গমের ঘাস খেলে কী হয়?
১.গম ঘাসের জুস মানেই সতেজ ক্লোরোফিল। আর ক্লোরোফিল মানব দেহের জন্য বেশ উপকারি। এটি সবুজ গাছ ছাড়া আর কিছুতেই পাওয়া সম্ভব নয়।
২. মানুষ যত ধরনের খনিজ পদার্থের নাম শুনেছে তার প্রায় সবই আছে গমের ঘাসে। এই প্রাকৃতিক ঘাসে আছে ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স, সি, ই, ১ ও কে। আছে প্রোটিন ও ১৭ ধরনের অ্যামাইনো এসিড। গমের ঘাসে আরো আছে পটাশিয়াম, ডায়েটারি ফাইবার, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নায়াসিন, বি-৬, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, আয়রন, জিংক, কপার, ম্যাংগানিজ ও থাইরয়েড সংক্রান্ত সমস্যা ঠেকানোর উপাদান সেলেনিয়াম। প্রতি ২৮ গ্রাম (যাকে বলে এক শট) হুইটগ্রাসে আছে ১ গ্রাম প্রোটিন।
৩. হুইটগ্রাসের ৭০ ভাগই হলো বিশুদ্ধ ক্লোরোফিল। যা রক্ত তৈরির একটি অন্যতম উপকরণ।
৪. ক্লোরোফিলে রয়েছে অনেক উপকারী এনজাইম। এগুলো কোষের সুপারঅক্সাইড র্যাডিকেলগুলোকে ধ্বংস করতে পারে। যার মাধ্যমে বার্ধক্যজনিত পরিবর্তনগুলো ধীরেসুস্থে আসে।
৫. ক্লোরোফিল তৈরি হয় আলোর মাধ্যমে। আর তাই আলোর ভেতর যে শক্তি সেটাও মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে গমের ঘাসের মাধ্যমে।
৬. গমের ঘাসের ক্লোরোফিল সরাসরি মানবদেহে মিশে যায়। এখন পর্যন্ত এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বের হয়নি।
৭. বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন হুইটগ্রাসের ক্লোরোফিলের কারণে অপকারী ব্যাকটেরিয়া বেড়ে উঠতে পারে না।
৮. গমের ঘাসে থাকা ক্লোরোফিল প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল। শরীরের ভেতরে ও বাইরে এটি ব্যাকটেরিয়া নির্মূলে সমান কার্যকর।
৯. তরল ক্লোরোফিল আমাদের টিস্যুতে সরাসরি দ্রবীভূত হতে পারে। এটি টিস্যুকে নতুন করে গড়ে তুলতে পারে।
১০. শরীরে জমে থাকা নানান ওষুধের উচ্ছিষ্ট ধুয়ে ফেলতে পারে এই গমের ঘাস।
১১. শরীরে থাকা নানান দূষিত পদার্থকে পরিষ্কার করে হুইটগ্রাসের ক্লোরোফিল। এতে করে একইসঙ্গে কিডনিও পরিষ্কার হয়।
১২. গমের ঘাসের ক্লোরোফিল রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তাই গমের ঘাসের জুস একটি আদর্শ হার্বাল দাওয়াই হতে পারে।
১৩. ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ, আলসার, কানের জ্বালাপোড়া, চামড়ার পুনর্গঠন, সাইনাসাইটিস ইত্যাদির চিকিৎসায় ক্লোরোফিল বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
১৪. গমের ঘাসের জুস নিয়মিত সেবনে হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসেরও কার্যক্ষমতা বাড়ে।
১৫. এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায়।
১৬. হুইটগ্রাস রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়াতে পারে।
১৭. মানুষ ছাড়াও যেকোনো প্রাণীর জন্য সব ধরনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে পারে গমের ঘাস।
১৮. এটি গাজরের মতো অন্য যেকোনো সবজির চেয়ে কয়েক গুণ বেশি পুষ্টিকর।
১৯. পোষা পাখিসহ খামারের মুরগিকেও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য খাওয়ানো হয় এই হুইটগ্রাস। তবে মানুষের ক্ষেত্রে এটাকে জুস বানিয়ে নিতে হয়।
২০. মুখের পায়োরিয়ার চিকিৎসায় গমের ঘাসের মিশ্রণ লাগিয়ে রাখলে বা এই ঘাস চিবুলে উপকার পাওয়া যায়।
২১. আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসাতেও রয়েছে এর ব্যবহার। আক্রান্ত অংশে ১০০ গ্রাম হুইটগ্রাসের দ্রবণ বানিয়ে সেটাকে তুলোয় ভিজিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
২২. মাথার চামড়ায় গমের ঘাসের বাটা মাখিয়ে ১৫ মিনিট ঢেকে রাখলে খুসকির সমস্যা দূর হবে।
২৩. এতে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম আছে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য তাড়াতে পারে গমের ঘাসের জুস।
২৪. শরীরে থাকা অপকারী ভারি ধাতু দূর করতে পারে।
২৫. নিয়মিত গমের ঘাসের জুস সেবনে শরীরে শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়বে। এ ছাড়া এতে থাকা অক্সিজেন মন খারাপ ভাবও তাড়াতে পারে।
কীভাবে বানাবেন?
এতসব গুণে ভরপুর গমের ঘাস চাইলে ঘরেই বানাতে পারেন।
১. বাজার থেকে ভালো মানের গমের বীজ কিনে আনুন।
২. ভালো করে ধুয়ে এক রাত ভিজিয়ে রাখুন।
৩. এরপর বীজগুলোকে ভালো করে ধুয়ে একটা বাক্সে রাখুন। খেয়াল রাখবেন যাতে বীজের আর্দ্রতা ঠিক থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি স্প্রে করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই শুকিয়ে ফেলা যাবে না।
৪. বীজে ছোট ছোট সাদা শেকড় গজানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর ট্রেতে সারযুক্ত মাটির একটা পরত বিছিয়ে দিন। মাটি ছাড়াও গজাতে পারে গমের চারা। তবে মাটিতে তাড়াতাড়িই গজাবে।
৫. শেকড়যুক্ত বীজগুলোকে (যাকে বলে স্প্রাউট) মাটিতে সমানভাবে ছড়িয়ে দিন। বীজগুলোকে মাটিতে হাল্কা চেপে দিন। অথবা এর উপর ঝুরঝুরে মাটির আরেকটি পরত দিয়ে দিন।
৬. পানি স্প্রে করুন। মাটি ভেজা থাকবে। তবে কোনো অবস্থাতেই যেন পানি জমে না থাকে। ট্রেটাকে ভেজা পত্রিকা দিয়ে ঢেকে রাখুন। এভাবে সকাল বিকাল দুবেলা পানি স্প্রে করুন। কদিনের মধ্যেই চারা গজাবে। ১০ দিনের মধ্যেই চারাগুলো দুই ফালি হয়ে যাবে। তখনই কাচি দিয়ে কেটে ভালো করে ধুয়ে পুরে দিন ব্লেন্ডার বা জুসার-এ। বাড়তি কিছুই মেশাতে হবে না।
৭. গমের ঘাসের এ জুস ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যেতে পারে। প্রতিদিন খালি পেটে ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেলে ভালো।