চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের কুয়াংচৌতে ১২ বছর বয়সী এক কিশোরীর এমন এক মৃগীরোগ হয়েছিল, যা প্রচলিত কোনো ওষুধে সারছিল না। চীনা গবেষকরা ওই মেয়ের মস্তিষ্কের সংকেত রিয়েল টাইমে পর্যবেক্ষণ করতে প্রতিস্থাপন করেন ইমপ্লান্টেবল ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস ডিভাইস (বিসিআই)। এটি ব্যবহার করেই তারা সুনির্দিষ্ট নিউরাল মড্যুলেশন সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন।
সোমবার সাউদার্ন মেডিকেল ইউনিভার্সিটির চুচিয়াং হাসপাতালের ডাক্তাররা সম্পন্ন করেন এই অস্ত্রোপচার। দক্ষিণ চীনে প্রথমবারের মতো এ অপারেশন হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
‘ক্লোজড-লুপ ব্রেন অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড স্টিমুলেশন সিস্টেম, বা এএনএস, ইমপ্ল্যান্ট করার মাধ্যমে, অস্বাভাবিক স্নায়বিক কার্যকলাপকে সুনির্দিষ্টভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব’। জানালেন, হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক কুও ইয়ানউ।
২০১৬ সালে মাত্র ৩ বছর বয়সে মেয়েটির মৃগী ধরা পড়ে। প্রাথমিক চিকিৎসার পর, তার রোগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও পরে ওষুধের কার্যকারিতা কমে যায় এবং ২০২৪ সালের মধ্যে মেয়েটি রাতে পাঁচ থেকে ছয়বার রোগের তীব্রতার মুখে পড়ে।
২০২৪ সালের জুলাই মাসে, হাসপাতালে তার একটি রোবট-সহায়তায় স্টেরিওট্যাকটিক ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাফি ইলেকট্রোড ইমপ্লান্টেশন করা হয়, যা মৃগীরোগের কেন্দ্রস্থল স্পষ্টভাবে সনাক্ত করতে সাহায্য করে। ওই অস্ত্রোপচারের পর, মেয়েটি তিন মাস কোনও খিঁচুনি অনুভব করেনি।
পরে আবার খিঁচুনি শুরু হলে ক্ষতের অংশটি মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে ছিল এবং তা পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি।
সর্বশেষ অস্ত্রোপচারে রোগীর মস্তিষ্কে এএনএস ব্যবহার করা হয়। কুও জানালেন, ঐতিহ্যবাহী থেরাপির তুলনায়, এএনএস প্রযুক্তি উল্লেখযোগ্য কিছু সুবিধা দেয়।
তিনি জানালেন, ‘এটি অনেকটা রোগীর খুলির নিচে একটি ম্যাচবক্সের আকারের ইলেকট্রনিক ডাক্তারের মতো যা রিয়েল-টাইমে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে।’
এএনএস প্রযুক্তির সফল প্রয়োগ মৃগীরোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিউরো নিয়ন্ত্রণের এক নতুন যুগের সূচনাকে নির্দেশ করে বলেও জানান তিনি।
ভবিষ্যতে, ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস বা বিসিআই প্রযুক্তি কেবল মৃগীরোগই নয় বরং পার্কিনসনস, স্ট্রোক এবং অটিজমের মতো স্নায়বিক ব্যাধিগুলোর জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।
সূত্র: সিএমজি