গরমে প্রাণ জুড়াতে একটুকরো তরমুজের তুলনা নেই। গ্রীষ্মের এই ফলটি ছোট-বড় সবাই পছন্দ করে। তরমুজে আছে ভিটামিন এ, সি, বি২, বি৬, ই ও ভিটামিন সি- সবরকম ভিটামিন আছে। আরও আছে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বিটা ক্যারোটিন, লাইকোপিনসহ নানা উপাদান। স্বল্প ক্যালোরিযুক্ত এ ফলটি ওজনকেও রাখে নিয়ন্ত্রণে। এটি হার্টের জন্য ভালো। রক্তবাহী ধমনীকে নমনীয় ও শীতল রাখে। স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে বেশ কার্যকর। কিডনির জন্য বেশ উপকারি ফল তরমুজ। কিডনিতে পাথর হলে, চিকিৎসকরা ডাবের পানি, তরমুজও খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
রোগাক্রান্ত কোন ব্যক্তিকে দ্রুত সারিয়ে তুলতে তরমুজের জুড়ি নেই। অনেকের মধ্যে কুসংস্কার প্রচলতি আছে যে, তরমুজকে গরম ফল বলা চলে। গরমের সময় এটা বেশি খেলে পেটের সমস্যাসহ নানা অসুখ হতে পারে। কিন্তু এটা জেনে রাখা প্রয়োজন যে,েএটি গরমের সময়ই হয়। শীতকালে তরমুজ হয় না। আর সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি ফল ও সবজি সৃষ্টি করেছেন ওই ঋতুর রোগব্যাধীকে কেন্দ্র করেই। এ কারণে চিকিৎসকরাও বলে থাকেন, ‘মৌসুমী ফল খান, সকল রোগ তাড়ান’।
গরমে পানিশূন্যতা জাতীয় সমস্যা প্রতিরোধ করে তরমুজ। এই ফলটি রক্তচাপ কমায় ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ভাইরাসজনিত সংক্রমণ বা চোখের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা প্রতিরোধ করে। ভিটামিন এ এবং সি’র চাহিদা পূরণ করে তরমুজ। ১০০ গ্রাম তরমুজ আপনার শরীরের ভিটামিন এ’র মোট চাহিদার ১১ শতাংশ পূরণ করে।
লাইকোপিনসহ বিভিন্ন উপাদানে সমৃদ্ধ তরমুজ খাওয়ার অভ্যাসে বার্ধক্য দেরিতে আসে। ত্বকে সহজে ভাঁজ বা বলিরেখা পড়ে না। যাদের যৌনসমস্যা আছে তাদের জন্য তরমুজ প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা হিসেবে কাজ করে। এটা আমার কথা না, টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় বের হয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর এই তথ্য।
টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির গবেষক বিনু পাতিল মিডিয়াকে জানান, গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, যৌনশক্তির দিক থেকে অক্ষম বা দুর্বল পুরুষের সক্ষমতার জন্য তরমুজই হয়ে উঠতে পারে প্রাকৃতিক এক প্রতিষেধক। অর্থাৎ প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা। সুতরাং ভায়াগ্রার প্রতি আগ্রহী পুরুষের এখন থেকে আর ভায়াগ্রার পেছনে টাকা ব্যয় না করে তরমুজের দিকে মনযোগ দিলেই চলবে।
কিন্তু তরমুজ কেনা নিয়ে অনেকেই বিপত্তিতে থাকেন। ভালো তরমুজ চিনতে পারেন না। বিক্রেতা মিষ্টি কথা বলে গছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে স্বাদহীন কিংবা কিছুটা পচে যাওয়াগুলো। এজন্য কেউ কেউ কেনার সময় তা কেটে দেখে নেন। কিন্তু কেটে দেখে কেনাটা অনেকেরই হয়ে ওঠে না। সুতরাং ভালো কীভাবে চিনবেন, তার কিছু উপায় জেনে রাখুন।
* তরমুজ কেনার পূর্বে তাতে টোকা দিয়ে দেখুন। একটু শক্ত ধরনের আওয়াজ পাওয়া গেলে সাধারণত ভালো হবার কথা।
* বেশি সবুজ তরমুজের ভেতরটা একটু সাদাটে হয়, কম সবুজ কিংবা হলদে তরমুজগুলো সাধারণত বেশি পাকা হয়। পাকা তরমুজই বেশি লাল হয়।
* এছাড়া তুলনামূলক ভারী তরমুজ সাধারণত তাজা হয় বেশি, তাই কেনার সময় এই ব্যাপারটিও লক্ষণীয়।
কেনার ক্ষেত্রে অনেকে বেশি লাল তরমুজ আশা করেন, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন বেশি লাল তরমুজ না কেনা-ই ভালো, কারণ রাসায়নিক দ্রব্য মেশানোর কারণে তরমুজ অতিরিক্ত লাল হতে পারে। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ইদানিং তরমুজে ক্ষতিকর লাল রঙ ও মিষ্টি সেকারিন মিশিয়ে সিরিঞ্জের মাধ্যমে পুশ করে পাকা ও লাল বলে বিক্রি করে থাকে।
আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, তরমুজে ফরমালিন মেশানো থাকতে পারে। ফরমালিন মেশানো হলে তা বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই। তাই বাজার থেকে তরমুজ কিনে আনার পর চার-পাঁচ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন, এতে তরমুজের ভেতরের ফরমালিনের ক্রিয়া কমে যাবে।