হাওয়া রিভিউ : সিনেমার পক্ষে হাওয়া বিপক্ষেও হাওয়া, ভারী কোনটা?

স্যোশাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুকে হাওয়া বইছে বেশ। মানে হাওয়া সিনেমা দেখে আসার পর চলছে হাওয়া রিভিউ দৌড়। হাওয়া সিনেমার এমন অনেকগুলো রিভিউ এক পোস্টের তলায় হাজির করেছি আমরা। দেখা যাক হাওয়া রিভিউ বা রিভিউর হাওয়া এখন কোন দিকে বইছে

 

 

পুন্নি কবীর : হাওয়া রিভিউ

হাওয়া নিয়ে অনেক কথা চালাচালি হইতেছে। সবই মোটামুটি খুব পজিটিভ। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার সিন্ডিকেটের বাইরের হাওয়া রিভিউ চাই ফেইসবুকে।
কয়েকটা ব্যাপার জানতে আগ্রহী আমি:
– পোস্টারে এত্তগুলা ব্যাটা মানুষের মধ্যে শুধু একজন মহিলা। সিগারেটের ধোঁয়া, রুক্ষ চাহুনি, শয়তানি হাসি, মাসলের প্রদর্শন – এইসব চরম মাত্রার মিসোজিনির সিম্বল। ব্যাটামানুষিকে গ্লোরিফাই করা ইউরোপ-আমেরিকা সহ ইস্ট এশিয়ার চলচ্চিত্রে এখন আর কুউল না, অনেক পুরানো হয়ে গেছে। সিনেমাটা কী পোস্টার আর ট্রেইলারের মতই ব্যাটাগিরি দিয়ে ভর্তি?
– ‘হাউজফুল’ বলা হইতেছে কিন্তু আমজনতার সিনেমা হলে (যে কয়টা এখনও অবশিষ্ট আছে) দর্শক রেসপন্স কেমন? নাকি মধ্যবিত্তের আহা উহুতেই সীমাবদ্ধ?
– যেই অর্থনৈতিক ক্লাসের জীবনযাত্রা রেপ্রেজেন্ট করা হইছে তা কী আমাদের চরম বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থার প্রতি ক্রিটিক করার জন্য নাকি এই ক্লাস নিয়ে মধ্যবিত্তের যে চিরাচরিত রোমান্টিসাইজেশন তারই আরেকটা সংস্করণ?

আতাউর রহমান মাসুম : হাওয়া রিভিউ

হাওয়া রিভিউ (স্পয়লার বিহীন হাওয়া রিভিউ )
এই দরিয়ায় কত্ত কাহিনী হয়, কিন্তু তুই তো জ্যান্ত মাইয়া মানুষ!
মনপুরা, আয়নাবাজি, দেবী এই ছবিগুলো আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য একটা আর্কাইভ আমি মনে করি। মুক্তির আগে ও পরে এই ছবিগুলোর যে হাইপ ছিল তা অন্যরকম কিন্তু প্রথম দু’টো ছবি প্রেক্ষাগৃহে দেখার সৌভাগ্য না হলেও তৃতীয়টি দেখেছি। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন এর প্রথম চলচ্চিত্র ‘হাওয়া’ যে পরিমাণ উন্মাদনার সৃষ্টি করেছে তা ভাষায় প্রকাশের মতন না। আমি নিজেই সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছি ছবিটি দেখার জন্য, নানান কনসার্টে গিয়েছি এই উন্মাদনার সাক্ষী হতে! কিন্তু, যে ছবি নিয়ে এত আলোচনা সেটা কেমন হল দেখতে প্রথমদিনেই দেখে নিলাম ‘হাওয়া’
জেলেদের এক দল সমুদ্রে গিয়েছে মাছ ধরতে। দলপতি চান মাঝির কথায় সব চলে। জেলেদের ফেলা জালে একদিন উঠে আসে একটা মেয়ে! এই মেয়ে আসার পরেই শুরু হয় সমস্ত গন্ডগোল। জালে মাছ উঠে না, সবার মধ্যে শুরু হয় বিভেদ! এই মেয়ে আবার মেরে ফেলতে চায় দলপতি চান মাঝিরে! কে এই সুন্দরী রূপবতী কন্যা, কি তার আসল পরিচয়! যার রূপের যাদুতে সবাই তার সাহচর্য পেতে চায়! পরী নাকি ভূত! জীবিত না আসলে মৃত সে? সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন ‘হাওয়া’ সিনেমায়।
যারা মেজবাউর রহমান সুমন এর নাটকের কাজগুলো দেখেছেন তারা জানেন তিনি বরাবরই ভিন্নধর্মী গল্পে কাজ করেন। তার প্রথম সিনেমা তাই ব্যতিক্রমী কিছু হবে সেটাই ভাবনায় ছিল। জেলে পল্লী, এর আচার-আচরণ, ভাষাগত দিক সহ সবকিছুই সুমন বেশ সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। কয়েকজনের থেকে ফিডব্যাক জানার পর যা মনে হচ্ছে, ‘হাওয়া’ সিনেমার প্রথমার্ধ অনেকের কাছে ফ্লাট বা এভারেজ লেগেছে তবে দ্বিতীয়ার্ধ পুষিয়ে দিয়েছে তাদের একদম। অবশ্য আমার কাছে পুরো সিনেমাই ভালো লেগেছে। পুরোটা সময় উপভোগ করেছি এবং গানের সময় নেচেছি ও!
সুমন এর গল্প, পরিচালনা কে আমি যতোটা পছন্দ করেছি ততটাই ভালো লেগেছে আমার কামরুল হাসান খসরু এর সিনেমাটোগ্রাফি। সত্যি বলতে, গত ৭-৮ বছরে এত নান্দনিক, চোখধাঁধানো সিনেমাটোগ্রাফি আমি দেখেছি বলে মনে পড়ে না। এমনিতেই সমুদ্র আমাদের ভালো লাগে। তার মধ্যে যদি আপনি সমুদ্রের ঢেউ, এর গভীরতা, অতল সৌন্দর্য, সূর্যের রশ্মির সাথে ঢেউয়ের উঠানামা, ড্রোন শটে বিশাল সমুদ্রের দৃশ্যধারন করেন তবে ভালো না লেগে উপায় নেই।
অভিনয় ভালো না লেগে উপায় নেই। চঞ্চল চৌধুরী ও নাসিরউদ্দিন খানের অভিনয় অনেকদিন মনে গেঁথে থাকবে। শুধু তারা দুজন না প্রত্যেকেই যেভাবে তাদের চরিত্র ডিফাইন করেছেন দর্শকের সামনে তা সত্যিই অতুলনীয়। এতদিন পুরো টিমের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের গল্প শুনে এসেছি কিন্তু আজ রাজ, তুষি, সোহেল, রিজু সহ সবার অভিনয়ের মাধ্যমে তা অনুভব করেছি। অভিনয় নিয়ে অভিযোগের জায়গা নেই একদমই!
ছবির কালার, সাউন্ড ডিজাইন দারুণ ছিল। আমি ‘হাওয়া’ ছবিটিকে কোনো নির্দ্দিষ্ট জনরার মধ্যে ফেলবো না। ছবিটি আপামর দর্শকের জন্য। বিশেষ করে, ‘সাদা-কালা’ গান ও ছবিটির যে হাইপ দেখে ছবিটি দেখতে গিয়েছি আমি তাতে একফোঁটাও বোরড হইনি। মূলকথা ছবিটি কোনো অংশে, কোনো দৃশ্যে ঝুলে পড়েনি। ‘হাওয়া’র মতন সিনেমা প্রতিবছরে না কয়েক বছরে একবার হয়। এই ছবিটি আমাদের জন্য একটা নতুন স্ট্যার্ন্ডাড সেট করলো। তবুও, অনেকের ভালো লাগেনি বা ইচ্ছাকৃতভাবে লাগছে না। আমার রিভিউ ও অনেকের কাছে বোধগম্য হবে না, তাদের জন্য নাসিরউদ্দিন খানের একটা কথা বলি, ‘ নিজের শরীর ও মনের দায় তো কেউ নিতে পারে না আসলে!’

গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত : হাওয়া রিভিউ

হাওয়া শর্ট রিভিউ
সনি স্কয়ারে সিনেমাটি দেখলাম। চঞ্চল চৌধুরী, নাজিষা তুষি, শরিফুল রাজ, নাসির উদ্দিন খানের অভিনয় মুগ্ধ করেছে। সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের ঘোরে আছি এখনও। কালার গ্রেডিং মুগ্ধ করবে যেকোনো শ্রেণির দর্শককে। সিনেমাটোগ্রাফি এককথায় অনবদ্য। মাথায় গেঁথে আছে কিছু ফ্রেম। মনে হচ্ছিল যদি কিছু সিন স্ক্রিনশট নিয়ে রাখতে পারতাম। সিনেমার গল্পটা যেহেতু একটা মিথকে কেন্দ্র করে সেহেতু অনেকেরই প্লটটা ধরতে সময় লাগতে পারে। ‘হাওয়া’ জনমানুষের সিনেমা হয়ে ওঠার ফলে ম্যাস পিপল সিনেমাটা দেখছে। সিনেমাটা উপভোগ করার পর অনেক দর্শকের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হতে পারে। সিনেমার এন্ডিং এ যদি মেঘদলের ‘এ হাওয়া’ ব্যাকগ্রাউন্ডে লাগিয়ে দেওয়া যেতো তবে হৃদয়টা আরও শীতল হয়ে উঠতো।

মুহসিন কবীর : হাওয়া সিনেমার রিভিউ

হাওয়া ছবির পোস্টার দেখে মনে হয়েছিল বহু বহুদিন পর এবার সিনেমা হলে গিয়ে একটা বাংলা ছবি দেখবো। কিন্তু অনেকের রিভিউ দেখে হতাশ হলাম।
শুনলাম হাওয়া নাকি চঞ্চল চৌধুরীর ময়লা দাঁত আর চেহারার কস্টিউম বিক্রি করেই বাজিমাত করেছে। সিনেমা হলের ভেতরে গিয়া দর্শক হতাশ। সিনেমার নামের সঙ্গে গল্পটাই হাওয়া করে দিয়েছে। সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইব তুলে দর্শকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ দর্শকের। অনেকটা হায় হায় কোম্পানির মতো, ধোকা দিয়ে রাতারাতি টাকা কামিয়ে পগারপার!

অধীর চক্রবর্তী : হাওয়া রিভিউ

হাওয়া নিয়ে দুুটো কথা, সিনেমার গল্পটি কোত্থেকে এলো???!!!
হাওয়া সিনেমাটি আমি এখনও দেখিনি। কিন্তু দর্শকদের রিভিউ থেকে জানতে পারলাম পরাবাস্তব ঘটনা নিয়ে সিনেমার গল্পটি এগিয়েছে। মোটামুটি রিভিউয়ার সবার বর্ণনা একই রকম। তার ভিত্তিতে এখানে কিছু বলার চেষ্টা করছি। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম কয়েক বছর আগে লেখা আমার গল্পের সাথে সিনেমার কাহিনির দারুণ মিল!( কুরুচিপূর্ণ কিছু অংশ বাদ দিলে রিভিউয়ার-এর কথা অনুসারে মনে হলো আমার গল্পটিকেই রিপ্রেজেন্ট করার একটা চেষ্টা আছে পুরো সিনেমা জুড়ে!! এখানে বলে রাখি গল্পটি আমার লেখা গল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রিয় একটি গল্প। এটি প্রথমে ছিলো কবিতা। বিটিভিতে আমি প্রথম কবিতাটি পড়ি ১১ কি ১২ -এর দিকে। পরে কবিতাকে গল্পে রূপান্তর করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে গল্পটি সিনেমায় রূপান্তরিত হয়ে গেল। মেজবাউর রহমান সুমন জেনে বুঝে কাজটি কীভাবে করলেন? জানি,ব্যাপারটাকে কেউ কেউ কাকতালীয় বলে চালিয়েও দেবেন। ডিরেক্টর বলবেন আমার গল্প তার চোখেই পড়েনি!! আকছার যেরকম হয়ে থাকে মিডিয়াতে। আমার গল্পে পাঁচজন তরুণের কথা উল্লেখ আছে, যাদের আমি পঞ্চপাণ্ডব বলে উল্লেখ করেছি। এই পাঁচজনই একজনকে ভালোবাসে। যার নাম দ্রৌপদী।কিন্তু দ্রৌপদীর বিয়ে হয়ে যায় অন্য কারো সাথে। পাঁচজনের কেউ তা মেনে নিতে পারে না। ওরা জ্যোছনা রাতে একটি জেলে নৌকা ভাড়া করে। গঞ্জিকা সেবন করে নদীতে জাল ফেলে। হঠাৎ পঞ্চপাণ্ডবদের মনে হতে থাকে ওরা জাল নয়, দ্রৌপদীর শাড়ি ধরে টানছে কিন্তু শাড়ির বহর এত দীর্ঘ হতে থাকে যে ওরা শাড়ির অন্য প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না! এক পর্যায়ে ওদের কাছে মনে হতে থাকে জালের মধ্যে দ্রৌপদীর লাশ! সিনেমাতে খুব কৌশলে বিষয়টিকে সিনেম্যাটিক করার প্রয়োজনে দ্রৌপদীকে রক্তমাংসের মানুষ হিসাবে দেখালেন কি?
এই গল্পে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি হাওয়া সিনেমাটি বানিয়েছেন এমন কোনো কিছুও সিনেমাতে উল্লেখ নেই।
আমি সিনেমাটি দেখার পর প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নেবো।
আমার গল্পটি একটি অনলাইন পত্রিকা প্রকাশ করেছিলো ২০১৯ এর এপ্রিলে।

শাহ জালাল আলিফ : হাওয়া রিভিউ

হাওয়া নিয়ে প্রচুর রিভিউ ইতিমধ্যে সবাই পড়েছেন, আমিও পড়েছি। তো, আউট অফ দ্যা বক্স কিছু কথা এমনি লিখতে ইচ্ছে হলো। আমার এই লিখনীতে হাওয়া সিনেমার কোনো পূর্নাঙ্গ রিভিউ কিংবা স্পয়লার নেই।
বাংলা সিনেমার এই নতুন শুরুতে একজন চঞ্চল চৌধূরীর অবদান কতটুকু?
মনপুরা, আয়নাবাজী, দেবী হয়ে এবার একটু ভিন্ন চরিত্র নিয়ে হাওয়া করলেন। অবশ্য এধরনের চরিত্র এবারই প্রথম নয়, “বলি”-র সোহরাব কোম্পানি রোলে ইতিমধ্যে দেখিয়েছেন ভিন্ন কিছুতেও তিনি কতটা দাপুটে। হাওয়ায় ছিলেন চাঁন মাঝি হয়ে, একই রকম দাপট। কি অসাধারন একজন অভিনেতা, যতখন স্ক্রিনে ছিলেন মুগ্ধ করেছেন। শুনেছি, চরিত্রের জন্য দাঁত কালো করতে হতো, দৈনিক পনেরো ষোলটা করে পান খেয়েছেন, মুখ ছিলে গেছে, তবুও, করে দেখিয়েছেন। এই মানুষটা সেই একযুগেরও বেশি সময় যাবত যে দৌড়াচ্ছেন, এই দৌড় আরো কিছু বছর বজায় থাকুক। তাতে আমাদেরই মঙ্গল, বাংলা সিনেমার মঙ্গল।
গুলতি চরিত্রটা সিনেমার মোস্ট ভাইটাল একটা চরিত্র, তুষি তার স্ক্রিনটাইমের অর্ধেকের বেশি সময় কথা না বলে কেবল অভিনয় দিয়ে সবার এটেনশন ধরে রাখতে পেরেছেন। নির্মাতা এবং তুষি, দুজনই নিজেদের সক্ষমতার জানান দিয়েছেন। তুষি রিসেন্টলি সিন্ডিকেট ওয়েবের জন্য আলোচনায় আসলেও, কেন যেন সেখানে টপ নচ লাগেনি তাকে। তবে, গুলতি দিয়ে সেই আক্ষেপ গুচিয়েছেন।
নাগুকে নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার আছে। মুভির এন্টারটেইনমেন্ট পার্টটুকুতে লিড করেছেন এই মানুষটা, নাসির উদ্দীন খান। চিনতে পেরেছেন?
সিন্ডিকেটের, মাইশেল্ফ- এলেন স্বপন।
মহানগর, বলি, সিন্ডিকেট থেকে এবার “হাওয়া”
আমার মতে এইধরনের ক্যারেক্টারের জন্য বর্তমান সময়ে ইন্ড্রাস্টি সেরা নাসির ভাই, ওনার রিপলেসমেন্ট নেই।
হাওয়া যেই প্রি লঞ্চিং হাইপ, এর পেছনে একটা বড় অবদান সাদা কালা গানটির। আর এই গানটির মধ্যে যেই মাদকতা দিয়েছেন শিভলু ভাই, অসাধারন। ইভেন আমার কাছে মুভির সবচেয়ে কমপ্লিট পার্ট স্টিল সেই গান এবং নাচের দৃশ্যটুকু। সেই রাতের পার্টির জন্য যেই সোহেল মন্ডলের চোখে মুখে যেই আনন্দ ছিলো, সবাকে ডেকে বলছিলো রাতে মজা হবে- আনন্দ হবে। একজন সাধারন মাঝির কাছে এই আনন্দটুকু কত বড় সোহেল মন্ডল কথার চাইতেও এক্সপ্রেশন দিয়ে সেটা বেশি বুঝিয়েছেন। ধীরে ধীরে নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে চলছেন এই মানুষটা।
ইঞ্জিন মিস্ত্রী হিসেবে শরিফুল রাজ যদিও বেশিরভাগ সময় ট্রলালের নিচের ঘরটাতেই ছিলেন। তবে যখনই প্রতিবাদী কন্ঠস্বর প্রয়োজন ছিলো নিজের খোলস খুলে বেড়িয়েছেন। গুলতির সাথে কেমিস্ট্রিটা খুব কনফিডেন্টলি বিল্ডআপ করেছেন, সাদুবাদ জানাই।
এই মুভির মূল চ্যালেঞ্জটাই ছিলো মেবি সমুদ্র। কোনো ধরনের গ্রিন স্ক্রিনের কাজ ছাড়াই সিনেমাটোগ্রাফিতে খসরু ভাই মাঝ সমুদ্রে ভেসে ভেসে যা করে দেখিয়েছেন, বাংলা সিনেমায় বিরল। কালারগেড্রিং, ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ড, মিউজিক কমপ্লিট একটা প্যাকেজ।
খসরু ভাইয়ের জন্মদিনে তাকে নিয়ে চঞ্চলদার একটা লিখা পড়েছিলাম কিছুদিন আগে-
“ইনি হাওয়া সিনেমার সিনেমাটোগ্রাফার। এর আগে মনপুরা এবং দেবী সিনেমায় তাঁর ক্যামেরার যাদু দেখিয়েছেন। আমরা খুব গর্ব করে বলতে পারি বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিতে খসরু ভাইয়ের মত একজন সিনেমাটোগ্রাফার আছেন।”
আসলেই, ভাই আপনাকে নিয়ে একটু গর্ব করাই যায়
দুটি ব্যক্তিগত আক্ষেপের জায়গা,
এক,
গুলতি চরিত্রটার আরেকটু ডেভলপমেন্ট হতে পারতো। সিনেমার শেষ দৃশ্যের পর গুলতি চরিত্রটাকে কেন যেন একটু মেকি মেকি লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো আরেকটু জানা দরকার ছিলো। এটি হতে পারে পরিচালক ইচ্ছে করেই করেননি, বা করেছেন।
দুই, হাওয়া রিভিউ
এই সিনেমায় মাত্র একটি গান ব্যবহার হয়েছে, সাদা সাদা কালা কালা। মেঘদলের “এ হাওয়া” গানটা মিস করেছি। যদিও এটি সিনেমার কোনো গান না, তবুও এতটা রিলেটেবল ছিলো যে শেষ অংশে যখন একটি গানের প্রয়োজন ছিলো, এটিকে মিস করতে বাধ্য হয়েছি।
সুমন ভাই আগেই বলেছেন এটি মুভি হয়তো সবার পছন্দ হবে না, সেটি ফলেছে।
দুটো কারন মনে হলো
এক,
ছবির গল্প কোনো নিয়মিত গল্প না। এটি একটি মিথলজিকাল স্টোরি বেইসড সিনেমা। তাই যারা নিয়মিত মুভি দেখেন না তারা হয়তো রেগুলার কোনো গল্প এক্সপেক্ট করে থাকতে পারেন, তাদের জন্য সিনেমার গ্রহনযোগ্যতা কমতে পারে খানিকটা।
দুই,
ছবির প্রোমোশন এবং গান দুটো যে হাইপ তুলেছিলো, সেই হাইপে ওভারহাইপড হয়ে যারা হলে ডুকেছেন যে ফাটাফাটি কোনো স্টোরি হবে, প্রচুর মজা হবে, তারা খানিকটা হতাশ হতে পারেন।
তবে বাংলা সিনেমার পালাবদলের দিনে Hawa – হাওয়া একটা দমকা হাওয়া হয়ে এসেছে। এ হাওয়ায় সুদিন ফিরে আসুক।
দীর্ঘ লেখনীর শেষে সুমন ভাইকে নিয়ে এক বাক্যে শেষ করি,
নিভৃতে যে কঠিন লড়াই লড়েছেন নিজের প্রথম সিনেমার গল্প বলতে গিয়ে, বেশ কয়েক বসন্তে গল্প না বলতে পারার আক্ষেপ থাকলেও এই বর্ষায় এসে সেটি বেশ ভালো ভাবেই গোচালেন।
স্যালুট ইউ
বি দ্রঃ আমি কোনো জাত লেখক নই, আগে মাঝে মধ্যে লেখালেখি কিছুটা করা হলেও এখন একদমই সময় হয়ে ওঠেনা। ভূল ক্রুটি ক্ষমা করবেন, ধন্যবাদ

গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত ( দ্বিতীয় হাওয়া রিভিউ )

নাট্য নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’ সিনেমার রিভিউ (স্পয়লার বিহীন)
টেকনিক্যাল বিষয়ের দিকে নজর দিলে ‘হাওয়া’ গত এক দশকের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র নিঃসন্দেহে। চোখ জুড়ানো প্রতিটা ফ্রেম, হৃদয় শীতল করে দেওয়া ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, একঝাঁক জাত অভিনেতার দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, নির্মাতার দক্ষ নির্মাণশৈলী সবকিছু মিলিয়ে ‘হাওয়া’ অত্যাধিক বার উপভোগ করার প্যাকেজ বলা চলে৷
লোভ-লালসা, রাগ-ক্ষোভ, মায়া-মহব্বত, চাহনা-কামনা, ঝগড়া-বিবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ সবকিছুই দেখা মিলে নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের মিস্ট্রি ড্রামা ঘরানার সিনেমায়। ‘হাওয়া’ স্লো-বার্ন সিনেমা হয়েও চমকপ্রদ বিষয়টা হচ্ছে সিনেমাটি কোথাও খেই হারায়নি। পুরোটা সময় জুড়েই টানটান উত্তেজনাটা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে দুই ঘন্টা দশ মিনিট ব্যাপ্তির সিনেমাটি।
গল্পে কোন জটিলতা নেই। সহজসরল সাদামাটা গল্প। তবে গল্প জুড়ে ভীষণ মেটাফোর আছে। নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমন খুবই সূক্ষ্ম ভাবে গল্পটাকে নিজস্ব স্টাইলে
মেটারফোরিক ভঙ্গিমায় উপস্থাপন করেছেন। যা এক শ্রেণীর দর্শকদের জন্য খানিকটা অস্বস্তিকর অনুভূতি।
নৌকার নাম ‘নয়নতারা’। নৌকায় আট পুরুষের বসবাস। উত্তাল সমুদ্রের মাঝেই তাদের জীবনযাপন। নৌকায় কারো দায়িত্ব ইঞ্জিন রুমে, কারো আবার চুলার ধারে, কারো আবার জাল ফেলায়, কেউবা আবার বরফ ঘরে। নৌকার সর্দার চঞ্চল চৌধুরী যাকে পর্দায় দেখা যায় ‘চান মাঝি’ রূপে। সচরাচর একজন জাইলার জীবন যে গতিতে এগিয়ে চলে তাই দেখা যায় পর্দায়। কিন্তু গল্পের মোর ঘুরে যায় যখন মাছের জালে আটকে পড়ে এক নারী। নৌকার সকলেই ভাবে মৃত কন্যা। কিন্তু এটা আস্ত একটা জ্যান্ত মাইয়া মানুষ।
অভিনয়ের দিক নিয়ে বলতে হয় একদম আগুন জড়ানো অভিনয় দেখলাম বেশ কয়েকজন অভিনয়শিল্পীর। চঞ্চল চৌধুরীর দিকে যখনই ফ্রেম গিয়েছে বলা যায় চোখ সরানো যায়নি। আমারে সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে নাসির উদ্দিন খান। ‘নাগু’ রূপে নাসির বদ্দা যে অভিনয় দেখালেন তা মনে থাকবে বহুদিন। ‘পরাণ’ সিনেমার পর শরিফুল রাজ আবারও ফাটালেন বলা চলে অভিনয় দিয়ে। ‘গুলতি’ রূপে নাজিফা তুষি এককথায় অনবদ্য। চোখের চাহনি দিয়েই পুরোটা সময় অভিনয় করে গিয়েছেন। সিনেমায় সংলাপ ছিল খুবই কম কিন্তু যখন সংলাপ ডেলিভারি করেছে এককথায় পারফেক্ট। সুমন আনোয়ার নেতিবাচক চরিত্রে বেশ ভালো পারফর্ম করেছেন। চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন বলতে হয়। সোহেল মন্ডল ও রিজভী রিভুর জুটিকে বেশ লেগেছে তবে ভাইসা খ্যাত অভিনেতার কাছ থেকে আরেকটু আশা ছিল। তার স্ক্রিন টাইম তুলনামূলক কম ছিল তাই হয়তো নিজের স্টাইলে অভিনয়টা করে দেখাতে পারেননি। ‘উরকেস’ আর ‘পারকেস’ চরিত্রটা আরেকটু ডেভলপ করলে মন্দ হতো না। বাবলু বোস ও মাহমুদ আলম তাদের দুজনের চরিত্রটা বেশ প্রভাব ফেলতে পারেনি সিনেমা জুড়ে। ওভারঅল সকলের অভিনয় দেখে হতাশ হওয়ার বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই।
সিনেমায় সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ করেছে সিনেমাটোগ্রাফি ও বিজিএম। কামরুল হাসান খসরু সিনেমার প্রতিটি ফ্রেমকে ক্লাসিক ওয়ালপেপারের রূপান্তরিত করেছেন। ক্যামেরা হাতে কামরুল হাসান খসরুর নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের সঙ্গে জুটি বেঁধে যে নানন্দিক কাজ উপহার দিলেন তা দর্শক মনে রাখবে বহুবছর। যেকোনো রুচির দর্শককে মুগ্ধ করবে ক্যামেরার কাজ। চোখ জুড়ানো কালার গ্রেডিং দেখা গিয়েছে সিনেমা জুড়ে। রাশিদ শরীফ শোয়েব ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে যে খেল দেখালেন তা শুনে তৃপ্ত না হওয়ার সুযোগ নেই। রহস্যময় আবহ সংগীত পুরোটা সময় জুড়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। ফোক ঘরানার দুটো গান শুনে দর্শক তো সিট থেকে উঠে নাচ শুরু করে দিয়েছে। হাওয়া রিভিউ
সিনেমার গান ও ভিন্ন ধর্মী প্রচরণার কৌশল অবলম্বন করার ফলে ‘হাওয়া’ ম্যাস পিপলের সিনেমায় রূপান্তরিত হয়। সেহেতু মিশ্র প্রতিক্রিয়া আসছে সিনেমা দেখার পরে প্রতিক্রিয়া লেখার সময়। নির্মাতা মেজবাউর রহমান সুমনের নির্মাণের সঙ্গে যারা পরিচিত এবং গল্প বলার ধরণ সম্পর্কে জানাশোনা রয়েছে তাদের ‘হাওয়া’ হতাশ করবে না।
এ হাওয়া, আমায় নেবে কত দূরে? যা ‘এ হাওয়া’ শিরোনামের গানের লিরিক। যা ‘হাওয়া’ সিনেমার প্রমোশনাল সং হিসেবে নির্মাণ করেছেন মেঘদল ব্যান্ড। গানের সুরে যদি বলতে হয় হাওয়া কতদূর নেবে জানিনা তবে সিনেমা হল থেকে বের হওয়ার পর আপনার ভাবনার জগত বহুদূরে নিয়ে যাবে নিশ্চয়ই।
হাওয়া রিভিউ

মারুফ ইমন : হাওয়া রিভিউ

‘হাওয়া’ আর ‘পরাণ’ নিয়ে এই যে কিছু বুদ্ধিজীবীদের জ্ঞানগর্ভ স্ট্যাটাস প্রসব করা দেখতেছেন, এরা অধিকাংশই সিনেমাগুলো ফ্লপ হলে কথা বলতেন বলে মনে হয় না। এরা অনেকেই বলতে পারবে না ‘মনপুরা’ ডিরেক্টর গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ‘পাপপূণ্য’ কবে মুক্তি পেয়েছে, কোন প্রযোজক শুধুমাত্র সিনেমায় একবার নায়িকা হবার জন্য সর্বস্ব বিক্রি করে দিয়ে সিনেমা প্রডিউস করেছে কিংবা এই ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’র আগে রাজের কোন সিনেমাটা হলে চললো!
আমি বলছি না, ফিল্ম নিয়ে যা তা বলতে আসলে সাধারণ জ্ঞান জানতে হবে। কিন্তু একটা বক্স অফিস ছাড়া ছেবড়া সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি যখন একটু একটু করে দাঁড়াচ্ছে, দশটার বেশি সিনেপ্লেক্স হয়ে গেছে, মানুষ গান শুনেই সিনেমা দেখতে লাইন ধরছে, নারী দর্শকের বেশ ভাল উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে তখন কেন এই প্রপাগাণ্ডা মূলক ‘পাকনামি’ করা হচ্ছে মাথায় আসে না। রিভিউয়ারা কখনই সিনেমা হিট বা ফ্লপ করতে পারে না – এটা বলে তারাই আবার রিভিউয়ারদের ওপর হামলে পড়ছে কেন! একজন দর্শক যে কী না স্পয়লার বোঝে না, রিভিউ বোঝেনা, টিকেট কেটে সিনেমা দেখে কিছু একটা লিখেছে তাকে নিয়ে সিনেমা না দেখা ঘরে বসে থাকা পাবলিকের এত বুদ্ধিজীবীতার আতশী কাচের নিচে আনার মানে কী! স্
মার্ট অনেকভাবেই হওয়া যায়, এরমধ্যে সবচেয়ে বাজে তরিকা হলো ‘অন্যকে ছোট করে’ দেখিয়ে নিজে স্মার্ট হবার চেষ্টা করা।
‘হাওয়া’ কনটেন্ট অনুসারে হাইপ বেশি পেয়েছে এটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য যেমন ভাল, নির্মাতার জন্য আশংকারও। অনেকে গালাগালি আর এডাল্ট কথাবার্তা থাকায় দেখলাম হল থেকে বেরিয়ে বলছে – পরিবার নিয়ে দেখার সিনেমা এটি না। মজার ব্যাপার হলো, এই সেন্সটা সিনেমা দেখার আগে আসার মত দর্শকও আমাদের কম। আবার অনেকে ক্লাইম্যাক্স নিয়ে অবাক, কেন ‘মিল’ দেখাইলো না, এইটা কেন হলো টাইপ আলাপ। তাদের আমি অন্তত নির্মাতার কয়েকদিন আগে ‘চরকি’ তে আসা ‘কোথায় পালাবে বলো রূপবান’ টা দেখতে বলবো। ‘হাওয়া’তেও কিছু নেগেটিভ ব্যাপার ও সীমাবদ্ধতা আছে, সেটা নিয়ে বলার সময় হয়নি।

আতাউর রহমান মাসুম:  হাওয়া রিভিউ

হাওয়া (স্পয়লার বিহীন রিভিউ)
এই দরিয়ায় কত্ত কাহিনী হয়, কিন্তু তুই তো জ্যান্ত মাইয়া মানুষ!
মনপুরা, আয়নাবাজি, দেবী এই ছবিগুলো আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের জন্য একটা আর্কাইভ আমি মনে করি। মুক্তির আগে ও পরে এই ছবিগুলোর যে হাইপ ছিল তা অন্যরকম কিন্তু প্রথম দু’টো ছবি প্রেক্ষাগৃহে দেখার সৌভাগ্য না হলেও তৃতীয়টি দেখেছি। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন এর প্রথম চলচ্চিত্র ‘হাওয়া’ যে পরিমাণ উন্মাদনার সৃষ্টি করেছে তা ভাষায় প্রকাশের মতন না। আমি নিজেই সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছি ছবিটি দেখার জন্য, নানান কনসার্টে গিয়েছি এই উন্মাদনার সাক্ষী হতে! কিন্তু, যে ছবি নিয়ে এত আলোচনা সেটা কেমন হল দেখতে প্রথমদিনেই দেখে নিলাম ‘হাওয়া’
জেলেদের এক দল সমুদ্রে গিয়েছে মাছ ধরতে। দলপতি চান মাঝির কথায় সব চলে। জেলেদের ফেলা জালে একদিন উঠে আসে একটা মেয়ে! এই মেয়ে আসার পরেই শুরু হয় সমস্ত গন্ডগোল। জালে মাছ উঠে না, সবার মধ্যে শুরু হয় বিভেদ! এই মেয়ে আবার মেরে ফেলতে চায় দলপতি চান মাঝিরে! কে এই সুন্দরী রূপবতী কন্যা, কি তার আসল পরিচয়! যার রূপের যাদুতে সবাই তার সাহচর্য পেতে চায়! পরী নাকি ভূত! জীবিত না আসলে মৃত সে? সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন ‘হাওয়া’ সিনেমায়।
যারা মেজবাউর রহমান সুমন এর নাটকের কাজগুলো দেখেছেন তারা জানেন তিনি বরাবরই ভিন্নধর্মী গল্পে কাজ করেন। তার প্রথম সিনেমা তাই ব্যতিক্রমী কিছু হবে সেটাই ভাবনায় ছিল। জেলে পল্লী, এর আচার-আচরণ, ভাষাগত দিক সহ সবকিছুই সুমন বেশ সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। কয়েকজনের থেকে ফিডব্যাক জানার পর যা মনে হচ্ছে, ‘হাওয়া’ সিনেমার প্রথমার্ধ অনেকের কাছে ফ্লাট বা এভারেজ লেগেছে তবে দ্বিতীয়ার্ধ পুষিয়ে দিয়েছে তাদের একদম। অবশ্য আমার কাছে পুরো সিনেমাই ভালো লেগেছে। পুরোটা সময় উপভোগ করেছি এবং গানের সময় নেচেছি ও!
সুমন এর গল্প, পরিচালনা কে আমি যতোটা পছন্দ করেছি ততটাই ভালো লেগেছে আমার কামরুল হাসান খসরু এর সিনেমাটোগ্রাফি। সত্যি বলতে, গত ৭-৮ বছরে এত নান্দনিক, চোখধাঁধানো সিনেমাটোগ্রাফি আমি দেখেছি বলে মনে পড়ে না। এমনিতেই সমুদ্র আমাদের ভালো লাগে। তার মধ্যে যদি আপনি সমুদ্রের ঢেউ, এর গভীরতা, অতল সৌন্দর্য, সূর্যের রশ্মির সাথে ঢেউয়ের উঠানামা, ড্রোন শটে বিশাল সমুদ্রের দৃশ্যধারন করেন তবে ভালো না লেগে উপায় নেই।
অভিনয় ভালো না লেগে উপায় নেই। চঞ্চল চৌধুরী ও নাসিরউদ্দিন খানের অভিনয় অনেকদিন মনে গেঁথে থাকবে। শুধু তারা দুজন না প্রত্যেকেই যেভাবে তাদের চরিত্র ডিফাইন করেছেন দর্শকের সামনে তা সত্যিই অতুলনীয়। এতদিন পুরো টিমের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের গল্প শুনে এসেছি কিন্তু আজ রাজ, তুষি, সোহেল, রিজু সহ সবার অভিনয়ের মাধ্যমে তা অনুভব করেছি। অভিনয় নিয়ে অভিযোগের জায়গা নেই একদমই!
হাওয়া রিভিউ
ছবির কালার, সাউন্ড ডিজাইন দারুণ ছিল। আমি ‘হাওয়া’ ছবিটিকে কোনো নির্দ্দিষ্ট জনরার মধ্যে ফেলবো না। ছবিটি আপামর দর্শকের জন্য। বিশেষ করে, ‘সাদা-কালা’ গান ও ছবিটির যে হাইপ দেখে ছবিটি দেখতে গিয়েছি আমি তাতে একফোঁটাও বোরড হইনি। মূলকথা ছবিটি কোনো অংশে, কোনো দৃশ্যে ঝুলে পড়েনি। ‘হাওয়া’র মতন সিনেমা প্রতিবছরে না কয়েক বছরে একবার হয়। এই ছবিটি আমাদের জন্য একটা নতুন স্ট্যার্ন্ডাড সেট করলো। তবুও, অনেকের ভালো লাগেনি বা ইচ্ছাকৃতভাবে লাগছে না। আমার রিভিউ ও অনেকের কাছে বোধগম্য হবে না, তাদের জন্য নাসিরউদ্দিন খানের একটা কথা বলি, ‘ নিজের শরীর ও মনের দায় তো কেউ নিতে পারে না আসলে!’
রিভিউহাওয়া