জাকাতে বাড়ে পরকালের সঞ্চয়

আলমগীর হুসাইন

মূলত সদকা হলো ফকির, মিসকিন, জাকাতকর্মী, অনুরক্ত ব্যক্তি ও নওমুসলিম, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে জিহাদ ও বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফির ও পথ সন্তানদের জন্য। এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত

কোনো মুসলমানের ওপর প্রয়োজন অতিরিক্ত সম্পদ থাকলে, জাকাত দিতে হয়। জাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে বছরে একবার জাকাত দেওয়া ফরজ। জাকাত বছরের যে কোনো সময় দেওয়া যায়। তবে রমজান মাস জাকাত আদায়ের সর্বোত্তম সময়। এ মাসে দান-সদকা করলে অন্য সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি নেকি হয়। আর এখন তো করোনা মহামারির কারণে সমাজের অসহায় মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। তাই জাকাত আদায়ের এখনই মোক্ষম সময়।

জাকাতযোগ্য সম্পদ : জাকাতের সম্পদ মোট চার প্রকার : ১. ক. স্বর্ণের জাকাত : ৮৭.৪৮ গ্রাম অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণে জাকাত ওয়াজিব। খ. রুপার জাকাত : ৬১২.৩৬ গ্রাম তথা সাড়ে ৫২ তোলা রুপায় জাকাত ওয়াজিব। এর চেয়ে কমে জাকাত ওয়াজিব হবে না। স্বর্ণ ও রুপা এ দুটো চাই ব্যবহৃত হোক বা কোথাও সংরক্ষিত থাকুক সর্বাবস্থায় জাকাত ওয়াজিব। জাকাত মূল্য হিসাব করে দেওয়া হোক কিংবা ওজন হিসেবে দেওয়া হোক শতকরা আড়াই ভাগ জাকাত দিতে হবে। যদি নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে (স্বর্ণ ও রুপা) আলাদা আলাদা কম থাকে, তবে দুটির অর্থ একত্রে রুপা বা স্বর্ণের নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী হয়, তাহলে জাকাত দিতে হবে। ২. যেসব পশু বছরের অধিকাংশ সময় চড়ে ঘাস-পানি খায়। তেমন কোনো খরচ থাকে না। পশুগুলো নির্ধারিত পরিমাণ হলে জাকাত দিতে হয়। ৩. নগদ-নগদায়নযোগ্য টাকা : যে কোনো মুদ্রায়, যে কোনো পদ্ধতিতে, যে কোনো উদ্দেশ্যে, যে কোনো স্থানে জমাকৃত অর্থ তথা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, চেক, বন্ড, ডেবিট কার্ড ইত্যাদিতে জাকাত ওয়াজিব। এ ছাড়াও বাকিতে বিক্রয়কৃত পণ্যের মূল্য ও পাওনা টাকা যা প্রাপ্তির আশা আছে, ঐচ্ছিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের সমুদয় অর্থ, বাধ্যতামূলক প্রভিডেন্ট ফান্ডের সঙ্গে স্বেচ্ছা প্রদত্ত অতিরিক্ত অংশ, সিকিউরিটি কিংবা অ্যাডভান্স হিসেবে ফেরতযোগ্য অর্থ এসবে জাকাত ওয়াজিব।

৪. ব্যবসায়ের সম্পদ : প্রবৃদ্ধি বা ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে নেওয়া ঋণ অথবা ব্যক্তিগত অর্থ দ্বারা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পণ্য যে কোনো স্থানে যে কোনো পদ্ধতিতে থাকুক তাতে জাকাত ওয়াজিব। মুজারাবা কিংবা অংশীদারি কারবারে বিনিয়োগকৃত অর্থের নগদ অংশ, তা দ্বারা খরিদকৃত ব্যবসায় পণ্য, ক্যাপিটাল গেইনের উদ্দেশ্যে কেনা শেয়ার এবং লাভের উদ্দেশ্যে কেনা শেয়ারের জাকাতযোগ্য সম্পদের মূল্য এগুলোতেও জাকাত ওয়াজিব।

যেসব পণ্যের জাকাত নেই : বাহনজন্তু, গাড়ি, প্রাইভেট কার, বসবাসের ঘরবাড়ি, দোকান, কোম্পানির মেশিন ইত্যাদিতে জাকাত নেই। এগুলো ভাড়ায় দিলে এর আয় নেসাব পরিমাণ হয়ে বছর পূর্ণ হলে জাকাত আসবে। জাকাত দেওয়া যাবে যাদের কোরআনে জাকাতের আটটি খাত উল্লেখ রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘মূলত সদকা হলো ফকির, মিসকিন, জাকাতকর্মী, অনুরক্ত ব্যক্তি ও নওমুসলিম, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে জিহাদ ও বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফির ও পথ সন্তানদের জন্য। এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞানী ও পরম কৌশলী।’ (সুরা তওবা : ৬০)

হিসাব করে জাকাত প্রদান : সমুদয় সম্পদের সঠিক হিসাব অনুযায়ী জাকাত প্রদান করা হলেই জাকাত আদায় হবে। সম্পদের হিসাব-নিকাশ ছাড়া নামেমাত্র কিছু শাড়ি আর লুঙ্গি দিয়ে দিলে জাকাত আদায় হবে না। শুধু লুঙ্গি আর শাড়ি প্রদান করে জাকাত না দেওয়া, বরং জাকাতগ্রহীতার প্রয়োজন জেনে সে অনুযায়ী দেওয়ার চেষ্টা করা। প্রয়োজনে নগদ অর্থও দেওয়া যেতে পারে। এতে করে গরিব-অসহায় মানুষ সত্যিকারভাবে উপকৃত হবেন। নিজেদের প্রয়োজনীয় খাতে খরচ করতে পারবেন।