তার মানে কিন্তু এই নয়, যে কলেজ লাইফ উপভোগ না করে সমস্ত সময় বইয়ে মুখ গুঁজে থাকবে! কলেজ পড়ুয়া হিসেবে প্রেম, পার্টি, বা পলিটিক্স, কোনওটা থেকেই নিজেকে বঞ্চিত করবে না। কিন্তু হাজারো একস্ট্রা কারিকুলারের মাঝেও, লেখাপড়াটা জোরকদমে চালিয়ে যেতে হবে। জেনে নাও কীভাবে এই অসাধ্যকে সাধন করবে!
ক্লাস বাঙ্ক ভুলেও করতে যেয়ো না
রোজ-রোজ ক্লাস করতে কার আর ভাল লাগে?! কিন্তু নিজের মঙ্গলের জন্যই প্রয়োজনে দাঁতে দাঁত চেপে ক্লাসে যেতে হবে। নিজের গ্রেড শিট দেখে চোখের জল ফেলতে যদি না চাও, বাঙ্ক শব্দটি নিজের অভিধান থেকে বাদ দিয়ে দাও। ক্লাস করতে যতই একঘেয়ে লাগুক, কোর্স প্রফেসরকে যতই বিরক্তিকর লাগুক, মুখ বুজে কাজে লেগে পড়ো। কলেজ এবং স্কুলের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক (১৮+) না হলে সাধারণত কলেজে ভর্তি হওয়া যায় না। সুতরাং অধ্যাপকেরাও তোমাকে প্রাপ্তবয়স্কের মতোই ট্রিট করবেন। তোমার যাবতীয় ভালমন্দের দায়িত্ব তোমার। দিনের পর-দিন ক্লাসে ডুব মারলে কোনও প্রফেসর তোমার অবিভাবকের কাছে নালিশ করবেন না ঠিকই, কিন্তু সেমেস্টার রেজ়াল্ট দেখে চোখে সর্ষে ফুলটাও তোমাকেই দেখতে হবে! তা ছাড়া প্রত্যেকদিন ক্লাস করার আর-একটা সুবিধাও রয়েছে। সাধারণত লেকচারে অধ্যাপকেরা যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি, যেগুলি নিশ্চিতভাবে পরীক্ষায় আসবে (বা আসার সম্ভাবনা প্রবল), সেগুলিতেই জোর দিয়ে থাকেন। তাই রোজ ক্লাস করলে আখেরে তোমারই লাভ হবে।
ইলেক্টিভ মোটেই উপেক্ষার বস্তু নয়
এই পরামর্শ অবশ্য সেমেস্টার সিস্টেমের ক্ষেত্রেই বেশি কার্যকরী। মোট কথা, তোমার কলেজ যদি সেমেস্টার সিস্টেমে চলে, তা হলে তোমার কাছে ইলেক্টিভ বিষয়ের অনেকগুলি অপশন থাকবে। তাই ইলেক্টিভ বিষয়গুলি বাছতে হবে খুব ভেবেচিন্তে। জানো কি, তোমার কোর কোর্সের গ্রেডের সঙ্গে এই ইলেক্টিভ বিষয়গুলিতেও ভাল রেজ়াল্ট থাকাটা জরুরি? এই কোর্সগুলি তোমার এগ্রিগেট রেজ়াল্টের ওপর প্রভাব ফেলবে। কোর্স বাছার আগে, রেট মাই প্রফ-এর মতো ওয়েবসাইট চেক করতে পারো। সেইখানে কোন অধ্যাপক কীভাবে গ্রেড দেন তার খবরাখবর পাবে। সাধারণত যেই সমস্ত অধ্যাপকদের চেপে নম্বর দেওয়ার বদনাম রয়েছে, তাঁদের কোর্স না নেওয়াই ভাল। সুখে থাকতে ভূতের কিল খাওয়ার কী দরকার!
প্রফেসররের কথাই শেষ কথা
আজ্ঞে হ্যাঁ । কথাটা হজম করতে বেশ কষ্ট হল তো? কিন্তু সত্যিটা এই— পরীক্ষার খাতায় ভাল নম্বর পাওয়ার সবচেয়ে পুরনো এবং কার্যকরী টোটকা হল– অধ্যাপক পরীক্ষার খাতায় যেরকম উত্তর দেখতে চান তেমনটিই পেশ করা। তার জন্য বারবার উত্তর লিখে প্রফেসরদের দিয়ে চেক করিয়ে নিতে হবে।
প্র্যাক্টিক্যাল হোক হাতিয়ার
যারা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো বিজ্ঞান নির্ভর বিষয় নিয়েছ, তাদের কাছে কিন্তু গ্রেড পয়েন্ট অ্যাভারেজ বাড়ানোর এক মোক্ষম অস্ত্র রয়েছে। প্র্যাক্টিক্যাল কোর্সে যেমন করে হোক ভাল গ্রেড অর্জন করতে হবে। থিওরিতে কিন্তু সবসময় ভাল গ্রেড পাওয়া কঠিন। কোনও কারণে কোনও নির্দিষ্ট পেপারে যদি আশানুরূপ ফল না-ও হয়, প্র্যাক্টিক্যালের গ্রেড তোমার এগ্রিগেটকে বাঁচিয়ে দিতে পারে।
প্রত্যেকদিন পড়ার অভ্যেস চালিয়ে যাও
স্কুল লাইফে পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে পড়ে বাজিমাত করলেও কলেজের ক্ষেত্রে কিন্তু এই ফান্ডা চালালে একদম গাড্ডায় পড়বে। কলেজে যেহেতু সিলেবাস অনেক বিস্তীর্ণ হয় তাই এক রাত্তির পড়ে কিছু লাভ হবে না। ভাল রেজ়াল্ট তো দূরের কথা, পাশ করাও দুরূহ হয়ে উঠবে। তার মানে এই নয় যে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতো চোখে তেল দিয়ে বারো ঘণ্টা বইয়ের পাতায় ডুবে থাকতে হবে। প্রত্যেকদিন অন্তত কিছুক্ষণ লেখাপড়া করার অভ্যেসটা যদি রপ্ত করতে পার, তা হলে ধীরে-ধীরে সিলেবাসও শেষ করতে পারবে। পরীক্ষার আগে আর হিমশিম খেতে হবে না।
একটু শৃঙ্খলা, একটু কৌশল মেনে চললেই ভাল রেজ়াল্ট তোমার হাতের পাঁচ হয়ে উঠবে।