যুক্তরাষ্ট্রে গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে আবেদন : যা যা লাগবে

যুক্তরাষ্ট্রে গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে আবেদন গ্রহণ শুরু হয় নভেম্বর থেকে। আবেদন করার সুযোগ থাকে ডিসেম্বর বা জানুয়ারি পর্যন্ত। সফল শিক্ষার্থীরা আগস্ট–সেপ্টেম্বর থেকে (Fall Session) তাদের কার্যক্রম শুরু করেন।
আবেদনের জন্য যা যা প্রয়োজন:
১. স্টেটমেন্ট অব পারপাস (SOP)
২. সুপারিশপত্র (Recommendation Letter) ; দুই থেকে তিনটি।
৩. টোফেল (TOFEL) স্কোর।
৪. জিআরই (GRE) স্কোর (বেশির ভাগ স্কুলেই আবশ্যক)।
৫. জিআরই সাবজেক্ট স্কোর (বেশির ভাগ স্কুলেই আবশ্যক নয়। তবে উৎসাহিত করা হয়)।

৬. ট্রান্সক্রিপ্ট (Transcript) ও সিভি (CV)
৭. ডাইভার্সিটি স্টেটমেন্ট (Diversity Statement)। কোনো কোনো স্কুলে চাওয়া হয়।
৮. আবেদন ফি (Application Fee)

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যে যে স্কুলে আবেদনের লক্ষ্য নেবেন, সে সে স্কুলগুলো ওয়েবসাইটে গিয়ে সময় নিয়ে সকল নির্দেশনা সঠিকভাবে পড়া। বিভিন্ন স্কুলে ভর্তির আবেদনের জন্য কম-বেশি নিয়মের পার্থক্য থাকতে পারে। আবেদন সঠিকভাবে না করলে, সফল হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।
SOP: এটা হলো দুই-তিন পৃষ্ঠার একটি রচনা ধরনের (Essay type)। তবে স্কুলে পড়ার সময় যে রচনা লিখতাম তেমন মুখস্থ কিছু নয়। এটাতে লিখতে হবে নিজের সম্পর্কে। যে প্রোগ্রামে পড়তে আগ্রহী সে বিষয়ে। যে স্কুলে আবেদন করার জন্য আগ্রহী, সে স্কুলকে কেন প্রাধান্য দেওয়া হলো সে বিষয়ে। উচ্চশিক্ষা বা গবেষণায় কেন আগ্রহ সে বিষয়ে লিখতে হবে। যে প্রোগ্রামে আবেদন করছেন সে বিষয়ে আপনার দক্ষতা নিয়ে।
এসওপি লিখতে হবে সরল সাবলীল ইংরেজিতে। সেটিতে থাকতে হবে ইউনিক কিছু কথা। কপি পেস্ট করা হলে এগুলো সহজেই তারা বুঝে যায়। প্রতি বছর এসব পড়ে তারা অভ্যস্ত। হুটহাট করে এসওপি না লেখাই ভালো। সময় নিয়ে লিখতে হবে। অন্যদের দিয়ে পড়িয়ে দেখতে হবে কোনো ভুল আছে কি-না।
সুপারিশপত্র: বিদেশের স্কুলগুলোতে ভর্তির জন্য রিকোমন্ডেশন লেটার খুব গুরুত্বপূর্ণ। লেটারগুলোতে একটা শিক্ষার্থীর বিষয়ে খুব নির্দিষ্ট করে লিখতে পারলে ভালো। আমাদের দেশে গণহারে প্রায় একই ধরনের লেটার দেওয়া হয়। এতে করে একজন শিক্ষার্থীর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য উঠে আসে না। অনেক শিক্ষক সেসব লেটারগুলো নিজে লেখেন না। শিক্ষার্থীরাই লিখে আনে। দেশে গবেষণা কম। তাই আমাদের শিক্ষকদের পরিচিতি বহির্বিশ্বে নেই বললেই চলে। এটা একধরনের অন্তরায়। পরিচিত শিক্ষক বা গবেষকদের কাছ থেকে লেটার পেলে, ভর্তির বিষয়ে সহায়ক হয়। কারণ সেই শিক্ষার্থীর দক্ষতা ও মেধা সম্পর্কে ভর্তি কমিটির সংশ্লিষ্টরা সুস্পষ্ট ধারণা পান।
ডাইভার্সিটি স্টেটমেন্ট: এটা হলো আবেদনের অন্যান্য ডকুমেন্টগুলোর সম্পূরক। কিছু কিছু স্কুল এটা চাইতে পারে। আপনার সম্পর্কে হয়তো এমন কিছু গুরুত্ববহ তথ্য আছে যেগুলো আপনি সিভি কিংবা এসওপিতে লিখতে পারলেন না, সেগুলো ডাইভার্সিটি স্টেটমেন্টে উল্লেখ করা যেতে পারে। আপনার শিক্ষাগত ব্যাকগ্রাউন্ডে যদি কোনো স্ট্রাগল থাকে এবং সেটা কী করে জয় করলেন সেটা উল্লেখ করতে পারেন। এই বিষয়গুলো এসওপিতে উল্লেখ করা জুতসই নয়। আপনি যদি কোনো বঞ্চিত জনগোষ্ঠী থেকে উঠে আসেন সেগুলো লিখতে পারেন। অনেক স্কুল, পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী থেকে উঠে আসা কিছু শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করে। আপনার নিজের পড়াশোনার ক্ষেত্র ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে পারদর্শিতার কথা উল্লেখ করতে পারেন।
আবেদন ফি: বিভিন্ন স্কুলে ভর্তির আবেদন ফি কম-বেশি হতে পারে। সাধারণত আবেদন ফি ৭৫-১০০ ডলারের মধ্যে হয়। আবেদন ফি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পে করা যায়।
উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে প্রস্তুতিটা শুরু করতে হবে কয়েক বছর আগে থেকে। ছয় মাস বা এক বছর আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে সবাই সফল হতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরি করতে হবে। ব্যাচেলরের তৃতীয় বর্ষে আবেদন শুরু করতে হবে। আগেই বলা হয়েছে, ব্যাচেলর করেই পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশে পিএইচডি শুরু করা যায়। চীন-ভারতের শিক্ষার্থীরা, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে। কারণ তারা প্রস্তুতি শুরু করে স্নাতক শুরুর পরপরই।
স্নাতক পর্যায়ে, প্রতিটি শিক্ষাবর্ষে যথাসাধ্য ভালো জিপিএ পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। টোফেল ও জিআরই পরীক্ষার প্রস্তুতি ধীরে ধীরে নিতে হবে। তাহলে ভালো স্কোর পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গবেষণার যদি কোনো সুযোগ থাকে তাহলে খুবই চমৎকার। গবেষণার অভিজ্ঞতা, স্কলারশিপ পেতে সহায়ক হয়।