মেয়েদের কি ফুসফুসে ক্যানসার হয়?

অনেকের ধারণা, ফুসফুসের ক্যানসার কেবল পুরুষদের হয়, বিশেষ করে যেসব পুরুষ ধূমপান করেন। কিন্তু ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ফুসফুস ক্যানসার অধূমপায়ীদের হতে পারে। এদের মধ্যে অনেকেই নারী। নারীদের যে ফুসফুসের ক্যানসার একেবারেই হয় না তা ভুল ধারণা। তবে পুরুষদের তুলনায় নারীদের এই ক্যানসারের ধরন, উপসর্গ একটু আলাদা।

নারীদের ফুসফুসের ক্যানসার ৮০ শতাংশের ক্ষেত্রেই নন স্মল সেল ক্যানসার। এর মধ্যে আবার অর্ধেকই হলো অ্যাডিনোকারসিনোমা, যা ধূমপানের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। পুরুষদের সাধারণত স্কোয়ামাস সেল ক্যানসার হয়, যা ধূমপানের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। এ ছাড়া নারীদের লার্জ সেল ক্যানসার ও স্মল সেল ক্যানসার হয়, কিছু ধূমপায়ী নারীর স্কোয়ামাস সেল ক্যানসারও হতে পারে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ধূমপায়ী পুরুষদের তুলনায় ধূমপায়ী নারীরা বেশি ক্যানসারে আক্রান্ত হন, বিশেষ করে স্মল সেল ক্যানসার, যা সবচেয়ে খারাপ ধরনের।

নারীদের ক্যানসারের কারণ হিসেবে ধূমপানের বাইরে জেনেটিক ইতিহাস, পরিবেশের বিভিন্ন দূষণ, পরোক্ষ ধূমপান, কিছু ভাইরাস সংক্রমণ ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়। খাদ্যাভ্যাসও কিছুটা দায়ী। তাজা শাকসবজি ও ফলমূল না খাওয়া ও অধিক হারে চর্বিযুক্ত খাবার খেলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।

নারীদের ফুসফুসের ক্যানসার কম হয়—এমন ধারণার কারণে এটি বেশ দেরিতে ধরা পড়ে। উপসর্গগুলোকে প্রায়ই অবহেলা করা হয়। নারীদের উপসর্গগুলো পুরুষদের চেয়ে একটু আলাদাও। যেমন: পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ দীর্ঘদিনের কাশি, কাশির সঙ্গে রক্তপাত বা কণ্ঠস্বর পাল্টে যাওয়া ইত্যাদি বেশি দেখা যায়। কিন্তু নারীদের অ্যাডিনোকারসিনোমা ফুসফুসের এমন জায়গায় হয় যে কাশির শ্বাসকষ্টের উপসর্গ বেশি দেখা দেয়। তাই হঠাৎ নতুন করে দেখা দেওয়া শ্বাসকষ্ট, এক মাসের বেশি কাশি, কফের সঙ্গে রক্ত, ওজন হ্রাস, অরুচি, বারবার ফুসফুসে সংক্রমণ হওয়া, কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে যাওয়া, মুখ ও গলা ফুলে ওঠা ইত্যাদি দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

ফুসফুসের ক্যানসার বিষয়ে নারীদেরও সচেতনতা প্রয়োজন। ধূমপানসহ যেকোনো ধরনের তামাক (জর্দা, গুল) পরিহার করুন। ফুসফুসের উপসর্গকে অবহেলা করবেন না। পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হবেন না। অন্যকে সামনে ধূমপান করতে বাধা দিন। সুস্থ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন। পরিবেশের দূষণ ও ধোঁয়া থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করুন।