দেশের ইলেকট্রনিকস পণ্যের বাজারে প্রথম সারিতে রয়েছে ওয়ালটন । প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন বিভাগে প্রতি মাসেই জনবল নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। নতুনদের চাকরির সুযোগ কেমন, নিয়োগ প্রক্রিয়া কিভাবে এবং প্রার্থীদের কাজে আসবে—এমন সব বিষয় নিয়ে বলেছেন ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক (মানবসম্পদ ও প্রশাসন) এস এম জাহিদ হাসান
১। ওয়ালটনে চাকরির সুযোগ কেমন? প্রতিবছর সাধারণত কতসংখ্যক লোক নিয়োগ দেওয়া হয়?
—প্রতিবছর আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগে বিপুলসংখ্যক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। বর্তমানে ১৭টি বিভাগে প্রায় ২৫ হাজার লোক কাজ করছেন। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে প্রতিষ্ঠানটির হেডকোয়ার্টারে বছরে প্রায় ছয় হাজার কর্মী (দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিকসহ) নতুন করে নেওয়া হয়। এ ছাড়া ঢাকার করপোরেট অফিসে বছরে প্রায় তিন হাজার জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। যেসব বিভাগে নিয়মিত লোক নিয়োগ হয়, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিভাগ হচ্ছে—প্রডাকশন, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আর অ্যান্ড ডি), কোয়ালিটি কন্ট্রোল (কিউসি), সার্ভিসিং, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, ফিন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং, অডিট, সেলস, মার্কেটিং অ্যান্ড ব্র্যান্ডিং, এইচআর (মানবসম্পদ), অ্যাডমিন, আইটি, মেইনটেন্যান্স, প্রসেস ডেভেলপমেন্ট, ইউটিলিটি।
২। কোন কোন বিভাগে তুলনামূলক বেশি জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়?
—
ওয়ালটনের সেলস বিভাগে তুলনামূলক বেশিসংখ্যক লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। সাধারণত প্রতি মাসেই এ বিভাগে জনবলের দরকার হয়। যেমন—ওয়ালটন প্লাজার জন্য ৪০০ ‘সেলস অফিসার’ নিয়োগের প্রক্রিয়া এখনো চলছে।
১-২ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন স্নাতক/স্নাতকোত্তর প্রার্থীরা (নারী/পুরুষ) ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ পদের জন্য অনলাইনে (jobs.waltonbd.com) আবেদন করতে পারবেন।
৩। ফ্রেসার বা নতুনদের চাকরির সুযোগ কেমন? নতুনদের মধ্যে থেকে যোগ্য প্রার্থী কিভাবে বাছাই করেন?
—আমাদের প্রতিটি বিভাগেই ফ্রেসারদের জন্য চাকরির সুযোগ আছে। কারণ ফ্রেসারদের অনেকেই কর্মক্ষেত্রে ভালো করছেন। ফ্রেসারদের বাছাইয়ের ক্ষেত্রে প্রথমে তাঁর একাডেমিক ফলাফল দেখা হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ ছিল কি না, তা-ও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে নতুন প্রার্থীদের একটি কমন উত্তর হচ্ছে, ‘আগে কোনো চাকরি করিনি, তাই অভিজ্ঞতারও সুযোগ হয়নি।’ আর আমরা প্রার্থীদের প্রশ্ন করি, ‘আপনার বাবা কী করেন? যদি কৃষক হন, তাহলে তাঁর কাজে কখনো সহযোগিতা করেছন? যদি বাবা দোকানি হন, তাহলে দোকানে সময় দিয়েছন? আর কিছু না হোক, টিউশনি করারও তো সুযোগ ছিল, করেছেন?’ প্রার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি আর যা যা করেছেন, সেগুলোকে আমরা তাঁর বাড়তি অভিজ্ঞতা বা যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করি। ফ্রেসারদের ক্ষেত্রে বয়স সর্বোচ্চ ৩০ পর্যন্ত আমরা বিবেচনা করি।
৪। নিয়োগ প্রক্রিয়া কী? কোন কোন পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হয়?
—পত্রিকা, অনলাইন জব পোর্টাল, ওয়ালটনের সাইটে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর পর সংশ্লিষ্ট পদের চাকরির বিবরণের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সিভিগুলোকে আলাদা করা হয়। এসব প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, ফলাফল ও অভিজ্ঞতা মূল্যয়ন করে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়। তাঁদের বাছাই পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। প্রথমে ৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা, তারপর ৪০ নম্বরের আইটি টেস্ট; সবশেষে ১০ নম্বরের ভাইভা। ভাইভায় সাধারণ জ্ঞান ও প্রার্থীর বাড়তি যোগ্যতা যাচাই করা হয়। সব ধাপে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়। নির্বাচিত প্রার্থীদের ৩-৭ দিনের ‘লার্নিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ প্রশিক্ষণ শেষে কর্মক্ষেত্রে নিযুক্ত করা হয়। টেকনিক্যাল বিভাগগুলোতে অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান, ভোকেশনাল কোর্সধারীদের নেওয়া হয়। ব্যাবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে দেখাতে হয়।
৫। কোন পদে কেমন যোগ্যতা থাকতে হবে?
বেশির ভাগ বিভাগের পদে ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক, তবে স্নাতকোত্তর হলে আরো ভালো। সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞ হলে বাছাই প্রক্রিয়ায় এগিয়ে থাকবে। কোনো কোনো পদের জন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রফেশনাল ডিগ্রিধারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, যেমন—চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। এর পাশাপাশি প্রার্থীর যোগাযোগ দক্ষতা, তথ্য-প্রযুক্তিতে জানাশোনা ও নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা থাকতে হবে। কিছু কিছু পদ আছে, যেগুলোতে এসএসসি বা সমমান হলেই চলে, যেমন—সেলস অ্যাসোসিয়েট। টেকনিক্যাল পদগুলোতে দক্ষতাই সবচেয়ে বড় যোগ্যতা।
৬। চাকরিপ্রার্থীরা সাধারণত কোন ভুলগুলো বেশি করেন?
—প্রায়ই যেটা দেখি, বেশির ভাগ প্রার্থীর সিভিই কপি-পেস্ট। দেখা গেল একজন প্রকৌশলীর সিভি একজন বিবিএ ডিগ্রিধারী কপি করেছেন। তাঁদের দুজনের ক্যারিয়ার অবজেক্টিভ ভিন্ন হওয়ার কথা, কিন্তু এখানে এক। এ হলো একটা সমস্যা। কপি করতে গিয়ে যোগাযোগের নাম্বারটা পর্যন্ত ঠিক করে দেন না অনেকে।