শিশুর পড়াশোনা : শিশুর জীবনে স্কুলের প্রয়োজনীয়তা

শিশুর পড়াশোনা

স্কুল বা বিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থার একটা অংশ মনে হলেও, এটা আসলে একটা ট্রেনিং সেন্টার বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। স্কুল একটা শিশুকে শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে না, শিশুর পড়াশোনা ও এর সঙ্গে সহমর্মিতা, সময়ানুবর্তিতা, সাম্প্রদায়িকাতা, নিয়মানুবর্তিতার মত নানান চারিত্রিক গুণাবলীল।

স্কুলে বিশেষ করে প্রাইমারী স্কুলে যে পড়া থাকে তার জন্য আসলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরকার হয় না।  একজন মা বা গৃহ শিক্ষকই তা একজন শিশুকে পড়িয়ে দিতে পারেন। বরং বছরের অর্ধক সময়েই একটা শ্রেণীর পড়া শেষ করায় ফেলতে পারেন। এখন প্রশ্ন আসতে পারে,” তাহলে প্রাইমারী স্কুলে পাঠানোর কি প্রয়োজন? বাসায় পড়াই, স্কুলে যেয়ে শুধু পরীক্ষা দিবে।“ কিন্তু না, শিশুকে স্কুলে পাঠানোর প্রয়োজন আছে। কারণ স্কুল শুধু লেখা পড়ার জন্য না, মানসিক বিকাশের জন্যও অনেক জরুরী।

বাচ্চারা নরম ভেজা মাটির মতো। এ সময় যেভাবে তাদের তৈরী করা হয়, ভবিষ্যতেও তারা সেই আকার ধারণ করবে। স্কুল সেই আকার দেয়। স্কুলে সব শিশুর পড়াশোনা করানোর নিয়ম ও শিক্ষা এক।

স্কুলে একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে, সেই সময়ের মধ্যে বাচ্চাদের স্কুলে উপস্থিত থাকতে হয়। সময়মত ক্লাস করা, অ্যাসেমব্লীতে থাকা, সময়ের মধ্যে বোর্ড থেক পড়া তুলা ইত্যাদি সময়ানুবর্তিতার শিক্ষা দেয়।

স্কুল শুরু হয় জাতীয় সংগীত এবং কিছু শরীর চর্চা দিয়ে। সাকালবেলায় শরীর চর্চা সাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপযোগী তা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত। তাছাড়া জাতীয় সংগীতকে যে দাঁড়িয়ে, কোন ধরনের নড়াচড়া না করে , কথা না বলে সন্মান জানাতে হয় এটা বাচ্চারা স্কুল থেকেই শিখে। এটা দেশ প্রেমের একটা অংশ।

একটা শিশুকে যখন বাসায় পড়তে বসানো হয় তখন তার বই খাতা বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিবারের সদস্যরা গুছিয়ে দেন। তাছাড়াও যদি শিশুর পড়াশোনা এর জন্য কোন কিছুর প্রয়োজন হয়, শিশুটি চাইলে হাতের কাছে এনে দেওয়া হয়। কিন্তু স্কুলে তা হয় না। স্কুলের গেট দিয়ে ঢুকার পর থেকে বের হওয়া পর্যন্ত সব কাজ তাকে নিজেই করতে হয়। যেমনঃ ব্যাগ থেকে বই খাতা বের করা, আবার গুছিয়ে ঢুকানো, নিজে টিফিন খাওয়া ইত্যাদি। এগুলা সবই একজন শিশুকে আত্মনির্ভর করার প্রশিক্ষন দেয়।

স্কুল একজন বাচ্চাকে সামাজিক করে তুলে। স্কুলে যেয়ে একটি বাচ্চা অনেক ধরণের মানুষের সাথে পরিচিত হয়। তাদের সাথে কিভাবে মিশতে হবে তা শিখে। শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করলে দাড়িয়ে সম্মান জানানো, শ্রেণীকক্ষে প্রবেশের অনুমতি নেওয়া, সহপাঠিদের সাথে ভাল ব্যবহার করা, বড় শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের সম্মান দেখানো , নিচের শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা স্কুলের শিক্ষণ পদ্ধতির একটি অংশ।

স্কুলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহনের মাধ্যমে বাচ্চাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটে। বাচ্চারা নিজেদের নতুনভাবে জানতে পারে। তাছাড়া স্কুল আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতা বাচ্চাদের চিন্তাধারাকে প্রসারিত করে, দেশ ও বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান দেয়, অনেক নতুন ও আদর্শবান মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়।

আরও পড়ুন: টব থেকে পিঁপড়া দূর করবেন কী করে | থাকলো ১৫টি উপায়

স্কুল একজন শিশুর জীবনের ভিত্তিকে মজবুত করে যেন ভবিষ্যতে সে ভেঙ্গে না পরে।  কোভিড-১৯ এর জন্য শিশুরা ঘরে বসে ক্লাস করছে। এতে তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করতে পারলেও তাদের মানসিক বিকাশ অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে। তারা নানান ধরণের ভুল কাজের সাথেও জড়িয়ে পরছে। তাই সাধারণ চোখে স্কুলকে শুধুমাত্র একটি প্রতিষ্ঠান মনে হলেও আসলে তা জীবনের একটা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

শিশুর পড়াশোনা নিয়ে লিখেছেন সারানা আহমেদ

শিশুশিশুর পড়াশোনা