বয়স আট হোক বা আশি, ভূতের গল্পের প্রতি আকর্ষণ সবারই। তবে ইদানীং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানা ধরনের হরর কনটেন্ট তৈরি হলেও, দেশি ভূত নিয়ে কাজ হয়েছে তুলনামূলক কম। সেই শূন্যতা পূরণ করতেই কাজী আসাদ নির্মাণ করেছেন অ্যান্থোলজি সিরিজ ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’, যা হ্যালোইন উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছে চরকিতে। সিরিজটি শরীফুল হাসানের গল্প অবলম্বনে নির্মিত এবং এতে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম, গাজী রাকায়েত, সালাউদ্দিন লাভলু, শিল্পী সরকার অপু, এ কে আজাদ মেতু, রোবেনা রেজা জুঁই এবং নিদ্রা নেহা।
সিরিজের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
- সিরিজ: আধুনিক বাংলা হোটেল
- স্ট্রিমিং: চরকি
- গল্প: শরীফুল হাসান
- পরিচালনা: কাজী আসাদ
সিরিজটি তিনটি ভিন্ন গল্প নিয়ে গড়ে উঠেছে:
‘বোয়াল মাছের ঝোল,’ ‘খাসির পায়া,’ এবং ‘হাঁসের সালুন।’ প্রতিটি গল্পেই দেশি ভূতের সাথে জড়িয়ে আছে খাবারের উপাদান।
‘বোয়াল মাছের ঝোল’: গ্রামীণ পরিবেশে রহস্যময় গল্প
পটভূমি বোয়ালিয়া গ্রাম, যা বিখ্যাত বিশাল সাইজের বোয়াল মাছের জন্য। আজিজের বাড়িতে বেড়াতে আসেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যিনি স্বাদ নিতে চান আজিজের মায়ের হাতের বোয়াল মাছের ঝোলের। তবে সেই স্বাদ নিতে গিয়ে কি সবচেয়ে বড় ভুলটা করেন তিনি?
এখানে গ্রামের আবহ, চরিত্রের সম্পর্ক, এবং গল্পের ধীর বহিরঙ্গ ভূতের আতঙ্ক ছড়িয়েছে। গাজী রাকায়েত ও মোশাররফ করিমের অভিনয়ের মেলবন্ধন এই পর্বটিকে অনন্য করেছে।
‘খাসির পায়া’: শহুরে পরিবেশে ভয়ের গল্প
রফিক সাহেব বাসায় একা থাকতে ভয় পান। তাই সময় কাটানোর জন্য পার্কে হাঁটেন। সেখানেই এক ছোট ছেলের অদ্ভুত আবদার, ‘স্যার, দুইশো টাকা দ্যান, খাসির পায়া খামু।’ এই আবদার মেটাতে অস্বীকৃতি জানানোই তাঁর জীবনের ভুল সিদ্ধান্ত হয়ে দাঁড়ায়।
যদিও এই গল্পের শুরুটা জমজমাট ছিল, সাউন্ড ও ভিএফএক্সের ব্যবহার দর্শককে আকৃষ্ট করেছে, কিন্তু শেষটা প্রথম পর্বের মতো প্রভাব ফেলেনি। তবে মোশাররফ করিম এবং খুদে অভিনেতা ফাহিম দুর্দান্ত অভিনয় দিয়ে এই ঘাটতি পুষিয়ে দিয়েছেন।
‘হাঁসের সালুন’: সিরিয়াল কিলারের ভয়ানক কাহিনি
গ্রামীণ পটভূমিতে নির্মিত এই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজু মিয়া, যার পাগলাটে আচরণ এবং ধূর্ত দৃষ্টি তাঁকে এক ভয়ংকর খুনিতে পরিণত করেছে। প্রতিটি খুনের পর তাঁর দুটি শখ—হাঁসের সালুন খাওয়া এবং কিছু ভয়ানক কাজ করা। কিন্তু খুন করতে করতে নিজেই কি ফাঁদে আটকে যান?
এই গল্পে মোশাররফ করিম একদম অনবদ্য। নিদ্রা নেহার অভিনয়ও মনোমুগ্ধকর। গ্রামীণ দৃশ্যপট, রঙিন কাপড়, মাটির চুলার রান্না এবং নির্বাচনী প্রচারের মাঝে চলা ক্রমিক খুনের গল্প এই পর্বকে সিরিজের সেরা হিসেবে উপস্থাপন করেছে।
কেন দেখবেন ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’?
পরিচালক কাজী আসাদ ভয় দেখানোর চেয়ে গল্প বলার দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছেন। এই সিরিজের বিশেষত্ব হলো আমাদের চারপাশের দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাগুলোকে রহস্যময় ভৌতিক মোড় দেওয়া। তিনটি পর্বের প্রতিটিই ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ দেয়—কখনো শেকড়ে ফিরিয়ে নেয়, কখনো আতঙ্কে ভরিয়ে তোলে।
দেশি ভূতের গল্প আর বাংলা খাবারের এমন চমৎকার মিশ্রণ সচরাচর দেখা যায় না। সুতরাং, যদি আপনি গ্রামীণ পরিবেশ, বাস্তবতার ছোঁয়া, এবং চমৎকার অভিনয়ের সমন্বয়ে গড়া ভিন্নধর্মী গল্প খুঁজে থাকেন, তাহলে ‘আধুনিক বাংলা হোটেল’ আপনার জন্যই।