে এই প্রযুক্তির প্রতি দৃঢ় আগ্রহ দেখিয়েছিলেন সি চিনপিং এবং জোর দিয়েছিলেন চীনের প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতার ওপর।

ওয়াইওএফিস’র নির্বাহী পরিচালক চুয়াং তান বলেন, ‘প্ল্যান্ট পরিদর্শনের সময় আমি প্রেসিডেন্ট সি’র সঙ্গে ছিলাম। তাকে বলেছিলাম, এখানে যে সরঞ্জাম রয়েছে সেগুলো আমদানি করা হলেও আরেকটি কারখানার সমস্ত যন্ত্রপাতিগুলো ওয়াইওএফসির নিজস্ব নকশায় তৈরি করা। সি তখন সরঞ্জাম ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে দেশীয় উৎপাদনে বেশ আগ্রহ দেখিয়েছিলেন।’

ওই সময় ওয়াইওএফসি প্রতিষ্ঠানটি শুধু অপটিক্যাল ফাইবার প্রিফর্ম উৎপাদনের জন্য  পিসিভিডি প্রযুক্তি আয়ত্ত করেছিল। এ প্রযুক্তিতে তখন বিশ্ববাজারে এগিয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান।

তবে চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, কোম্পানিটি উন্নত প্রযুক্তির সন্ধানে নিজস্ব গবেষণা দল গঠন করে নিজেদের মতো করেই উদ্ভাবনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

ওই সময় অপটিক্স ভ্যালিতে সি’র সফরের তিন মাস পর, সিপিসির ১৮তম কেন্দ্রীয় কমিটির তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ব্যবস্থার সংস্কার গভীর করার প্রস্তাব দেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় জাতীয় মূল পরীক্ষাগার ব্যবস্থার পুনর্গঠন করে।

এরপরই অপটিক্যাল ফাইবার উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় পরীক্ষাগার হয়ে ওঠে ওয়াইওএফসি।

চুয়াং তান আরও বলেন, ‘প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের সময় দৃঢ় নীতিগত সমর্থন পেয়েছে ওয়াইওএফসি। শেষ পর্যন্ত এ কারণেই প্রযুক্তি বাজারে প্রতিষ্ঠানটি তার উপস্থিতি প্রকাশে নতুন মাইলফলক তৈরি করতে পেরেছে।’

বিদেশি একচেটিয়া আধিপত্য ভাঙতে প্রাসঙ্গিক বিভাগগুলি জাতীয় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি প্রধান প্রকল্প, শিল্প তহবিল, কর প্রণোদনা এবং বিনিয়োগ ও অর্থায়ন ব্যবস্থার সংস্কারের মতো ক্ষেত্রগুলিতে একাধিক সংস্কার ব্যবস্থা চালু করেছে।

চায়না ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজিস গ্রুপ কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান লু কুয়োছিং জানালেন, ‘এখানে এখন প্রাতিষ্ঠানিক কৌশলগত ব্যবস্থাপনার একটি বড়সড় সেট তৈরি হয়েছে, যা উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে। এখানে ভুল করলে তা শোধরানোর সুযোগও আছে, যার ফলে সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে ও পুরোপুরি নিবেদিত হয়ে কাজ করতে পারে।’

২০২২ সালের এখানকার এইজি লেজার নামের একটি লেজার সরঞ্জাম প্রতিষ্ঠান সফরের সময় সি জোর দিয়েছিলেন যে, চীনের জনগণকে অবশ্যই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মূল শিকড়টা নিজের হাতে রাখতে হবে এবং দেশের উন্নয়নকে আরও স্বনির্ভর করতে হবে।

অপটিক্স ভ্যালিতে সির তিনটি সফর ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। গত এক দশকে, অপটিক্স ভ্যালিতে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৭ হাজার থেকে এক লাখ ৪০ হাজারে উন্নীত হয়েছে এবং আঞ্চলিক জিডিপি ২৭০ বিলিয়ন ইউয়ানের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।

গত এক দশক ধরেই এখানকার লেজার সরঞ্জাম বিশ্ব বাজারের শীর্ষস্থান দখল করে আছে এবং ক্রমশ উদ্ভাবন জগতের ভবিষ্যৎ হতে চলেছে মধ্য চীনের এই অপটিক্স ভ্যালি।

তথ্যসূত্র: সিসিটিভি

chinachina technologytechnology