প্রয়োজনীয় দক্ষতা – আইনজীবীর প্রধান কাজ হচ্ছে সংবিধান ( Constitution) কে ব্যাখ্যা করে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং মক্কেলের ব্যক্তিগত সমস্যার সমাধান করা।
একজন সফল আইনজীবী হতে গেলে চাই সবরকম আইন জানার প্রতি অফুরন্ত কৌতূহল এবং আইনি অসঙ্গতি ধরার ক্ষমতা। তা ছাড়াও অন্যান্য দক্ষতা – যেমন সূক্ষ্মভাবে কমিউনিকেট করার ক্ষমতা (মৌখিক এবং লিখিত), বিস্তৃত গবেষণা করার ক্ষমতা ইত্যাদি। আর চাই প্রচুর পরিমাণে ‘logical reasoning’-এর ক্ষমতা। একজন আইনজীবী হিসেবে তোমায় নানা প্রকার তথ্যকে নিরপেক্ষভাবে বিচার করে একটা যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্তে আসতে হবে। তুমি যদি চটপটে ও সপ্রতিভ হও এবং দ্বিধাহীনভাবে, যুক্তির সঙ্গে নিজের মতামত পেশ করতে সক্ষম হও তা হলে তোমায় আটকায় কে!
কাজের ধরন – এই পেশা কিন্তু শুধুমাত্র ওকালতিতেই সীমাবদ্ধ নয়। আইন কিন্তু পেশা হিসেবে বেশ বিস্তীর্ণ এবং বিচিত্র। তোমার পছন্দ এবং সহজাত প্রতিভা অনুযায়ী লিটিগেশন (আদালতে মামলা-মোকদ্দমা লড়া) থেকে আরম্ভ করে কোনও বেসরকারি সংস্থায় ল’ অফিসারের পদে নিয়োজিত হওয়া, একবার ঠিকমতো পাশ করে বেরতে পারলে অপশনের শেষ নেই বস! তবে কোন চাকরিতে যাবে সেই অনুযায়ী লেখাপড়া চালাতে হবে।
ক্রিমিন্যাল ল
এই ধরনের আইনজীবীরা সাধারণত নানা ধরনের ব্যক্তি এবং সংস্থার যাদের বিরুদ্ধে ক্রিমিন্যাল চার্জ আনা হয়েছে তাদের হয়ে কেস লড়েন। ক্রিমিন্যাল আইনজীবীদের প্রত্যেকটা কেস নিখুঁতভাবে তদন্ত করতে হয়, অভিযুক্ত এবং সাক্ষীদের সাক্ষাৎকার নিতে হয়। কেস জড়িত সমস্ত আইন তন্নতন্ন করে ঘেঁটে মক্কেলের জন্য একটা যুক্তিসন্মত কেস আগাগোড়া গোছাতে হয়।
বিজ়নেস ল বা ব্যবসা সংক্রান্ত আইন
এই ধরনের আইনজীবীরা সাধারণত লেনদেন সংক্রান্ত আইন ( transaction law), মার্জার অ্যান্ড অ্যাকুইজিশন আইন ইত্যাদি সংক্রান্ত আইন নিয়ে কাজ করে।
ফ্যামিলি ল
সমস্ত পারিবারিক এবং সাংসারিক বিষয় সংক্রান্ত কেস লড়তে হয় এইধরনের আইনজীবীদের। সাধারণত ডির্ভোস, সন্তানের কাস্টডি, ডাউরি সংক্রান্ত কেস, বধূ নির্যাতন, ইত্যাদি বিষয়ক কেস এই ধরনের আইনজীবীদের আওতায় আসে।
ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট
এদের ছাড়া তাবড়-তাবড় বিজ্ঞানীরা দিশাহারা হয়ে যেতেন! এই ধরনের আইনজীবীরা নানা ধরনের বিজ্ঞানীদের তাদের আবিষ্কারকে আইনের দ্বারা রক্ষা করে, যাতে সম্মতি ছাড়া কেউ ব্যবহার না করতে পারে।
কাজের সুযোগ –
ল ফার্ম –
এটি নিঃসন্দেহে আইন স্নাতকদের কাছে সবচেয়ে লোভনীয় পেশার মধ্যে অন্যতম। স্নাতকরা বিভিন্ন ল ফার্মে আ্যাসোসিয়েট হয়ে ঢুকতে পার। দক্ষতা এবং অধ্যবসায় থাকলে তোমার ফার্মের অংশীদারও হতে পারবে। কপালে থাকলে সব বড়-বড় ল ফার্ম, যেমন Cyril Amardas & Mangalchand, Luthra & Luthra, AZB & Partners ইত্যাদিতে কাজ পেতে পার। সাধারণত স্নাতকরা এই সব ফার্মগুলিতে ইন্টার্ন হিসেবে যোগ দেয়। ইন্টার্ন হিসেবে উত্তীর্ণ হতে পারলে আ্যাসোসিয়েট হিয়েবে জয়েন করতে পারবে। এক-একটা ফার্মে অনেকগুলি আইনজীবী আ্যাসোসিয়েট হয়। ফার্মের নানা আইনজীবীরা কোনও ব্যক্তি বা সংস্থাকে আইনি পরামর্শ দেয়।
স্টেট জুডিশিয়াল সারভিসেস –
যদি সরকারি চাকরি চাও, তা হলে এই পেশা তোমার জন্য আদর্শ। তা হলে তোমাকে ইন্ডিয়ান জুডিশিয়াল সার্ভিসেস এগজ়ামিনেশনের জন্যে প্রস্তুতি নিতে হবে। এই পরীক্ষা দিতে গেলে LLB ডিগ্রি আবশ্যিক। পরীক্ষার্থীর বয়স হতে হবে ২১–৩৫ এর মধ্যে।
লিটিগেশন বা ওকালতি –
এই পেশাটি অধিকাংশ আইন স্নাতকদের কাছে সত্যিই খুব জনপ্রিয়। কেরিয়ারের গোড়ার দিকে অবশ্য পেশাজনিত সমস্ত খুঁটিনাটি শেখার জন্য একজন সিনিয়র আইনজীবী বা কাউন্সেলের অধীনে বেশ কিছু বছর কাজ করতে হবে তোমায়। কোর্টে ওকালতি করতে গেলে ‘বার এগজ়ামিনেশিনেও’ উত্তীর্ণ হতে হবে। লিটিগেশনকে পেশা হিসেবে বেছে নিলে সরকারি অথবা বেসরকারি দুই সংস্থাতেই কাজের অভাব হবে না, বিশেষ করে তোমার যদি সিভিল ল প্র্যাকটিসে অভিজ্ঞতা থাকে। ভাল হয় যদি তুমি কোনও একটি ক্ষেত্র, যেমন ট্যাক্সেশন, সংবিধান, লেবর, বা পরিবার সংক্রান্ত আইন, যে কোনও একটিতে পারদর্শী হয়ে উঠতে পার। এ ছাড়াও ক্রিমিন্যাল কেসেও স্পেশালাইজ় করতে পার লিটিগেটর হিসেবে।
কর্পোরেট কাউন্সেল –
এটিও অনেকের কাছে পেশা হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এ পেশায় আসতে গেলে ব্যবসাজড়িত আইন নখদর্পণে থাকতেই হবে। এই ধরনের আইনজীবীরা সাধারণত নানান বেসরকারি সংস্থার আভ্যন্তরীণ ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়ে আইনি সহায়তা করে, নানা রকম ব্যবসায়িক চুক্তির (contracts) মধ্য দিয়ে। এ ছাড়াও কোম্পানির তরফ থেকে সমস্ত আইনি বিবাদও তোমাকেই লড়তে হবে সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে। কর্পোরেট কাউন্সেল হিসেবে তুমি নানারকম বেসরকারি সংস্থা, নানাধরনের মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেশন, ব্যাঙ্কের আইন দপ্তরে অনায়াসেই চাকরি পেতে পার।
লিগ্যাল প্রসেস আউটসোর্সিং –
ল গ্র্যাজুয়েটের কাছে LPO ( লিগ্যাল প্রসেস আউটসোর্সিং) এ কাজও একটা ভাল অপশন হয়ে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনেক ল ফার্ম আছে যারা নানা কারণের জন্য ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশে অবস্থিত LPO গুলির কাছে অনেক জরুরি আইনি কাজ অর্পণ করে। LPOর কর্মচারীদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নানা কেসের খসড়া বানানো, নানা প্রকারের আইনি গবেষণা করা ইত্যাদি কাজের দায়িত্ব নিতে হয়। যারা এই পেশায় আসতে চাও তারা নানা LPO যেমন Pangea3, CPA Global, ইত্যাদি সংস্থায় কাজ পেতে পার।
বেতন –
তোমার কেমন পসার হবে, তা নির্ভর করছে তোমার আইনের জ্ঞান ও ব্যাখ্যার ক্ষমতার উপর। তা ছাড়াও কোন ল কলেজ থেকে স্নাতক হয়েছ সেটাও খুব জরুরি। সাধারণত বেশির ভাগ কোম্পানি এবং ল ফার্ম নামজাদা কলেজ থেকেই কর্মচারী নিয়োগ করতে চায়। ল-ফার্ম সাধারণত ৭ লাখ–১৫ লাখ বেতন দেয়। নানা ধরনের সংস্থা (তাদের আইনি দপ্তরে কাজের জন্য) ৩–১৩ লাখ বেতন দেয়। তবে বেসরকারি সংস্থায় কীরকম মাইনে পাবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে কোন কলেজ থেকে পাশ করেছ, এবং অবশ্যই তোমার রেজ়াল্ট, ইন্টার্নশিপ অভিজ্ঞতা, এসব কিছুর উপর। LPO বেতন দেয় ২.২–৫ লাখ টাকা। লিটিগেশন ২.২-৩ লাখ টাকা বেতন দেয়। স্টেট জুডিশিয়াল সার্ভিসেস মনোনীত হলে প্রায় আই. এ. এস অফিসারের সমতুল্য বেতনই পাবে।
কোথায় পড়বে –
নানা ধরণের ল কলেজ আছে, যেমন NUJS, – ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ জুড়িডিক্যাল সায়েনসেস ( বিস্তারিত জানতে http://www.nujs.edu যাও), NALSAR (https://www.nalsar.ac.in), GLC Mumbai (http://www.glcmumbai.com), Hazra Law College, Calcutta University ( http://www.caluniv.ac.in/academic/department/Law.html), যেখানে হায়ার সেকেন্ডারির পর পাঁচবছরের BALLB কোর্স করানো হয়। Common Law Admission Test, AILET, SET ( Symbiosis Entrance Exam), MH CET (Maharashtra Common Entrance Test)-এর মতো এনট্রান্স এগজ়ামে উত্তীর্ণ হতে হবে এই সব কলেজে ভর্তি হতে হলে।