কারো কারো উচ্চতা যেমন বেশি লম্বা হয়ে থাকে আবার কারো উচ্চতা কম হয়ে থাকে। লম্বা হওয়ার জন্য অনেকে অনেকভাবে চেষ্টা করে। তবে লম্বা হওয়ার উপায় জানা না থাকলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে শরীরের। তাই লম্বা হওয়ার টিপস যারা খুঁজছেন তাদেরকে আগে কিছু বিষয় জেনে রাখতেই হবে।
কী কারণে উচ্চতা কম-বেশি হয়?
- বংশগত কারণে
- গ্রোথ হরমোনের কারণ
- সুষম খাদ্যের অভাব
- থাইরয়েড হরমনের অভাব
- ভিটামিন ডি এর অভাব
- পরিপাকতন্ত্রের সঠিকভাবে কার্যাবলী সম্পাদনের অভাব
- ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী অসুখের কারণে
সঠিক উপায় জানলে দ্রুত লম্বা হওয়া যায় সহজেই। আগে জেনে নিন লম্বা হতে চাইলে কী কী খেতে হবে বা কী খেলে লম্বা হওয়া যায় ।
আভোকাডো
দুপুরে খাবারের সময় অর্ধেকটা আভোকাডো খেলে বিভিন্ন পুষ্টি পাওয়া যায়। এটি লম্বা হতে সাহায্য করে।
বাদাম বা কাজুবাদাম
লম্বা হওয়ার জন্য উপযোগী একটি খাবার। এতে ভিটামিন ও প্রোটিন আছে যা লম্বা হতে সাহায্য করে।
ডিম
ডিমে থাকা প্রচুর প্রোটিন উচ্চতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ছোলা, মটরশুঁটি মসুর
এই ধরনের খাবারগুলোতে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, ভিটামিন বি ও আয়রন। যা শরীরের কোষ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
আপেল
আপেলে থাকা ফাইবার লম্বা হতে সাহায্য করে। খাবার খাওয়ার আধঘণ্টা আগে একটা করে আপেল খেতে হবে।
দুধ
দুধ আপনাকে লম্বা হতে সাহায্য করবে। কারণ এতে আছে ক্যালসিয়াম যা হাড়ের বৃদ্ধি ঘটায়।
খাবারের পাশাপাশি লম্বা হতে চাইলে আরও কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এতেও কিন্তু দ্রুত লম্বা হতে পারবেন।
লম্বা হওয়ার জন্য নায়াসিন সাপ্লিমেন্ট (Niacin supplement)
Niacin একটি প্রাকৃতিক ভিটামিন। গবেষণা থেকে জানা যায়, ৫০০ গ্রাম নায়াসিন নেওয়া মানুষের থেকে সাধারণ মানুষের বৃদ্ধি কম ঘটে।
মানসিক চাপ কমান
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ লম্বা হওয়ার পথে বড় বাধা। এতে করটিসল উৎপাদিত হয়। ভিটামিন C সম্পূরকসমূহ যা করটিসল কমাতে জোর সহায়তা করে।
ঘুম
লম্বা হতে চাইলে দিনে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। এটি দ্রুত লম্বা হওয়ার সহজ ও কার্যকর উপায়। সুন্দর ঘুম হলে দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধির মাত্রা বাড়ে।
জাঙ্ক ফুডকে না
দ্রুত লম্বা হতে চাইলে জাঙ্ক ফুড, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, কার্বনেটেড ড্রিঙ্কস ও অতিরিক্ত চিনিজাতীয় খাবার থেকেও দূরে থাকতে হবে।
শরীরচর্চা
উচ্চতা বৃদ্ধিতে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। লম্বা হবার ক্ষেত্রে শরীর চর্চার বিকল্প নেই। শরীর চর্চার মাধ্যমে আপনার শরীরে এক ধরণের শারীরিক প্রভাব পড়বে। যা উচ্চতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।এবার জেনে নেয়া যাক লম্বা হবার জন্য কিছু ব্যায়ামের নির্দেশনা:
সাঁতার
লম্বা হওয়ার জন্য প্রাকৃতিক যত উপায় আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো সাঁতার কাটা। লম্বা হওয়া ছাড়াও সাঁতারের কিছু উপকারি দিক আছে। যেমন রক্তসঞ্চালন ভালো হয়, হার্ট ভালো রাখতে সাহায্য করে, কোমরের ব্যথাও কমে।
লম্বা হওয়ার ব্যায়াম
ঝুলে ঝুলে ব্যায়াম: উচ্চতা বাড়াতে ঝুলন্ত অবস্থায় ব্যায়াম করা উচিত। ঝুলন্ত অবস্থায় ব্যায়াম আপনাকে শুধু লম্বা হতেই সাহায্য করবে তা নয়, নিয়মিত এই ব্যায়াম শরীরের বাড়তি ওজনও কমাবে।
মেঝেতে উপুড় হয়ে হাতের তালুর ওপর ভর দিয়ে উপরের অংশটিকে ধীরে ধীরে উপরের দিকে তুলুন। এরপর মেরুদণ্ড বাঁকা করে মাথা যতটা সম্ভব বাঁকান।
প্রথমে মেঝেতে বসুন। এরপর দুপা দুই দিকে ছড়িয়ে দিন। এবার ডান হাঁটুকে আপনার নাকের সাথে লাগানোর চেষ্টা করুন। এভাবে ৫ মিনিট রাখুন।
হাঁটু ভাজ করে, তালু কিংবা হাঁটুতে ভর দিয়ে বিড়ালের মতো বসুন। মাথা উপরের দিকে বাঁকিয়ে পিঠ নিচের দিকে বাঁকিয়ে রাখুন। এখন ধীরে ধীরে পিঠের উপরের দিক বাঁকান। কমপক্ষে ৫ বার করুন।
চিত হয়ে শুয়ে হাতের তালু ও পায়ের পাতায় ভর দিয়ে গোটা শরীরকে উপরের দিকে ধীরে ধীরে উঁচু করুন। খেয়াল রাখবেন মাথা যেন মাটিতেই থাকে আর দেখতে যেন উল্টোনো নৌকার মতো লাগে।
লম্বা হওয়ার আরও কিছু টিপস
শিরদাঁড়া সোজা
যখনই কোথাও বসবেন শিরদাঁড়া সোজা করে বসবেন, কারণ শিরদাঁড়া সংকুচিত করে বসলে শরীর কুঁজো হয়ে আসবে। এতে উচ্চতা বৃদ্ধিতেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ঘুমের সময় মেরুদণ্ড সোজা রাখুন
অনেকেই নিজের পছন্দমতো ভঙ্গিতে ঘুমাতে ভালোবাসেন। কিন্তু খেয়াল রাখবেন এমন ভাবে ঘুমাতে হবে বা বিছানার ব্যবস্থা করতে হবে যাতে মেরুদণ্ড টান টান থাকে।
এসব নির্দেশনা ও ব্যায়াম অনুসরণ করলে দ্রুত লম্বা হতে পারবেন যে কেউ। তবে একটা নির্দিষ্ট বয়স হওয়ার পর মানুষের উচ্চতা আর বাড়ে না। তাই এসব ব্যায়াম ও অনুশীলন করুন তরুণ অবস্থাতেই।
লম্বা হওয়ার আরও টিপস
- প্রতিদিন ভোরে যোগ ব্যায়াম করুন।
- বিশেষজ্ঞর পরামর্শক্রমে রাতে ১ গ্লাস দুধে ২ চামচ অশ্বগন্ধার গুঁড়ো ৪৫ দিন পর্যন্ত খেতে পারেন।
- দিনে বেশি বেশি খাবেন। রাতে কম খাবেন।
- খাবারের চাহিদা কম থাকলে একটি ভিটামিন সিরাপ নিতে পারেন – আমলকি প্লাস, পিউটন, সিনকারা।
- দৌড়াদৌড়ি, ঝাঁপাঝাঁপি ও খেলাধুলা করুন।
লিখেছেন সানজিদা নূর