কম টাকায় সংসার চালানোর উপায় কী

মুদি দোকানদার আর মুদিপণ্যের ব্যবসায়ীমহল ছাড়া বাকি সবার এক কথা, এই বাজারে চলবো কী করে। সংসারের খরচ কী করে কমাবো ? কম টাকায় সংসার চালানোর উপায় কী ? কম খরচে কী করে সংসার চালাবেন উত্তর কেউ দিতে পারবে না। কারণ বাজার নিয়ে মোটামুটি বলতে গেলে ব্যবসায়ী ছাড়া আর কারওরই ধারণা নেই। দোকানদার বিশেষ করে মুদি দোকানদারদের অত চিন্তা নেই। পাইকারিতে চিনি ২০০ টাকা হলে তারা বেচবেন ২৩০ টাকা। সমস্যা তো নাই। যা যাবে ক্রেতার উপর দিয়ে যাবে। কম টাকায় চলার উপায় নিয়ে তাদের অত না ভাবলেও চলবে। যাদের কম টাকায় চলার চিন্তা আছে মূলত এই লেখা ও বুদ্ধিগুলো তাদের জন্য।

বড় বড় ব্যবসায়ী, আমদানিকারক ও পণ্য নির্মাতা যারা আছেন, তাদেরও চিন্তা নেই। ডলারের দাম হিসাব করে তার সঙ্গে উপরি কিছু লাভ টাভ যোগ করে জিনিসপত্রের দাম ঠিক করে দিলেই হলো। যারা কেনার তারা তো কিনবেই। এখানেই হলো ফাঁক। তারা দেখেছেন যে আপনারা ১৪০ টাকাতেও চিনি কিনছেন, আবার ১৫০ টাকা হলেও কিনবেন। তো তারা ২০০ টাকা করেও দেখবেন যে চিনি খাচ্ছেন কিনা। ২০০ টাকা খেয়েছেন তো মরেছেন। এই দাম আর আপনার জীবদ্দশায় কমবে না।

দ্রব্যমূল্যের এমন অবস্থায় আমরা কমবেশি সবাই বিরক্ত। এর জন্য খুব বেশি কিছু করারও নেই। আবার চাইলে একদিনেই সব ঠান্ডা করে দেওয়া যায়। কিছু জিনিসপত্রের দাম অবশ্য বাড়বেই। সেখানে আমাদের হাত নেই বললেই চলে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় একটা জিনিসের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে আরও ১৪টা পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। আর সেই সব পণ্যের বেশিরভাগই কিন্তু অপরিহার্য না। তো কথা না বাড়িয়ে সরাসরি বুদ্ধি পরামর্শে চলে যাই। জেনে নিই কম টাকায় সংসার চালানোর উপায় কী এবং কম খরচে কী করে সংসার চালাবেন ।

কম টাকায় সংসার চালানোর উপায় : পাইকারি বাজার

বাজার তো অনেক করেছেন, সামনেও করবেন। জীবনে কখনও দোকানদার বা সুপারশপের লাভ সম্পর্কে আইডিয়া নেওয়ার চেষ্টা করেছেন? এক কেজি আপেল ৩০০ টাকা শুনে হতাশ হয়ে মুখ বুঁজে চলে যাওয়ার আগে জেনে রাখুন.. এই আপেলই বাদামতলীতে বড়জোর ১০০-১২০ টাকা। কমলা আঙ্গুরেও তাই।

দোকানে যে চকোলেট ৩৩০ বা ৩০০ টাকা (আমুল ডার্ক চকোলেট), সেটা নিউমার্কেটের পাইকারি দোকানে (যেমন মুক্তা এন্টারপ্রাইজ) পাবেন ১৮০ টাকায়। এমনকি সেখানে ডিপ্লোমা গুঁড়া দুধও ৫০০ গ্রামের প্যাকেট বিক্রি হয় ৩৯০ টাকায় (এখনকার দাম)। যেখানে গায়ের দাম ৪৩০ টাকা। মানে পাইকারি দোকানগুলো থেকে আপনি মাসের বাজার একবারে করে ফেললে কয়েক হাজার টাকা সেভ করতে পারবেন শুরুতেই। এসব দোকানে সাধারণ পণ্যগুলোর প্রতিটিই আপনার বাসার পাশের দোকানের চেয়ে কমে পাবেন। আবার দামি শ্যাম্পু, সাবান বা কৌটার দুধ পাবেন আরও অনেক কমে। যারা বাচ্চাদের ওটস কেনেন, তারাও এসব দোকানে ওটস পাবেন কমপক্ষে ৫০ টাকা কমে।

কম টাকায় সংসার চালানোর উপায় : দেশি ফল

আপাতত আপেল আঙুর এসবকে একেবারেই না বলুন। দেশি পেয়ারা কিনুন মাত্র ৫০ টাকায় (ভ্যানওয়ালার কাছে)। পেয়ারায় আপেল বা কমলার চেয়েও বেশি ভিটামিন সি পাবেন। আবার পেটও ভরবে। এমনকি পেয়ারায় শর্করাও আছে। আবার লেবুর পরিবর্তেও পেয়ারা খান বেশি করে। সত্যি বলতে কি লেবুর চেয়েও বেশি ভিটামিন সি আছে পেয়ারায়। আবার বেশি করে দেশি কলাও খান। এখনও এই ফলটির দাম হাতের নাগালে আছে। অহেতুক পুষ্টির নামে ১০০ টাকা দিয়ে ডাবের পানি খেতে যাবেন না। তারচেয়ে বিশুদ্ধ পানি পান করুন, সেটাই ভালো।

আলু সেদ্ধ

সারা দিনে বড় সাইজের একটা আলু অন্তত সেদ্ধ করে খান। আমাদের দেশে এই একটা সবজি বেশ অবহেলিত বলা যায়। একটা আলু কিন্তু আপনার সারাদিনের শক্তি ও শর্করার ভালোই যোগান দেবে। তবে একেবারে ভাতের বদলে আলু খেতে যাবেন না। ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়ান। আলু খেলে ক্ষতি হয় বা মোটা হয়ে যাবেন, এসব ভুল কথা। অন্তত ভাতের চেয়ে আলুর জিআই স্কোর কম। আরও ভালো হয় যদি ৫০ টাকা কেজি দরে মিষ্টি আলু কিনে সেদ্ধ করে খান। এতে ৬০-৭০ টাকা কেজি দরের চালের ওপর চাপ কমবে সামান্য। যদিও চালের দাম আসলে খুব একটা আপনার বাজেটে প্রভাব ফেলবে না। কারণ আমরা সেই পরিমাণ চাল খাই না।

সব কিছুতে ব্র্যান্ড নয়

হলুদের গুঁড়া, মরিচের গুঁড়া থেকে শুরু করে আটাটাও নিজে বানিয়ে নিতে পারেন। একটু খাটনি গেলেও এতে একদম খাঁটি ফ্লেভার পাবেন সব কিছুর। বিশেষ করে ৫০ টাকা পাইকারিতে গম কিনে যদি তা দিয়ে আটা বানান তবে সেটার স্বাদ প্যাকেটের আটার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি চমৎকার হবে। গম ভাঙানো আটার রুটির ঘ্রাণে অর্ধ নয়, পূর্ণভোজন হবে। একবার ট্রাই করে দেখুন। যারা ৯০ টাকা কেজিতে ব্র্যান্ডের চাল কিনছেন তারা দরকার হলে ১১০ টাকা দিয়ে মিনিকেট খান। যাদের টাকা একটু বেশি, তাদের খরচটা একটু বেশি হলেই মূলত ভালো। তাতে বাজারে টাকার যোগান বাড়বে। আর যাদের টাকার সমস্যা, তারা আপাতত বিআর-২৮ কিনে খান ৬০ টাকায়। এ চাল সুস্বাদু ও ভাত ভালো থাকে অনেকটা সময়।

দল বেঁধে বাজার করুন

পাইকারিতে বাজার যদি করতেই হয় তবে আপনার মতো খরচ বাঁচিয়ে চলতে চায় এমন আরও কয়েকজনকে সঙ্গে জুটিয়ে নিন। তারপর নিজেরা প্ল্যান করে সপ্তাহে বা মাসে একবার একজনকে বাজারের দায়িত্ব দিন। মাছ বা সবজি কেনার ক্ষেত্রেও একজন প্রতিনিধি হয়ে চলে যান কারওয়ান বাজার বা যেকোনো আড়তে।

যে সবজি আপনার ভ্যানে ৬০ টাকা কেজি, সেটা কারওয়ান বাজারে বড়জোর ১৫-২০ টাকা হবে (সন্ধ্যার দিকে গেলে আরও কম)। বিশ্বাস করুন, কারওয়ান বাজারে বড় সাইজের লেবুই কিনেছি ১ টাকা পিস।

কলা বা মিষ্টি কুমড়া বা লাউয়ের মতো সবজি, যেগুলো অনেকদিন রাখা যায়, সেগুলো এসব বাজার থেকে একসঙ্গে বেশি করে কিনুন। তবে আবারও বলছি, একা যেহেতু পাইকারি বাজার করা সম্ভব নয়, তাই ৫-৮ টি পরিবার একজোট হয়ে তবেই পাইকারি বাজারে যান। তবে আরও ভালো হয় যদি কারও না কারও গ্রামের বাড়ির কোনো এক মহাজনের সঙ্গে চুক্তি করে সবজি ও মুদিপণ্য কুরিয়ারের মাধ্যমে আপনার বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারেন।

এক্ষেত্রে সমমনা ৫-৬ জন একসঙ্গে না হলে কিন্তু হবে না। আর একবার একতা গড়ে উঠলে তখন বাজারও দেখবেন আপনাদের নিয়ন্ত্রণে। মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের অত্যাচার থেকেও তখন বাঁচবে সবাই। কম টাকায় সংসার চালানোর উপায়

lifestyle tipstipsখরচবাজার