শিশুর জন্মের সাথে সাথেই পরামর্শ দেওয়া হয় আমরা যেন তাদের নিয়ে খুব সতর্ক থাকি। জন্মের পরে পরেই ছোট্ট সোনাকে কাঁচের ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যাতে ক্ষতিকারক জীবাণু থেকে সে দূরে থাকে। তবু যদি সে অসুস্থ হয়েই পড়ে, কী করবেন তখন? সবার আগে বুঝতে হবে যে অ্য়ালার্জিজনিত কোনও সমস্য়া হচ্ছে ওর। যদি দেখেন ঘনঘন ঠান্ডা লাগছে, বা কিছু সময় পর পর পেটে ব্য়থায় কষ্ট পাচ্ছে ও। বুঝবেন, ওর মধ্য়ে কোনও অস্বস্তি হচ্ছে, যা অ্য়ালার্জিরই লক্ষণ। অনেক অ্যালার্জির কারণ এরকমও হতে পারে যা মায়ের থেকে বাচ্চার মধ্যে এসে থাকে। সদ্য়োজাত শিশুর অ্যালার্জি হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হল ভেজা ন্যাপি বা ডাইপার এবং আবহাওয়া পরিবর্তন। মা হিসেবে আপনার সবসময়ই এই বিষয়গুলোর ওপর নজর রাখা এবং বাচ্চাকে বাইরের দূষণ এবং জীবাণু থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। সাবধানতার ছোট একটা উপায় বলতে পারি, নতুন অতিথির সঙ্গে দেখা করতে বাড়িতে যেই আসছে, হাত ধুয়ে তবেই বাচ্চাকে আদর করার অনুমতি দিন তাকে। (Allergies in babies and How to take care of them during travelling).
একটা সমস্য়া হল, সদ্যোজাত শিশুর অ্যালার্জি হলে আপনি তা সরাসরি বুঝতে পারবেন না, কেননা জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কোনও চিহ্নই থাকে না ওর শরীরে। তবে ওর সর্দি-কাশি হলে বা নাক বন্ধ হলে সতর্ক হয়ে যান। বন্ধ নাকের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নাকের ড্রপ ব্যবহার করুন। আবার অনেক ক্ষেত্রে ভিজে ন্যাপি বা ঘামের কারণেও অস্বস্তিতে পড়তে পারে ও। তাই খুব সাবধানে বাচ্চার ঘাম পরিষ্কার করাটাও উচিত, কারণ সামান্য অবহেলা শিশুর ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
যদি ডাইপার থেকেই শিশুর অ্যালার্জি হয় তবে ওই জায়গায় জীবাণুনাশক ক্রিম (জিঙ্কের পরিমাণ বেশি) লাগিয়ে দিন, এতে লালছে ভাব এবং চুলকানি কমে যাবে।
অনেক বাচ্চার আবার খুব ঘনঘন বমি হয়ে থাকে। অত্য়াধিক বমির দুটো কারণ হতে পারে, হয় বেশি খাওয়ানো বা কোনও অ্য়ালার্জি। এতে হজমের সমস্য়াও হয় ওর। বমি খুব বেশি হলে তরল খাবার দিন ওকে। যেমন, ওআরএস, বুকের দুধ, জল, ডাবের জল, চালের জল ইত্যাদি। পেট ব্যথা বা বমি হলে সেটার জন্য ফোটানো জল স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এনে খাওয়ান।
বাচ্চাদের মধ্যে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়ার কারণে সর্দি-কাশিও হতে পারে। তা ছাড়া ক্রিম, সাবান বা পাউডার থেকেও অনেক সময় অ্যালার্জি ছড়িয়ে যেতে পারে। এছাড়াও খাবার থেকে অ্যালার্জি খুবই কমন একটা সমস্য়া। এক বছরের কম বয়েসের শিশুদের মধ্যে ১৫%-এরই খাবার থেকে অ্যালার্জি দেখা যায়। আর এই অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক রকম হয়। কোনও ক্ষেত্রে কোনও বাচ্চার দুই-তিন দিনেই ঠিক হয়ে যায়। কারও আবার লেগে যায় অনেকটা সময়। আমরা কতগুলো কারণ খোঁজার চেষ্টা করলাম, সাধারণত যার জন্য়ে খাবার থেকে অ্য়ালার্জি হতে পারে (Reasons for food allergies in babies):
Reasons for food allergies in babies
#1. দুধ (Cow’s milk)
গরুর দুধই সবচেয়ে বেশি সমস্যার কারণ হয়। শতকরা ৭% শিশুর গরুর দুধ হজমে সমস্য়া হয়, কারণ এতে প্রোটিনের মাত্রা থাকে অনেক বেশি। ‘ল্যাকটোস ইনটলারেন্স’ ব্যাপারটা বোঝা একটু কষ্টসাধ্য, যার জন্য় বাবা-মায়েরা অনেক সময়ই ঠাহর করতে পারেন না কী করবেন, কী করবেন না।
এছাড়াও বাচ্চারা যখন সঠিক ফরমূলা মিল্কের অনুপাত ঠিক মতো পায় না (কম জলে বেশি দুধ দেওয়া, বেশি জলে কম দুধ মেশানো) তখনও এইরকম সমস্যা হয়।
#2. নতুন খাবার খাওয়া (Trying new food)
বাচ্চারা যখন নতুন কোনও খাবার খেতে শুরু করে, তখনও ফুড অ্য়ালার্জির মতো সমস্যা হতে পারে। কারণ কিছু কিছু বাচ্চা আছে যারা গম জাতীয় খাবার ঠিকঠাক হজম করতে পারে না।
খুব কম পরিমাণ হলেও কিছু কিছু বাচ্চার ফল, চিনি ইত্য়াদি থেকেও অ্য়ালার্জি হয়ে থাকে। সমস্যা আরও বেশি হয় যখন ফুড অ্য়ালার্জিক বাচ্চাদের দিয়ে ঘুরতে যাওয়া প্ল্যান করা হয়-
ফুড অ্য়ালার্জিক বাচ্চাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন ভাবছেন, দেখে নিন কী করবেন- (Planning a trip with a food allergic kid? Go through these points)
#1. প্ল্যান তৈরি করুন (Make a plan)
আগে থেকে প্ল্যান তৈরি করে রাখলে দুঃশ্চিন্তা অনেকটা কম হয়। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে একটা লিস্ট করে রাখলে (ডাক্তার, নার্স বা স্থানীয় কোনও মানুষ) সুবিধা হবে অনেকটাই। শুরু করুন এই সব দিকগুলো ভেবে-
- কোথায় যাবেন (Where to go)
আপনার বাচ্চাটির খাবারে অ্য়ালার্জি থাকলে একটু খেয়াল রাখা দরকার কোথায় যাচ্ছেন সেই সম্পর্কে। ধরে নেওয়া যাক আপনার বাচ্চাটির লেবু থেকে অ্য়ালার্জি হয় সেখানে যদি আপনি দার্জিলিংয়ে যাওয়ার প্ল্যান করেন সেটা একটু চিন্তার কারণ হতেই পারে। সেক্ষেত্রে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করার আগে একবার ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া ভালো।
- প্রেসক্রিপশনের ওষুধ মজুত রাখুন (Keep prescription medicines)
এমনটা কখনই করবেন না যে শুধু প্রেসক্রিপশন নিয়েই বেরিয়ে গেলেন আর ভাবলেন যেখানে ঘুরতে যাচ্ছেন সেখানকার ওষুধের দোকান থেকে কিনে নেবেন। সব জায়গায় আপনি আপনার ওষুধটি পাবেন এই ধারণা একদমই ভুল। তার চেয়ে ভালো ওষুধটি আপনার সঙ্গে নিয়ে নিন। যদি আপনি উড়ানে যাতায়াত করেন তবে আপনার ডাক্তারের থেকে একটা চিঠি লিখে নিন যে ওষুধটা সঙ্গে রাখা কতটা দরকারি।
- স্থানীয় হাসপাতাল সম্পর্কে তথ্য মজুত (Information about local hospitals)
বেড়াতে যাওয়ার আগে অবশ্যই একবার দেখে নিন যেখানে যাচ্ছেন সেখানের স্থানীয় হাসপাতালগুলি কতদূরে, এবং কোনও জরুরি অবস্থায় সেখানে কীভাবে, কত তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারবেন।
যথেষ্ট ওষুধ সঙ্গে রাখুন
ওষুধ যথেষ্ট পরিমাণে রাখুন এবং নিজের কাছে রাখবেন। যেন দরকার হলে সহজে ব্যবহার করতে পারেন। ওষুধগুলো ভালো করে প্যাক করে রাখাটাও দরকার।
সবশেষে বলতেই হয়, কিছু সতর্কতা নেওয়া ও সঙ্গে ওষুধ রাখা খুবই সাধারণ একটা কাজ। একবার বা দু’বার এরকম ভাবে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেই অভ্যাস হয়ে যাবে এবং তখন জামাকাপড় নেওয়ার মতো পুরো বিষয়টি সহজ হয়ে যাবে। আর যে সব খাবার নিয়ে বাচ্চার সমস্য়া হচ্ছে, কোনও দিনই সে সেগুলো খেতে পারবে না এমন ধরে নেওয়াটাও ভুল। একটু সময় দিন, ধৈর্য রাখুন।