অস্ট্রেলিয়া একটি দ্বীপ মহাদেশ। এটি এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে ওশেনিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। কাছের তাসমানিয়া দ্বীপ নিয়ে এটি কমনওয়েল্থ অফ অস্ট্রেলিয়া গঠন করেছে। দেশটির উত্তরে তিমুর সাগর, আরাফুরা সাগর। পূর্বে প্রবাল সাগর এবং তাসমান সাগর; দক্ষিণে ও পশ্চিমে ভারত মহাসাগর। দেশটি পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৪০০০ কিমি এবং উত্তর-দক্ষিণে প্রায় ৩৭০০ কিমি দীর্ঘ।
অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মহাদেশ, কিন্তু ৬ষ্ঠ বৃহত্তম দেশ। অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা। সিডনী বৃহত্তম শহর। দুইটি শহরই দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য বড় বড় শহরগুলির নাম হচ্ছে, সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন, এডেলেইড, তাসমানিয়া, ডারউইন, পার্থ, গোল্ডকোষ্ট।
শক্তিশালী অর্থনীতি এবং সামগ্রিক নিরাপত্তা, অনুকূল আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সব মিলিয়ে বসবাসের জন্য চমৎকার একটি দেশ অস্ট্রেলিয়া। বৈধ নিয়মে দেশটিতে প্রবেশ, কর্মসংস্থান ও বসবাসের অনুমতি পাওয়ার ঝামেলাও খুব বেশি নয়।
তাই উচ্চশিক্ষার আশা নিয়ে অনেক শিক্ষার্থীই অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষার সুযোগ খোঁজেন। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের দিক থেকে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের পর এখন অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের তৃতীয় জনপ্রিয়তম দেশ।
অস্ট্রেলিয়া সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, দেড় শতাধিক দেশের শিক্ষার্থীরা দেশটির বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছেন। বাংলাদেশেরও প্রচুর শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন দেশটিতে।
পৃথিবীর শীর্ষ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় কম খরচে এমন শান্তিপূর্ণ একটি দেশে মানসম্মত শিক্ষার কারণে উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে দেশটিতে প্রতিবছর দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়াতে।
চলুন এবার উচ্চশিক্ষার জন্য অস্ট্রেলিয়া কেন যাবেন, সে বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে নিই।
১। উন্নত জীবনযাত্রার মান
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) সম্প্রতি তাদের সদস্য ১০৯টি দেশের জীবনযাত্রার মানের র্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে। যে তালিকায় অস্ট্রেলিয়া অষ্টম স্থানে অবস্থান করছে।
বাস্তব অর্থনৈতিক বিনিয়োগ, বাণিজ্যিক উদ্যোগ, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবায় দেশটি সর্বোচ্চ নাম্বার অর্জন করেছে। এছাড়াও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় অস্ট্রেলিয়ায় টিউশন ফি ও জীবন যাত্রার খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
২। উন্নত মানের শিক্ষা ব্যবস্থা
উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের কাছে পছন্দের প্রথম তালিকায় থাকার কারণ অবশ্যই অস্ট্রেলিয়ার
উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা। বর্তমানে শিক্ষার ব্যবস্থার দিক দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও জাপানের চেয়ে অস্ট্রেলিয়া কোনো অংশে কম নয়। বিশ্বের সেরা ১০০টির মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় আছে সাতটি।
অস্ট্রেলিয়ায় বেশির ভাগই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে মাত্র কয়েকটি । অস্ট্রেলিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন, ইউনিভার্সিটি অব সিডনি, ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস, মোনাশ ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি।
অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষাব্যবস্থা গবেষণাধর্মী। গবেষণার ওপরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বেশি জোর দিয়ে থাকে। আর গবেষণার জন্য সরকারি অর্থায়নের পাশাপাশি বেসরকারি খাত থেকেও সাহায্য পেয়ে থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো।
এছাড়াও রয়েছে প্রচুর শিক্ষাবৃত্তির সুযোগ। সরকারি বৃত্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল পোস্ট গ্রাজুয়েট স্কলারশিপ, অস্ট্রেলিয়া এপিইসি ওম্যান ইন রিসার্চ ফেলোশিপ, এনডেভর পোস্টগ্রাজুয়েট স্কলারশিপ ইত্যাদি। সব বৃত্তিতে মোটামুটি একই নিয়মে প্রার্থী নির্বাচন করা হয়ে থাকে। অস্ট্রেলিয়া দূতাবাসের ওয়েবসাইটে প্রতিবছরই সরকারি স্কলারশিপের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়।
অস্ট্রেলিয়া সরকারের ‘অস্ট্রেলিয়ান এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট’ (এইউএসএইড) প্রতিবছরই বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ‘অস্ট্রেলিয়ান ডেভেলপমেন্ট স্কলারশিপের অধীনে বৃত্তি দিয়ে থাকে। ‘সাউথ এশিয়া স্কলারশিপ প্রোগ্রাম’ শিরোনামে অস্ট্রেলিয়া সরকারের আরেকটি স্কলারশিপ রয়েছে। এ স্কলারশিপের অধীনে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর উচ্চশিক্ষার সুযোগ পায়।
এছাড়া প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্বভাবে স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইটে এসব স্কলারশিপের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। সেখানে দেওয়া নিয়মানুযায়ী স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যায়।
স্কলারশিপের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার একটা সুবিধা হলো এটি শিক্ষার খরচ থেকে শুরু করে থাকা, খাওয়া সব খরচ বহন করে। এমনকি শিক্ষার্থীর পরিবারের খরচও দেওয়া হয় স্কলারশিপ থেকে।
৩। কাজের সুযোগ
যারা শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে যান তাদের পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করার তেমন প্রয়োজন হয় না। তবে যারা নিজ খরচে যান, তাদের অনেকেই পার্টটাইম কাজ করে থাকেন। ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোনার পাশাপাশি সাপ্তাহিক ২০ ঘণ্টা কাজের সুযোগ দিয়ে থাকে অস্ট্রেলিয়া সরকার।
ছাত্রছাত্রীরা এসময়ে পিৎজা হাট, ম্যাকডোনাল্ডস, কেএফসি, এধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। একটু খুঁজলেই করলেই এই কাজগুলো পাওয়া যায়।
৪। স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ
যারা অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনার জন্য যায় তাদের অধিকাংশ পড়া শেষে, সেখানে চাকরি নিয়ে স্থায়ীভাবে থেকে যেতে চান। অস্ট্রেলিয়ায় পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট (পিআর) পাওয়া অন্যান্য দেশের তুলনায় সহজ। এটাকেও অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাওয়ার প্রধান কারণ হিসেবে ধরা যেতে পারে।
৫। নিরাপদ দেশ
বিশ্বের শান্তিপূর্ণ দেশগুলোর তালিকায় অস্ট্রেলিয়া অন্যতম। সুন্দর স্বাস্থ্যসম্মত আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এ দেশকে করেছে বসবাসের সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। খাদ্য থেকে শুরু করে আইন-শৃঙ্খলার বিশেষ নিরাপত্তা অস্ট্রেলিয়াকে করেছে নিরাপদ বসবাসের উপযোগী।
যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান ‘হুইচ ট্রাভেল’ ভ্রমণের জন্য নিরাপদ দেশসমূহের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে, যে তালিকার পাঁচে জায়গা পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
৬। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ
প্রকৃতির অসাধারণ শোভামণ্ডিত দেশ অস্ট্রেলিয়া। ভ্রমণের জন্য অনেক স্থান রয়েছে এই দেশটিতে। দেশটিতে আছে অসংখ্য নৈসর্গিক সুন্দর স্থান। একই স্থানে এত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুব কমই দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান হলো,
লর্ড হাওয়ি দ্বীপ
অস্ট্রেলিয়ার প্রকৃতি প্রেমীদের পছন্দের স্থান লর্ড হাওয়ি দ্বীপ। দ্বীপের মাঝে গম্বুজের মতো উঁচু হয়ে দাড়িয়ে আছে একটি মৃত আগ্নেয়গিরি। এই দ্বীপের কিছু প্রাণী ও গাছ বিশ্বের অন্য কোথাও দেখা যায় না।
বিস্তীর্ণ জোড়া হলদে বালি আর এর মাঝে প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষয়ে যাওয়া পাথুরে টিলা। প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্যের নাম পিনাকল।
দ্য ওলগাস-কাটা জুটা
লাল মাটির টানা রাস্তার পাশে আশ্চর্য আকৃতির কিছু পাহাড়। দেখে মনে হবে পাহাড়গুলোর গা কেউ যেন কেউ কেটে সমান করেছে। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে আরো অনেক দর্শনীয় স্থান, যা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য।