চীনের লেংহু: তেল থেকে তারার নগরী

চীনের উত্তর-পশ্চিমের ছিংহাই প্রদেশের মাংইয়ার একটি শহর লেংহু। কয়েক দশক আগেও চীনের চতুর্থ বৃহত্তম তেলক্ষেত্রের শহর ছিল এটি। মরুর ধুলিঝড় ও স্বল্প অক্সিজেনের মাঝে তেল শ্রমিকেরা সচল রাখতেন চীনের শিল্প-চাকা। তেল শেষ, শ্রমিকেরাও চলে গেছে। জনসংখ্যা নেমে যায় তিনশর নিচে। পরিত্যক্ত ঘরবাড়ি আর সমাধিতে দাঁড়িয়ে থাকা স্মৃতিস্তম্ভগুলো যেন এখন আগের যুগের সাক্ষ্য দেয়। তবে এখন পাহাড়ের চূড়ায় তেলের খনির জায়গায় দাঁড়িয়েছে টেলিস্কোপ। আকাশগঙ্গা, সুপারনোভা, ব্ল্যাক হোল খুঁজে বেড়ায় লেংহুর মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্রের এই নিরলস ‘চোখ’।

তেল থেকে তারার পথে

১৯৫৮ সালে তিচং-৪ নামের একটি কূপ থেকে প্রতিদিন ৮০০ টন তেল বেরোতে শুরু করে। রাতারাতি গোবি মরুভূমির এই কোণে গড়ে ওঠে শ্রমিক শহর লেংহু। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে কূপগুলো শুকিয়ে গেলে শুরু হয় জনশূন্যতার পথে যাত্রা।

২০১৫ সালে লেংহুর রূপান্তরের দায়িত্ব পান থিয়ান ছাইরাং। ২০১৭ সালের এক জরিপ অভিযানে, রাতের আকাশের অসাধারণ সৌন্দর্য দেখে তার মনে প্রশ্ন জাগে—এই শহরের ভবিষ্যৎ কি তবে আকাশে?

পরে তিনি জাতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণাগারের গবেষক তেং লিছাইকে আমন্ত্রণ জানান। সারতেং পাহাড়ের চূড়ায় উঠে তারা আবিষ্কার করেন—এখানে বছরের তিনশটি রাতই পর্যবেক্ষণের উপযোগী, স্বচ্ছ ও অন্ধকার আকাশ বিদ্যমান।

সুবৃহৎ জ্যোতির্বিদ্যা কেন্দ্র

২০১৮ সালে শুরু হয় পাহাড়ে মানমন্দির নির্মাণের কাজ। দুর্গম স্থানে উপকরণ তুলতে হেলিকপ্টারকে দিনে ৮০ বারও উড়তে হয়েছিল। ২০২১ সালে নেচারের প্রতিবেদনে লেংহুর মহাজাগতিক সম্ভাবনা বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়।

আজ সারতেং পাহাড়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘মোচি’ নামের ওয়াইড ফিল্ড সার্ভে টেলিস্কোপ। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এটি চার হাজার দুইশর বেশি সুপারনোভা মহাজাগতিক ক্ষণস্থায়ী ঘটনা শনাক্ত করেছে। এখানে আছে ৪৫টি টেলিস্কোপ, ১২টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং প্রায় ৩০০ কোটি ইউয়ানের বিনিয়োগ।

অন্ধকার বাঁচানোর লড়াই

লেংহুর এই উন্নয়ন নির্ভর করছে এক অমূল্য সম্পদের ওপর। তা হলো অন্ধকার আকাশ। ২০২৩ সালে স্থানীয় প্রশাসন চীনের প্রথম ‘ডার্ক স্কাই প্রোটেকশন’ আইন প্রণয়ন করে। পুরো ১৭ হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা আলোক দূষণ নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হয়। নতুন শক্তি প্রকল্প সরিয়ে নেওয়া হয়, ব্যবসায়ীরাও প্রতিশ্রুতি দেন আলো সীমিত রাখার।

সূত্র: সিএমজি

chinalenghuobservatoryspaceচীন