শিশুর খাবারের ব্যাপারে ছোটবেলায় অনেক বাবা-মা সন্তানের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো মূল্য দেন না। টিভি দেখিয়ে, কার্টুন দেখিয়ে, মুঠোফোনে গেম চালু করে নানাভাবে তাকে খাওয়ান। খিদে পাক আর না পাক, আগের খাবার হজম হোক বা না হোক—দিনের পর দিন এভাবেই অভ্যাস করা হয়। ফলে শিশুর মস্তিষ্কে খিদে ও তৃপ্তির ভারসাম্য ঠিকভাবে গড়ে ওঠেনি। এরাই পরবর্তী সময়ে এমন সমস্যায় পড়ে। কিছু বাবা-মা সন্তানকে মোটাসোটা দেখতে ভালোবাসেন, হালকা-পাতলা মানে স্বাস্থ্য খারাপ বা অসুস্থতার লক্ষণ বলে মনে করেন। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, বেশি করে না খেলে শিশু লেখাপড়ায় ক্রমবর্ধমান চাপ কুলাতে পারবে না এবং প্রতিযোগিতায় হেরে যাবে। শৈশব থেকে এভাবে বেশি খাওয়ার অভ্যাস এবং মুটিয়ে যাওয়ার কারণে বড় হওয়ার পরও বেশি বেশি খাওয়ার চাহিদা তৈরি করে।
এ ছাড়া শিশুদের মাত্রাতিরিক্ত খাওয়ার জন্য আরও কিছু বিষয় দায়ী। যেমন মুখরোচক খাবারের বাহারি বিজ্ঞাপন, বাণিজ্যিক খাবারের চিত্তাকর্ষক পরিবেশনা ইত্যাদি। কিছু খাবার নিজেই মস্তিষ্কে রুচিকেন্দ্রে ক্রমাগত উদ্দীপনা তৈরি করে বেশি খেতে উৎসাহিত করে। এ ধরনের খাবারের মধ্যে চকলেট, আইসক্রিম, চিনিযুক্ত খাবার কিংবা প্রক্রিয়াজাত খাবার অন্যতম।
শিশু বেশি খায় , তাতে কী হয়
যেসব শিশু বেশি বেশি খায়, তাদের দ্রুত ওজন বাড়ে। এর কারণে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদ্রোগ, হাঁপানি, ঘুমের মধ্যে দম আটকে আসা, অল্প পরিশ্রমে ক্লান্তি, মেয়েদের পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম, হরমোনের সমস্যাসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কী করবেন
বাবা-মাকে উপলব্ধি করতে হবে যে সুস্থ শিশু মানেই মোটা শিশু নয়। শিশুর ক্ষুধা প্রাকৃতিক বিষয়। খিদে পেলে তা নিবারণের জন্য সে নিজের তাগিদেই খাবে।
অতিমাত্রায় খাওয়া এবং অতিরিক্ত ওজন কোনোভাবেই শিশুর জন্য ভালো নয়।
অভিভাবকদের উচিত শিশুকে নিজ হাতে বেছে খাওয়ার দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করা। সামনে খাবার দিয়ে শিশুকে নিজ হাতে খেতে উৎসাহ দিতে হবে।
শিশুকে খেলাধুলা-দৌড়াদৌড়ির সুযোগ করে দিন। দুবার খাওয়ার মধ্যে বিরতি দিতে হবে। একবারে বেশি খেতে চাইলে তাকে অন্তত পনেরো-বিশ মিনিট অপেক্ষা করতে বলুন। এই সময়ের মধ্যে মস্তিষ্কের তৃপ্তিকেন্দ্র উদ্দীপনা পাবে এবং আর খেতে ইচ্ছে করবে না।
কখনো কখনো শিশুরা একঘেয়েমি বা বিষণ্নতা কাটাতে বেশি খায়। সেদিকে খেয়াল করুন।
অধ্যাপক, শিশু বিশেষজ্ঞ, বারডেম হাসপাতাল