বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ব্যাটারি রিসাইকেলের নতুন অর্থনীতি চীনে

সিএমজি বাংলা: চীনসহ বিশ্বের নানা দেশে দ্রুতগতিতে বাড়ছে নতুন জ্বালানির গাড়ি বা বিদ্যুৎচালিত গাড়ির সংখ্যা। যত বেশি গাড়ি তৈরি হচ্ছে, তারচেয়েও বেশি তৈরি হচ্ছে গাড়ির ব্যাটারি। চীনে দিন দিন বড় হচ্ছে বিদ্যুৎচালিত গাড়ির ব্যাটারি রিসাইকেল করার বাণিজ্য। অর্থাৎ এই ব্যাটারিকে ঘিরে ক্রমশ তৈরি হচ্ছে এক নতুন অর্থনীতি।

পরিসংখ্যান বলছে, চীনে এখন নতুন জ্বালানির গাড়ি বা বিদ্যুৎচালিত গাড়ির সংখ্যা ২ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি। সংখ্যাটা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। তবে গাড়ির চেয়েও দ্রুতগতিতে বাড়ছে গাড়িতে ব্যবহৃত ব্যাটারির সংখ্যা।

ইতোমধ্যেই চীনে ব্যবহৃত গাড়ির ব্যাটারির পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে ৫ লাখ ৮০ হাজার টন। ২০৩০ সাল নাগাদ এই ব্যবহৃত ব্যাটারির পরিমাণ ছাড়াতে পারে ১০ লাখ টন, যার বাজারমূল্য ছাড়িয়ে যাবে ১০ হাজার কোটি ইউয়ান বা প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।

হানইউ নিউ এনার্জি টেকনোলজির চেয়ারম্যান লিও সিয়াওহুই জানালেন, ‘একটি ট্যাক্সির ব্যাটারির আয়ু থাকে বড়জোর ৮ বছর। ব্যক্তিগত গাড়ি হলে তা বড়জোর ৯ বছরে গড়াতে পারে। একটা গাড়ি কতটা পথ চলেছে এবং এর চার্জ থাকার ক্যাপাসিটির ওপর আমরা ব্যবহৃত ব্যাটারির অবস্থা যাচাই করি।’

সাধারণত, ব্যাটারির সক্ষমতা ৮০ ভাগের নিচে নামলেই সেটাকে রিসাইকেল করতে হয়। তখন সেই ব্যাটারির দাম নির্ভর করে সেটার ধরন, ব্যবহারের পরিমাণ এবং ভেতরকার উপকরণগুলোর ওপর।

লিও সিয়াওহুই আরও জানালেন, ‘এখন লিথিয়াম কার্বনেটের দাম কিছুটা কম। রিসাইকেল করা লিথিয়াম আয়রন ফসফেট ব্যাটারির দাম প্রতি টন ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার ইউয়ান। আবার লিথিয়াম-আয়ন টারনারি ব্যাটারির দাম টন প্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার ইউয়ান।’

এই বিপুল পরিমাণ ব্যবহৃত ব্যাটারি রিসাইকেল করা নিয়ে চীন সরকারও বেশ সচেষ্ট। এরইমধ্যে পাঁচটি ব্যাচে ১৪৮টি প্রতিষ্ঠানকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ৩২৭টি প্রিফেকচার ও প্রশাসনিক স্তরের অঞ্চলে প্রায় ১০ হাজার ব্যাটারি রিসাইকেল আউটলেট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

রিসাইকেল ব্যাটারি সংগ্রহের বাণিজ্যে জড়িত কোম্পানিগুলো মূলত স্থানীয় বাস বা ট্যাক্সি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি ব্যাটারি সংগ্রহ করতে কিছু কিছু সেন্টার স্থাপন করেছে। তবে ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকদের কাছ থেকে সরাসরি ব্যাটারি সংগ্রহের কাঠামো চীনে এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। ওইসব গাড়ির মালিকরা তাদের ব্যাটারি অদল-বদল করতে সরাসরি চলে যাচ্ছেন বিক্রেতার কাছে, যে কারণ এই বাণিজ্য কাঠামোর উন্নয়নেও জোরেসোরে নেমেছে চীন সরকার।

একটি সাধারণ গাড়ির ব্যাটারি রিসাইকেল করার পর সেটাকে আবার আবার অনেক সময় সারিবদ্ধভাবে যুক্ত করা হয় অন্য একটি ভারী যানবাহনে। চ্যচিয়াং প্রদেশের কুচৌতে আছে এমন একটি রিসাইকেল সেন্টার।

একটি রিসাইক্লিং প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার বাও ওয়েই জানালেন, ‘আমরা আগে ব্যাটারির তথ্য যাচাই করে দেখি সেগুলো সারিবদ্ধভাবে ব্যবহারের উপযুক্ত কিনা। যেগুলো এ কাজে ব্যবহার করা যাবে, সেগুলোকে পাঠানো হয় প্যালেট ট্রাক, ফোর্ক লিফট, বা সোলার কারখানার বিদ্যুতের গ্রিডে।’

আবার এখানকার যে ব্যাটারিগুলোকে সারিবদ্ধ আকারে ব্যবহার করা যাবে না, সেগুলো পাঠিয়ে দেওয়া হয় হুবেই প্রদেশের চিংমেন এলাকার একটি রিপ্রসেসিং সেন্টারে। সেখানে ব্যাটারির যন্ত্রাংশ আলাদা করে নানা মূল্যবান উপকরণগুলোকে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়। চিংমেনের ওই সেন্টারে বছরে প্রক্রিয়াকরণ করা হচ্ছে ২০ হাজার টন পুরনো ব্যাটারি।

চীনজুড়ে পুরনো গাড়িগুলোর ব্যাটারি প্রতিস্থাপনের গতি আগের চেয়ে বেড়েছে এবং এ খাতটি নতুন এক উদীয়মান অর্থনীতির পথও সুগম করে দিচ্ছে।

batterychinaelectric carrecycle