সাংবাদিকতায় ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে

চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলিকে সাজিয়ে-গুছিয়ে জনসমক্ষে পেশ করাই সাংবাদিকতার মূলমন্ত্র। এই পপুলার পেশার খুঁটিনাটি যাচাই করে দেখল ১৯ ২০

কাজের ধরন
মূল সংবাদটিকে সংগ্রহ করে নিজের সংবাদমাধ্যমের দ্বারা লোকের কাছে পৌঁছে দেওয়াই হল সাংবাদিকদের মূল দায়িত্ব। সেই খবর কোথা থেকে, কীভাবে সংগ্রহ করা হবে, কপির ধরনই বা কী, এসব কিছুও তাঁরাই দেখেন। কপির ধরন কীরকম হবে তা নির্ভর করছে কী ধরনের সাংবাদিকতা তুমি বেছে নেবে তার উপর।

রাজনৈতিক সাংবাদিকতা: বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, তাঁদের সম্ভাব্য পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রাথমিক একটা ধারণা থাকা জরুরি। প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক জীবনে কী-কী ঘটনা ঘটছে সে সম্পর্কে সদা সর্তক থাকতে হবে। যে-কোনও রাজনৈতিক মতকে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাও সাংবাদিকতায় উন্নতির জন্য দরকার।

রাজনৈতিক সাংবাদিকতা: ক্রীড়া সাংবাদিকতা: খেলা বিষয়ে আগ্রহ এবং খুঁটিনাটি জ্ঞান থাকলে ক্রীড়া সাংবাদিকতায় আসাই যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সবরকম স্পোর্টস সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান থাকাটা খুবই দরকার।

পেজ থ্রি সাংবাদিক: যে কোনও বিনোদন সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহ এবং পরিবেশনার দায়িত্বে থাকেন এরা। সেলিব্রিটি সম্পর্কিত এক্সক্লুসিভ গসিপ জোগাড় করা এই ধারার সাংবাদিকতার এক বিশেষ দিক।

ম্যাগাজ়িনে সাংবাদিকতা: পত্রিকার ক্ষেত্রে রিপোর্টিং এবং এডিটিং দু’ধরনের কাজই প্রয়োজন মতো করতে হতে পারে। সাধারণত খেলা, রাজনীতি, বিনোদন সব ব্যাপারেই একটা সাধারণ জ্ঞান থাকা খুব জরুরি। সঙ্গে লেখালেখিতে বিশেষ দক্ষতা অতি অবশ্যই প্রয়োজন।

সাব এডিটর: প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী সংবাদসংস্থায় কাজ মানে রিপোর্টিং। সাব-এডিটরদের মূল কাজ হল বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আসা সংবাদকে সুষ্ঠুভাবে লিখে হেডিং দিয়ে পরিবেশনা করা।

টিভি জার্নালিজ়ম: টিভি জার্নালিজ়ম অত্যন্ত জনপ্রিয় এক পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনও জায়গাতে গিয়ে খবর সংগ্রহ করে সেই খবর সরাসরি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বে থাকেন তাঁরা। আবার স্টুডিও থেকেও অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করতে হতে পারে তাঁদের। চটজলদি খবর পরিবেশন করা, সম্পাদনা, ক্যামেরা ওয়ার্ক এবং ক্যামেরার সামনে নিজেকে ভাল উপস্থাপনা করার ক্ষমতা থাকাটা খুব জরুরি।

চিত্রসাংবাদিক: খবরের বিষয় অনুযায়ী ছবি জোগাড় করাই একজন চিত্রসাংবাদিকের দায়িত্ব। ক্যামেরার লেন্স, অ্যাঙ্গেল, সব বিষয়েই প্রশিক্ষণ থাকাটা দরকার। ছবি কতটা বিষয়োপযোগী, সে ব্যাপারে একটা সেন্স থাকাটা অবশ্যই দরকার।

প্রয়োজনীয় দক্ষতা
প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক, যে মাধ্যমেই কাজ করি না কেন সংবাদ সম্পর্কে আগ্রহ, বোধ এবং বিশ্লেষণ থাকাটা বিশেষ দরকার। অনেকসময় নিজের অপচ্ছন্দের বা অজানা বিষয়ের উপরও কাজ করতে হতে পারে একজন সাংবাদিককে। সেক্ষেত্রে যে কোনও বিষয়ের উপর রিসার্চ করার ক্ষমতাটাও বেশ দরকার। ভাষা নিয়ে খেলতে পারা এবং সুন্দর, সময়োপযোগী ভাষা নির্বাচন একজন সাংবাদিকের দক্ষতা প্রমাণ করে। টিভি জার্নালিজ়মের ক্ষেত্রে সুবক্তা হওয়াটা খুব প্রয়োজন। সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে-সঙ্গে নিজেকে আপডেটেড রাখাটা জরুরি। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, বিনোদন সব বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। ধরাবাঁধা দশটা-পাঁচটার চাকরি করতে চাইলে এ পেশায় না আসাই ভাল। দ্বায়িত্বজ্ঞান এবং উপস্থিত বুদ্ধি থাকা খুবই প্রয়োজন এই পেশায় আসতে গেলে। গ্ল্যামারের সঙ্গে-সঙ্গে চ্যালেঞ্জ এবং দায়বদ্ধতাও এই পেশার নিত্য সঙ্গী।

কাজের সুযোগ
মিডিয়ার প্রভাব আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে এই ক্ষেত্রে কাজের সুযোগও বেড়েছে তরতর করে। জার্নালিজ়ম নিয়ে পড়াশোনা করার পর পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজ়িন তো বটেই ইলেকট্রনিক মিডিয়াতেও চাকরি পাওয়া যায়। রিপোর্টিংয়ের পাশাপাশি সাব-এডিটর, ফোটোগ্রাফার ইত্যাদির জন্যেও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় সংবাদ সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লিখিত পরীক্ষা এবং তারপর পার্সোনাল ইন্টারভিউয়ের ভিত্তিতেই প্রার্থী বাছাই করা হয়। রেডিও জানার্লিজ়মও আজকাল খুব জনপ্রিয় পেশা হয়ে উঠেছে ইয়ংস্টারদের মধ্যে। এর পাশাপাশি পিরিয়োডিক্যাল্‌স এবং সাময়িকপত্র, সেন্ট্রাল ইনফরমেশন সার্ভিস, প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো, ওয়েবসাইট, অল ইন্ডিয়া রেডিও এবং দূরদর্শনে চাকরি পেতে পারে ছাত্র-ছাত্রীরা। নিউজ় অ্যাঙ্কর, নিউজ় রিডার, শো অ্যাঙ্কর ইত্যাদি হিসেবেও কাজ করার সুযোগ আছে।

বেতন
এটা সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করছে তুমি কোন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আছ তার উপর। কোনও উচ্চশ্রেণির সংবাদপত্রের অফিসে বা টিভি চ্যানেলে কাজ করলে শুরুতে ১৬,০০০ থেকে ১৮,০০০ টাকা অবধি বেতন আশা করা যেতে পারে। পরবর্তীকালে অভিজ্ঞতা এবং পারফরম্যান্সের সঙ্গে বেতন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। পার্টটাইম বা ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য বেতন অবশ্য সব জায়গায় এক হয় না।

জার্নালিজমসাংবাদিকতায়